মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল-আমিরাত-মিসর-ফ্রান্স প্রতিরক্ষা বলয়!
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল-আমিরাত-মিসর-ফ্রান্স প্রতিরক্ষা বলয়! - ছবি : সংগ্রহ
কৌশলগত ব্যাকফায়ার
ইসরাইল ফিলিস্তিনি নেতাদের বাদ দিয়ে সৌদি আরব আমিরাত ও সহযোগী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে পুরোপুরি গ্রাস করার কৌশল কি দেশটির জন্য ব্যাকফায়ার করেছে? ইসরাইলের হার্টজ পত্রিকার এক মূল্যায়নে তেমনটি বলা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে আমিরাতকে অনুসরণ করাতে পারেনি সৌদি আরবও উপসাগরীয় দেশগুলোকে। আর আমেরিকার একান্ত ছায়া রাষ্ট্র হিসাবে ভূমিকা পালন করতে গিয়ে চীন রাশিয়ার সাথে ইসরাইলের যে বোঝাপড়া তৈরি হয়েছিল তা ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আমিরাতের স্বীকৃতির পর রাশিয়া ইরান তুরস্ক একযোগে বলেছে তারা সিরিয়ায় ইসরাইলের আর কোনো বিমান হামলাকে মেনে নেবে না। ইসরাইল কাশ্মিরে ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সহায়তাকে বেইজিং তার স্বার্থবিরোধি যুদ্ধে ইসরাইলের লাঠিয়ালের ভূমিকা হিসেবে দেখছে। এর পর ইরানের সাথে দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তির খসড়া তৈরি করেছে চীন। একইসাথে মধ্যপ্রাচ্যে নিজস্ব উপস্থিতি জোরালো করতে শুরু করেছে উদীয়মান এই বিশ্ব শক্তি। এর ফলে দুটি বৃহৎ শক্তি ইসরাইলের স্বার্থের বিরুদ্ধে নতুন এক ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
এতদিন চীন রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাত্মক যুদ্ধ পরিস্থিতি ছিল না। এখন সেই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে বলে মনে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এর পাল্টা মেরুকরণও ঘটতে চলেছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধ শক্তির কাতারে সক্রিয় হতে পারে চীন রাশিয়া। চীনা প্রেসিডেন্ট শি’র ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা প্রকাশ্যে বলাটা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। ইসরাইল কাশ্মীরে যত সক্রিয় হবে ইহুদি দেশটির আশপাশে লড়াইরত শক্তিগুলোর পাশে ততটাই সক্রিয় হবে চীন। ফলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে মুছে দেবার যে স্বপ্ন উগ্রবাদি ইসরাইলী নেতারা দেখছিল তা বুমেরাং হতে পারে।
সঙ্ঘাতের সাল ২০২১!
আশা আছে, করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করবে। এরপর অবয়ব নিতে শুরু করবে পরবর্তী ‘মহাখেলা’র আয়োজন। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল-আমিরাত-মিসর-ফ্রান্স এবং মিত্রদের সহায়তায় একটি প্রতিরক্ষা বলয় তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। চীন সক্রিয় হয়ে উঠবে পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকার রাজনীতিতে। ইরান ছাড়াও চীন পাকিস্তানের মাধ্যমে তুরস্কের নেতৃত্বাধীন মধ্যপন্থী সুন্নি বলয়ের সাথে একটি সমীকরণ নির্মাণের চেষ্টা করতে পারে। ২০২৩ সালে লুজান চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর খোলস ছেড়ে তুরস্কের আঞ্চলিক পর্যায়ে সক্রিয় হয়ে ওঠাকে রোধ করতে ইসরাইল-আমিরাত-সৌদি বলয় নানাভাবে দাবার ঘুঁটি সাজাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সমর্থন দেয়ার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যে তুরস্কের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে এমন গুণগত পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে যে, সেখানে ক্ষমতাসীন একেপিকে সরানো খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না। মধ্যপ্রাচ্যে ব্রাদারহুডের মতো জনসম্পৃক্ত দল এবং সাধারণ মানুষের আরব ও উম্মাহর স্বার্থগত নীতির কারণে এরদোগানের প্রতি সমর্থন তুরস্কের সক্ষমতার শেকড়কে অনেক গভীরে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। এরদোগানের কৌশল হলো, প্রয়োজনে সক্ষমতার প্রদর্শন আবার প্রয়োজনে আপস সমঝোতা। এটি তুরস্কে এবং আঞ্চলিকভাবে এরদোগানের দলকে ক্রমান্বয়ে শেকড় বিস্তৃত করতে সাহায্য করেছে।
২০২০ সালের শেষ প্রান্তিকটা বিশ্ব রাজনীতির নতুন অবয়ব গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিত তৈরির সময়। এ সময়ে বৈশ্বিক ক্ষমতায় অনেক বলয় তৈরি হতে পারে। এটি শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতার ক্ষেত্রেই হবে, তা নয়; অধিকন্তু ব্রেটন উডসকেন্দ্রিক যে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সেটিও পরিবর্তনের ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে। পাল্টা বিশ্ব সংস্থা তৈরির একটি উদ্যোগও দানা বাঁধতে পারে সৃষ্ট, বৈশ্বিক সঙ্কটকে কেন্দ্র করে।
mrkmmb@gmail.com