সৌদি আরবের খবরদারি আর মানবে না পাকিস্তান?

উমাইর জামাল | Aug 27, 2020 08:47 pm
ইমরান খান ও জেনারেল বাজওয়া

ইমরান খান ও জেনারেল বাজওয়া - ছবি : সংগৃহীত

 

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি সৌদি আরবের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই হুমকি দিয়ে যে রিয়াদের নেতৃত্বাধীন ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) বলয়ের বাইরে কাশ্মির ইস্যুতে মুসলিম দেশগুলোর সভা আয়োজন করবেন।

এই সঙ্ঘাতের পর পাকিস্তানের বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্ব পরিস্থিতি সংযত করার চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে ইসলামাবাদের কূটনৈতিক প্রয়াসের বেশির ভাগই রিয়াদের প্রতি আনুগত্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে সৌদি নেতৃত্বকে খুশি করার জন্য নিবেদিত।
ইসলামাবাদ কাশ্মির প্রশ্নে তার নতুন জোটের সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারী দেশগুলো সম্পর্কে একটি কথাও বলেনি।

একইসাথে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর বা প্রধানমন্ত্রী কেউই কোরেশির বক্তব্য অস্বীকার করেননি। বস্তু, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন করেছে। অন্যদিকে সামরিক নেতৃত্ব পরিস্থিতিকে প্রশমিত করতে চেষ্টা করেছে স্বাভাবিক বাগাড়ম্বড়তা দিয়ে : মুসলিমবিশ্বের প্রতি সৌদি কেন্দ্রমুখিতা প্রশ্নাতীত।
পাকিস্তানে কোরেশি অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে খ্যাতিমান এবং তিনি সবসময় নিয়মনিষ্ঠ। ফলে এটা সম্ভব যে সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক নেতৃত্বের আগাম অনুমোদন ছাড়া তার বক্তব্যটি আসেনি। ফলে এটি ইসলামাবাদের সন্তুষ্টির সাধারণ অবস্থাই প্রতিফলিত করছে, এর মাধ্যমে বলে দেয়া হচ্ছে যে রিয়াদের প্রতি পাকিস্তানের বন্ধুত্ব অবধারিত নয়।

গত কয়েক বছরে পাকিস্তান তার বেশির ভাগ কূটনৈতিক ও আর্থিক প্রয়োজন এবং মুসলিমবিশ্বের মধ্যে সমর্থন লাভের জন্য রিয়াদের ওপর দীর্ঘ দিন ধরে নির্ভরশীল হয়ে থাকার ধারা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। এই নাজুক অবস্থার সুযোগ নিয়ে কয়েক দশক ধরে সৌদিরা পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অনেক ভেতরে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে। অভ্যন্তরীণভাবে এর বেশির ভাগই ঘটেছে রাজনৈতিক দলের ক্যাডারের প্রভাব বলয় লাভ এবং মুসলিমবিশ্বের দুর্গ হিসেবে রিয়াদের ব্র্যান্ডের জন্য ইসলামপন্থীদের সমর্থন নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে।

সৌদি আরব তার অর্থে পরিপুষ্ট হওয়া পাকিস্তানি ইসলামপন্থীদের সমর্থন করার আহ্বান জানানোর মাধ্যমে পাকিস্তানি সরকারগুলোকে দুর্বল করে দেয়ার অভ্যাস করে ফেলেছে। বিবেচনা করে দেখুন : সৌদি আরবের তহবিলের বন্যা বয়ে যায় পাকিস্তানের ২৪ হাজার মাদরাসায়।

