ভারত ভুল পথে যাচ্ছে : চীনা পত্রিকার বিশ্লেষণ
ভারত ভুল পথে যাচ্ছে - ছবি : সংগৃহীত
ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেছেন যে চীনের সাথে চলমান কূটনৈতিক ও সামরিক আলোচনায় কোনো ফলাফল না এলে লাদাকে চীনা সেনাবাহিনীর লঙ্ঘন মোকাবেলায় সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। টাইমস অব ইন্ডিয়া মঙ্গলবার এ খবর প্রকাশ করেছে।
লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) ভারতের সামরিক পদক্ষেপ বিশ্লেষকেরা তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকায় ট্যাঙ্ক ও আর্টিলারিসহ সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন বাড়িয়ে দিয়েছে। অবশ্য ভারতের সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তারা নিশ্চিতভাবেই ভারত ও চীনের মধ্যকার সামরিক সক্ষমতার ব্যবধান সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে অবগত রয়েছেন। ফলে তারা একতরফাভাবে বড় আকারের আক্রমণ চালাবে না। ভারতীয় সামরিক বাহিনী হয়তো এ ধরনের বাগাড়ম্বড়তা ব্যবহার করতে পারে এবং চীনের সাথে আলোচনায় সুবিধা নেয়ার পদক্ষেপ হিসেবে কাজে লাগাতে পারে।
ভারতীয় সামরিক বাহিনী তার কঠোর অবস্থান প্রকাশ করলেও ভারত সরকার আশাবাদী হয়ে আছে যে উত্তেজনা প্রশমিত হবে। দেশে ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কোভিড-১৯ ও অর্থনীতি। এ দুটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রশাসনের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। ভারতের তুলনামূলক দুর্বল মেডিক্যাল সিস্টেম ও অবকাঠামোর কারণে কোভিড-১৯-এ শনাক্তের সংখ্রঅ দ্রুত বাড়ছে। এটি ভারতীয় লোকজনের আস্থা দ্রুত নষ্ট করে দিচ্ছে, দেশকে যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা করার সরকারের সক্ষমতার প্রতি অনাস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
ভারতের উচিত হবে মহামারিটির বিরুদ্ধে আরো ভালোভাবে লড়াই করা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, বেকারত্ব দূর করা। ভারত সম্ভবত তার জনগণের কাছ থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের পক্ষে কোনো সামরিক সঙ্ঘাতে যাওয়া বা যুদ্ধের ঝুঁকি গ্রহণ করা অসম্ভব।
ভারতের সামরিক বিকল্পের ওপর গুরুত্বারোপ চীনের মতপার্থক্য নিরসনে আলোচনার দায়িত্বশীল আহ্বানের সম্পূর্ণ বিপরীত। চীনের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর অবস্থানের অর্থ হলো ভারত সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে মতপার্থক্য আছে। ভারতের সামরিক কর্মকর্তারা অস্ত্র ও সরঞ্জাম ক্রয়ে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের লক্ষ্যে চীন-ভারত সীমান্তে সঙ্ঘাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেখানোর চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে চীনের মনোভাব পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও একেবারে স্বচ্ছ। ভারতের সাথে সঙ্ঘাত চায় না চীন। চীন চায় শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে। বর্তমানে আলোচনার দরজা খোলা, দুই দেশ পারস্পরিক প্রয়াসের মাধ্যমে সঙ্কটটি নিরসন করতে পারে। চীন ও ভারত সরকারের মনোভাবে যুদ্ধের কোনো ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে না।
ভারত তার সামরিক শক্তি বাড়াতে শুরু করেছে বেশ বিলম্বে। খবরে প্রকাশ সেপ্টেম্বরে জাপানের সাথে ভারত অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক লজিস্টিক চুক্তি করবে। নয়া দিল্লি সাম্প্রতিক সময়ে ক্যানবেরার সাথেও একটি সামরিক চুক্তি করেছে। আর অস্ট্রেলিয়াকে মালাবার নৌমহড়ায় অংশগ্রহণে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
চীনকে সংযত রাখার জন্য এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে চীনের জাতীয় শক্তি সম্পর্কে জানে ভারত এবং তাড়াহুড়া করে পরমাণু শক্তির সঙ্ঘাতে যেতে চাইবে না তারা।
সাধারণভাবে ভারতের সামরিক কৌশল তার সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। ভারত এখন আশা করছে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে, একটি আধা সামরিক জোট গঠন করতে এবং ওয়াশিংটনের প্রভাব ব্যবহার করে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের সাথে ভারসাম্য সৃষ্টি করতে। সত্যিকার অর্থে এই নীতি ভুল। ভারত মহাসাগরে মাত্র একটিই আধিপত্যমূলক শক্তি থাকতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র এই জায়গাটি ভারতসহ অন্য কারো সাথে ভাগাভাগি করতে রাজি নয়। ভারতের জাতীয় ও সামরিক শক্তি বাড়া মাত্র ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সঙ্ঘাত শুরু হয়ে যাবে এবং যুক্তরাষ্ট্র তা শেষ পর্যন্ত তীব্র করবে।
তবে চীনের সাথে ভারতের এ ধরনের কোনো সমস্যা নেই। এ দিক থেকে আরো লক্ষ্যভেদী ও যৌক্তিক উপায়ে চীনে সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারে ভারত। ভারত সবসময়েই মার্কিন আধিপত্যমূলক চিন্তাভাবনা ও কর্মসূচির প্রতি অনুগত। কিন্তু এ ধরনের পদক্ষেপ ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘুঁটিতে পরিণত করবে। ভারতের স্বাধীন কৌশলগত বিকল্প যথাযথভাবে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে তার সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত। সামরিক পদক্ষেপ সহায়ক না হওয়ায় ভারতের উচিত হবে যোগাযোগ, সহযোগিতার পথ গ্রহণ করা।
চীন ও ভারতের অনেক অভিন্ন স্বার্থ আছে। তারা বাজার ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে একে অপরের পরিপূরক হতে পারে। ভারতের উচিত হবে প্রতারণার আশ্রয় না নিয়ে তার প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান জোরদার করে পরিপূরকতার সুযোগটি গ্রহণ করা। চীন ও ভারতের উচিত হবে আরো অভিন্ন ভিত্তি খুঁজে বের করা। ভবিষ্যত ভারতীয় কৌশলের উন্নয়নমূলক দিকনির্দেশনায় এটিই অনেক ভালো নিয়ম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থানের সাথে সহযোগিতা করা, এমনটি চীনের সাথে ভারসাম্য বজায় রাখতে মার্কিন শক্তি ব্যবহার করলে চীন আরো বেশি করে ভুল পথে যাবে।
সূত্র : গ্লোবাল টাইমস