জান্নাতের অনুপম বাজার
জান্নাতের অনুপম বাজার - ছবি : সংগৃহীত
এই পৃথিবীতে মানুষ ইচ্ছে করলে নানা রকম পোশাক, নানা রকম অলঙ্কারে সাজতে পারে। শরীরে হয়তো খানিকটা রঙও মাখতে পারে। পাউডারও ছিটাতে পারে। সাজতে পারে সে বিউটি পার্লারে গিয়েও।
তবে পারে না সে আকৃতি বদলাতে। অবশ্য কিছু কিছু বিলাসপ্রিয় মানুষ, নিজ দেহের সৌন্দর্য বর্ধনের নেশায় কসমেটিক সার্জারি করে। তবে তাও বিকৃত হয়ে যায় অল্প দিনেই।
কিন্তু জান্নাতে এমন এক বাজার বসবে, যাতে আকৃতি বদলানো যাবে, পাওয়া যাবে তাতে পছন্দসই প্রতিকৃতি।
প্রিয়নবী সা: ইরশাদ করেছেন, জান্নাতে একটি বাজার রয়েছে, যেখানে তারা প্রতি শুক্রবারে একত্রিত হবে। তখন উত্তরের বাতাস প্রবাহিত হবে, যা তাদের মুখমণ্ডল ও কাপড়ে আলোড়িত করবে। এতে তাদের সৌন্দর্য ও রূপ-লাবণ্য আরো বেড়ে যাবে। তারা রূপ-লাবণ্যে সমৃদ্ধাবস্থায় স্ত্রীদের কাছে ফিরবে। তখন তাদের স্ত্রীরা বলবে, আল্লাহর কসম, আমাদের থেকে পৃথক হওয়ার পর তোমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরে তারা বলবে, আল্লাহর শপথ, আমাদের প্রস্থানের পর তোমাদের সৌন্দর্য ও বহুগুণে বেড়ে গেছে। (সহিহ মুসলিম : ৭০৩৮)
নবীজী সা: আরো বলেন, জান্নাতে এমন একটি বাজার থাকবে, যাতে মানুষের প্রতিকৃতি ব্যতীত কিছুই ক্রয়-বিক্রয় হবে না। যদি কেউ কোনো প্রতিকৃতি পছন্দ করে তৎক্ষণাৎ সে ওই প্রতিকৃতিতে রূপান্তরিত হবে। (তিরমিজি : ২৫৫০) একবার হজরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব রা: হজরত আবু হুরায়রা রা:-এর সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি (আবু হুরায়রা রা:) বললেন, আমি আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করি, তিনি যেন আমাকে এবং তোমাকে জান্নাতের বাজারে একত্রিত করেন। তখন হজরত সাঈদ রা: বললেন, জান্নাতে কি বাজার থাকবে? উত্তরে আবু হুরায়রা রা: বললেন, হ্যাঁ। প্রিয়নবী সা: আমাকে বলেছেন, জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশের পর নিজ নিজ আমল মোতাবেক সেখানে স্থান পাবে। এরপর দুনিয়ার সময় অনুসারে জুমার দিনে তাদের (তাদের রবের দর্শনের ) অনুমতি দেয়া হবে এবং তারা তাদের রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে। তাদের সামনে তখন আরশ উদ্ভাসিত হবে।
আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের কোনো এক উদ্যানে তাঁর বড়ত্বের পর্দা উন্মোচন করবেন। তখন জান্নাতিরা তাঁর দিদার লাভ করবে। তাদের জন্য নূর, মণিমুক্তা, পদ্মরাগমণি, পোখরাজ ও সোনা-রুপা ইত্যাদির পৃথক পৃথক মসনদ থাকবে। তাদের মধ্যকার সর্বনিম্ন স্তরের জান্নাতিও কস্তুরি এবং কর্পূরের সিংহাসনে বসবে। তবে সেখানে কেউ হীন ও নিচু হবে না। তারা সিংহাসনে উপবিষ্টদের নিজেদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মনে করবে না। হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, আমি রাসূল সা:কে জিজ্ঞাসা করলাম, আমরা কি আল্লাহ তায়ালার দিদার (দর্শন) লাভ করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর নবীজী সা: বললেন, দিনের বেলায় সূর্য দেখতে অথবা পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে কি কোনো সমস্যা হয়?