কোরেশির বিতর্কিত বক্তব্যের পর পাকিস্তানের ইসলামপন্থী গ্রুপগুলোর প্রখ্যাত নেতারা সৌদি দূতাবাস সফর করে। ইসলামাবাদের অনেকের কাছে এটি এই প্রমাণ করছে যে পাকিস্তানের মধ্যেই সমর্থন পাওয়ার জন্য পাকিস্তান সরকারের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না সৌদি আরবের। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও পররাষ্ট্রনীতি সৌদি আরব নির্ধারণ করে দেয় বলে যে সাধারণ ধারণা প্রচলিত রয়েছে তা পাকিস্তানে নিযুক্ত সৌদি আরবের সাবেক রাষ্ট্রদূতের লেখা সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যায়। কোরেশির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে ড. আলী আওধ আসেরি লিখেছেন, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্ক কোনো বিভ্রান্ত ব্যক্তির ভিত্তিহীন বাগাড়ম্বড়তায় ভণ্ডুল হয়ে যাবে না। সৌদি-পাক সম্পর্কের অনুকূলে ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্সের উদ্ধৃতি দিয়ে রাষ্ট্রদূত দাবি করেন, এর পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোরেশির মিথ্যা বক্তব্য কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কি তাকে ভবিষ্যতে সতর্ক হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন? তিনি আরো হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পাকিস্তান যদি আরেকটি কুয়ালামপুর স্টাইলের সমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনা করে, তবে তা হবে বিপজ্জনক বিষয়। তা এই দেশের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা যায় না।

সৌদিরা মনে করে, পাকিস্তানের অংশীদারিত্ব হারানোর আশঙ্কা বা মুসলিম বিশ্বে সৌদি প্রতিদ্বন্দ্বীদের (বিশেষ করে ইরান ও তুরস্ক) প্রতি পাকিস্তানের সম্ভাব্য সমর্থন প্রদান সৌদি আরবের জাতীয় নিরাপত্তা ও কূটনীতির জন্য একটি বিপর্যয়। এ কারণে পাকিস্তানি নেতারা যা বলেন বা চিন্তা করেন, তা সৌদি আরবের কাছে স্পর্শকাতর মনে হয়।

অবশ্য, সৌদি আরবের কাছ থেকে পাকিস্তানের সরে যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্ভবত ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে তুরস্কের অনেক ঘনিষ্ঠ পাকিস্তান। গত বছর পাকিস্তান সম্ভবত রিয়াদের চাপের কারণেই কুয়ালামপুর সম্মেলন মিস করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু সৌদি আরবের সমর্থন ছাড়াই একটি সম্মেলনের প্রতি সমর্থন দেয়াতে বোঝা যাচ্ছে যে আগামী দিনগুলোতে পাকিস্তানর পররাষ্ট্রনীতি কোন দিকে যাচ্ছে। আবার ইসলামাবাদ ক্রমাগত তেহরানের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সৌদি আরব সম্ভবত আর বেশি দিন পাকিস্তানকে নিয়ে খেলতে পারবে না। অধিকন্তু, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি ও অর্থনৈতিক বিষয়াদিতে পাকিস্তানকে বেশ সহায়তা করছে চীন। ইসলামাবাদ সম্ভবত আগের মতো আর রিয়াদের অগ্রাধিকার নিয়ে চিন্তিত হবে না।

ইসলামাবাদের নীতিনির্ধারণী মহলে সৌদি আরবের প্রতি ক্রমবর্ধমান অসন্তুষ্টির বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে কোরেশির বক্তব্যে। বাস্তবতা হলো এই যে তিনি তার মতামত প্রকাশ্যে ব্যক্ত করেছেন। আর এতেই বোঝা যায়, সৌদি আরব আর পাকিস্তানের নীতি নির্ধারণে খুব বেশি দিন পুরনো পদ্ধতি অব্যাহত রাখতে পারবে না। রিয়াদ যদিও মনে করছে যে কোরেশির বক্তব্য কোনো ব্যক্তিবিশেষের ক্ষোভের প্রকাশ, কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে কোরেশির মতো ব্যক্তিই গত সপ্তাহে চীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি মঙ্গলবার ইসলামাবাদে আফগান তালেবানকে স্বাগত জানিয়েছেন।

আগামী দিনগুলোতে মুসলিমবিশ্বকে কে নেতৃত্ব দেবে এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি কে নির্ধারণ করবে- এমনসব ইস্যুতে ইসলামাবাদের কাছ থেকে রিয়াদ আরো বেশি প্রতিরোধের মুখে পড়তে পারে।
সৌদি আরবের আচরণে একটি পরিবর্তন আশা করতে পারে পাকিস্তান। তা না হওয়া পর্যন্ত রিয়াদের কাছ থেকে আরো সরে যাবে ইসলামাবাদ।

সূত্র : দি ডিপ্লোম্যাট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us