ডায়াবেটিসে সুগার ফল : কেন হয়, কী করবেন
ডায়াবেটিসে সুগার ফল : কেন হয়, কী করবেন - ছবি : সংগৃহীত
কোনো ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে সুগারের মাত্রা ৭০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার-এর নিচে নেমে গেলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এই অবস্থাকে বিজ্ঞানের ভাষায় হাইপোগ্লাইসেমিয়া এবং জনসাধারণের ভাষায় ‘সুগার ফল’ করা বলে। এ সময় বুক ধড়ফড়, হাত কাঁপা, মাথা ঝিমঝিম, শরীরে অস্বস্তি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।
কেন হয়?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী ডায়াবেটিসের পুরনো ওষুধ বা ইনসুলিন। এই ধরনের ওষুধ বা ইনসুলিন ব্যবহারের পর কম খাওয়া, দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকা, অতিরিক্ত পরিশ্রম ইত্যাদি কারণে সুগার ফল-এর আশঙ্কা বাড়ে। নতুন ওষুধ বা ইনসুলিনে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার আশঙ্কা থাকে অনেকটাই কম।
কখন বেশি হয়?
দিনের যেকোনো সময় হতে পারে। তবে মাঝরাতে বা ভোরবেলায় সুগার ফল বেশি হতে দেখা যায়। রাতে ঘুমের মধ্যেও এই সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা থাকে।
কতটা বিপজ্জনক?
অত্যন্ত বিপজ্জনক। সময়ে ব্যবস্থা না নিলে সমস্যা জটিল হতে পারে। বিশেষত, ঘুমের মধ্যে সুগার ফল-এর দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়তে পারে। আসলে দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস থাকলে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ অনেকটা সময় পরে বোঝা যায়। তাই কিছু ক্ষেত্রে সুগার ফল হওয়ার পরও এমন রোগীর ঘুম ভাঙে না।
কাদের বেশি হয়?
ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনির রোগ থাকলে সুগার ফল-এর আশঙ্কা থাকে বেশি। আসলে ডায়াবেটিসের বহু ওষুধ এবং ইনসুলিন কিডনির মাধ্যমে মূত্রের সঙ্গে শরীরের বাইরে চলে আসে। তবে কিডনির রোগ থাকলে এই ওষুধ এবং ইনসুলিন শরীরের বাইরে আসতে পারে না। তখন সমস্যা তৈরি হয়।
কী করবেন?
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখামাত্র চিনি বা গ্লুকোজজাতীয় খাবার খেলে সুগার লেভেল বাড়ে। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার উপসর্গও কমে। এরপর অবশ্যই ভাত, ডাল, রুটির মতো শর্করা জাতীয় খাবার খেতে হবে। তাতে ফের সেই সময় সুগার লেভেল কমে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। তারপর অবশ্যই নিজের চিকিৎসককে ঘটনার কথা জানান। রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে বা ঘুম না ভাঙলে চিনি খাওয়ানো সম্ভব হয় না। এই অবস্থায় তড়িঘড়ি হাসপাতালে আনতে হবে।
প্রতিরোধ
খাবার, ব্যায়াম এবং ওষুধে সমতা আনতে হবে
কম খাওয়া বা দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকা যাবে না
জিম করার আগে সুগার মাপুন। কম থাকলে রুটি, পাউরুটি খেয়ে জিম করুন। একইভাবে সকালে হাঁটতে যাওয়ার আগে দু’টো বিস্কুট খাওয়া যেতে পারে। সঙ্গে অবশ্যই গ্লুকোজ নিয়ে হাঁটতে যান
বহু রোগীর ভোরের দিকে নীরবে সুগার ফল হয়। তিনি বুঝতেও পারেন না। তাই দীর্ঘদিনের সুগারের রোগীদের মাঝে মধ্যে ভোরে ঘুম থেকে উঠে সুগার মেপে দেখা উচিত ঠিক আছে কি না
একবার সুগার ফল হলে সাময়িক ধাক্কা কাটিয়ে সেদিনই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি ঠিক কারণ খুঁজে ব্যবস্থা নেবেন। নইলে সমস্যা কিন্তু চলতেই থাকবে।
লেখক : কনসালটেন্ট এন্ডোক্রিনোলজিস্ট, বি পি পোদ্দার হসপিটাল অ্যান্ড মেডিক্যাল রিসার্চ লিমিটেড
সূত্র : বর্তমান