আমরা বললাম না। রাসূলে কারিম সা: বললেন, তেমনি তোমরা তোমাদের রবকে দেখতে কোনো অসুবিধা হবে না। সে মজলিসের সবার সাথে তিনি কথা বলবেন, এমনকি তিনি একে একে নাম ধরে বলবেন, হে অমুকের পুত্র অমুক! তোমার কি স্মরণ আছে, তুমি অমুক দিন এ কথা বলেছিলে? এভাবে তিনি তাকে দুনিয়ার কিছু নাফরমানির কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সে বলবে, হে আমার রব! আপনি কি আমাকে ক্ষমা করেননি? আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হ্যাঁ। আমার ক্ষমার বদৌলতেই তুমি আজ এ মর্যাদায় উপনীত হয়েছ। হঠাৎ সে অবস্থাতেই তাদের এক মেঘমালা ঘিরে নেবে। তখন তাদের ওপর এমন সুগন্ধিময় বৃষ্টি বর্ষিত হবে, যা তারা কখনো পায়নি। তারপর আল্লাহ তায়ালা বলবেন, উঠো! আমি তোমাদের সম্মানে যে নেয়ামত তৈরি করেছি, সেগুলোর নিকট যাও এবং যথেচ্ছা গ্রহণ করো
।
নবী করিম সা: বলেন, তখন আমরা একটি বাজারে এসে উপস্থিত হবো, যা ফেরেশতারা বেষ্টন করে রেখেছে। তাতে এমন সব বস্তু থাকবে, যা কোনো কান কখনো শোনেনি, কোনো চক্ষু কখনো দেখেনি। কারো কল্পনায়ও কখনো আসেনি। রাসূল সা: বলেন, আমরা সেখানে যা চাইব তা-ই পাব, সে বাজারে কোনো বেচাকেনা হবে না। সে বাজারেই জান্নাতিরা পরস্পর সাক্ষাৎ করবে। নবীজী সা: বলেন, উচ্চস্তরের জান্নাতি তার চেয়ে নিম্নস্ততের জান্নাতির সাথে সাক্ষাৎ করবে। সেখানে তাদের মাঝে উঁচু-নিচু বলতে কিছুই থাকবে না। তার পোশাক ও অন্যান্য বস্তু দেখে নিম্নস্তরের জান্নাতি লোক অস্থির হয়ে যাবে। তখন সে তার কথা সম্পন্ন করতে না করতেই তার গায়ের পোশাকটি আগের তুলনায় বহুগুণে সুন্দর হয়ে যাবে।
আর তা এ জন্য যে, সেখানে কাউকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করবে না। প্রিয়নবী সা: বলেন, অতঃপর আমরা নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরে যাবো। তখন আমাদের স্ত্রীরা আমাদের দেখে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলবেন, স্বাগতম, সুস্বাগতম হে আমার প্রিয়তম! নিশ্চয়ই তোমরা আমাদের নিকট থেকে যে রূপ-লাবণ্য নিয়ে পৃথক হয়েছ, এর চেয়ে অধিক সুন্দর ও সুদর্শন হয়ে ফিরে এসেছ। তখন আমরা বলব, আমরা আজ আল্লাহ তায়ালার মজলিসে উপস্থিত হয়েছি। সুতরাং তাঁর মজলিস হতে আমরা যে অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করেছি, তা-ই আমাদের প্রাপ্য অধিকার। (তিরমিজি : ২৫৪৯)
আল্লাহ আমাদের জান্নাত অর্জন করার তাওফিক দিন!
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম, সুয়াগাজী, কুমিল্লা