ইসরাইল-আমিরাতে অনেক মিল
ইসরাইল-আমিরাতে অনেক মিল - ছবি : সংগৃহীত
দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ ঘোষণা প্রকাশ্যে হলেও আমিরাত ও ইসরাইল উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের গোপন-বন্ধন চলছে ১৯৯০ সাল থেকে। ইতিহাসের পাতা নাড়লেই বিভিন্ন ঘটনা প্রকাশ পাবে। এর আগে এই কলামে, কিভাবে আমিরাত ইসরাইলি ইনটেলিজেন্স ব্যবহার করছে, ওভাল অফিসে কত প্রভাব- এসব আলোচনা করেছিলাম এবং ‘আমিরাতের তোপে টিলারসনের বিদায়’ নামে পৃথকভাবে লিখেছিলাম।
ওই ঘটনার পরপরই পরকীয়া প্রেমের টানে শেখের বাড়ি ছেড়ে লন্ডনে পাড়ি দিয়েছেন এক রানী, প্রিসেন্স হায় ও কয়েকজন রাজপরিবারের মহিলা। দুবাই ছাড়ার এই সংবাদ মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। শেখ পরিবারের সদস্যকে হত্যার অভিযোগ, সকোত্রা দ্বীপ দখল, ইয়েমেন ও লিবিয়ায় সেনা ও অস্ত্র পাঠানো, সুদানে ঘাঁটি করার চেষ্টা, মিসরের সাথে যৌথ সামরিক মহড়া, মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো, পরমাণু স্থাপনার কাজ শুরু করা- এসব সংবাদ মাধ্যমে এসেছে আমিরাত সম্পর্কে। এসব কাজের আঞ্জাম দিতে গিয়ে আমিরাত মুসলিম বিশ্বের স্বার্থের পরিপন্থী অনেক ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করে বিজয়ীর বেশে দিন গুজরান করছে মর্মে অভিযোগ। এই সমঝোতা উপলক্ষে আমিরাতের বিন জায়েদ ও ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেসব টুইট বার্তা বিনিময় করেছেন সেগুলো দেখলে মনে হয় আরবদের কোনো শিরদাঁড়া নেই। যারা ছয় দশক ধরে আরবদের দিনরাত হত্যা করে আসছে তাদের সাথে মোক্ষম বন্ধুত্ব করার জন্য আরব নেতাদের একাংশ কেমন পাগলপারা তা দেখে অবাক হতে হয়।
ইসরাইল বলেছে, এরপর বাহরাইন সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে তার সাথে। বাহরাইনের খলিফা শাসকদের ছয় কর্মকর্তা তিন বছর আগে তেলআবিবে গিয়ে কী জামাই আদর পেয়েছেন এবং কী কী বাজার করেছেন সেগুলো মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছিল। তবে কী কী খেয়েছেন তা প্রকাশ পায়নি। এখন এই ‘যাওয়া-আসা’র মেলবন্ধন দিন-রাত চলতেই থাকবে বিনা বাধায়, বিনা কৈফিয়তে। বাহরাইনের রাজপরিবার মূলত সৌদি আরব ও আমিরাতের রাজনৈতিক তল্পীবাহক। এই দেশ এখন ইসরাইলের সাথে চুক্তি করবে না, তা ভাবাই যায় না। বাহরাইন, আমিরাত, সৌদি আরব, জর্দান ও মিসর- সাই সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ।
আমিরাত ও ইরানের মাঝ বরাবর কৌশলগত গুরুত্ববহ হরমুজ প্রণালী। এখানে ইরান বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ইরানকে কাবু করার একটি উপায় হলো হরমুজের কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নেয়া, এটি এত দিন পর্যন্ত কেউ পারেনি। এমনকি ব্রিটিশ রয়েল নেভিও পর্যুদস্ত হয়েছে, বছরখানেক আগে। সর্বশেষ চুক্তির ফলে ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র হরমুজকে নিজ তত্ত্বাবধানে আনতে আমিরাতের ‘টেরিটরিয়াল’ সহায়তা লাভ করবে। এ জন্য চুক্তির পরপরই ইরান বলেছে, ইরান আমিরাতের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করতে পারে। ঘোষণার দুই দিনের মাথায় ইরান আমিরাতের জাহাজ ও এর ক্রুদের ধরে নিয়ে যায়।
ইসরাইল ও আমিরাতের মধ্যে অনেক মিল। উভয় দেশ মিসরের সাথে বন্ধুভাবাপন্ন; এই চারটি দেশ ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সোচ্চার; আরব বিশ্বের বড় বড় ধনীরা ও সৌদি পরিবারগুলো মূলত বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের সময় বেড়াতে ও ছুটি কাটাতে দুবাই যায়। বিরাট মলগুলোতে পণ্য বিক্রির জন্য ইসরাইল দশক ধরে বিভিন্ন পন্থায় বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করেছে। এখন অবারিতভাবে ইসরাইলি পণ্য দুবাই, শারজাহসহ আমিরাতের বড় নগরগুলোকে উদ্ভাসিত করবে। চুক্তির আগে মহামারীর প্রকোপ শুরু হলে দুই দেশ বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসা সম্পর্কিত চুক্তি করে সহযোগিতার ‘প্রস্তরময় সোপানকে মসৃণ করেছিল’। উভয় দেশ নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও কয়েক বছর ধরে গোপনে কাজ করে যাচ্ছে। এসব তথ্য এখন আস্তে আস্তে প্রকাশ হচ্ছে। ওয়াশিংটনে ওভাল অফিসে ঘোষণার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, এ চুক্তিতে আসার জন্য উভয় দেশ বছরের পর বছর পরিশ্রম করেছে।