জানাজার আগে মহানবী সা: যা জানতে চাইতেন

মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম | Aug 25, 2020 03:54 pm
জানাজার আগে মহানবী সা: যা জানতে চাইতেন

জানাজার আগে মহানবী সা: যা জানতে চাইতেন - প্রতীকী

 

আল্লাহ তায়ালা চান মুমিন যেন পাপমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করে। আর এ পরিচ্ছন্ন অবস্থায়ই যেন তার মৃত্যু হয়। এ জন্য পাপ ও ঋণমুক্ত থাকা অপরিহার্য।

মৃত ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট হক : মৃত ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট হক ৪টি। ১. কাফন-দাফন : একজন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার পর ওয়ারিশদের প্রথম কর্তব্য হলো- তার ত্যাজ্যসম্পদ থেকে মধ্যম মানের ব্যয়ে তার কাফন দাফনের ব্যবস্থা করা। ২. ঋণ পরিশোধ করা : সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো তার ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করা। ৩. অসিয়ত পূরণ করা : মৃত ব্যক্তি কোনো অসিয়ত করে গিয়ে থাকলে এক-তৃতীয়াংশ মাল দিয়ে সে অসিয়ত পূরণ করা। ৪. বণ্টন করা : অবশিষ্ট সম্পদ তার ওয়ারিশদের মধ্যে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা অনুযায়ী বণ্টন করা।

ঋণ পরিশোধ না করার পরিণতি : ঋণের গুনাহ মারাত্মক। তা বান্দার হক তাই ঋণদাতা তাকে ক্ষমা না করলে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করবেন না। হজরত আবু হুরায়রা রা: হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন- মুমিনের আত্মা তার ঋণের কারণে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে অর্থাৎ জান্নাতে যেতে পারবে না, যতক্ষণ তার ঋণ পরিশোধ করা না হয়। (তিরমিজি, হাদিস নং-১০৭৮ মুসনাদ আহমদ, মিশকাত পৃ: ১৬৪) হজরত মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমরা মসজিদে নববীর সম্মুখে যেখানে জানাজা রাখা হতো, সেখানে বসা ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সা:ও আমাদের মাঝে উপবিষ্ট ছিলেন। আমরা দেখলাম, তিনি আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকালেন, তারপর দৃষ্টি অবনমিত করে কপালে হাত রেখে বললেন, সুবহানাল্লাহ! কী কঠিন বিষয় অবতীর্ণ হলো। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা এক দিন ও এক রাত চুপ থাকলাম। এ সময়ের মধ্যে ভালো ছাড়া মন্দ কিছুই দেখলাম না। হাদিস বর্ণনাকারী মুহাম্মদ বলেন, (দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর) আমি রাসূলুল্লাহ সা:-এর নিকট আরজ করলাম, কী কঠিন বিষয় অবতীর্ণ হয়েছে? রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ঋণ সম্পর্কীয় কঠিন বিধান। সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ। যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহর পথে শহীদ হয়, তারপর পুনঃজীবিত হয়ে আবার আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়, তারপর পুনঃজীবিত হয়ে আবার আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয় তথা তিনবার শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করে, আর তার জিম্মায় অনাদায়ী ঋণ থেকে যায়, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ তার সেই ঋণ পরিশোধ না করা হয়। (সুনানে আবু দাউদ, মিশকাত পৃ.১৬৩)

মহানবী সা: জানাজায় যে প্রশ্ন করতেন : রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, শহীদের সব গুনাহই ক্ষমা করে দেয়া হবে। মাফ হবে না শুধু ঋণ (মুসলিম)। মহানবী সা: কারো মৃত্যুর সংবাদ শুনলে তার জানাজায় উপস্থিত হতেন। তিনি বলেছেন- এক মুমিনের ওপর আরেক মুমিনের হক হলো ছয়টি। তন্মধ্যে একটি হলো- মৃত ব্যক্তির জানাজায় উপস্থিত হওয়া এবং তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা। মহানবী সা: জানাজায় উপস্থিত হয়ে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের উদ্দেশে প্রশ্ন করতেন- এ ব্যক্তির কোনো ঋণ আছে কি না? যদি প্রত্যুত্তরে বলা হতো আছে, তাহলে তিনি বলতেন তার ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য আছে কি না? যদি বলা হতো আছে, তাহলে ওয়ারিশদের বলতেন তা পরিশোধ করে দাও। অতঃপর জানাজা পড়াতেন। আর যদি বলা হতো পরিশোধ করার মতো সামর্থ্য তার নেই, তখন তিনি বলতেন, এ ঋণ পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার, আমি নবী ও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল হিসেবে তা প্রদান করব।

অন্যের ঋণের বোঝা হালকা করার ফল : অপর মুমিন ভাইয়ের ঋণের বোঝা দূর করার ফল হলো ক্ষমা। মহানবী সা: বলেন, এক ব্যক্তি মানুষকে ঋণ দিতো। তারপর তা আদায় করার জন্য লোক পাঠাত। সে আদায়কারীকে বলে দিত, অভাবী লোকদের ঋণ মাফ করে দেবে। তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ আমাদের মাফ করে দেবেন। এ ব্যক্তি যখন আল্লাহর কাছে গিয়ে পৌঁছল, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জানাজার জন্য এক ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে আনা হলো। রাসূলুল্লাহ সা: জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যক্তির কি কোনো ঋণ আছে? জবাবে বলা হলো, হ্যাঁ আছে। রাসূলুল্লাহ সা: জিজ্ঞেস করলেন, ঋণ শোধ করার মতো সম্পদ কি সে রেখে গেছে? জবাবে বলা হলো, ‘না রেখে যায়নি। রাসূলুল্লাহ বললেন, ‘তোমরা এ ব্যক্তির জানাজা পড়ো, আমি পড়ব না। এ অবস্থা দেখে হজরত আলী রা: বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এ ব্যক্তির ঋণ আদায়ের ভার নিচ্ছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সা: তার জানাজা পড়ান। অন্য এক বর্ণনানুযায়ী রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, হে আলী! আল্লাহ তোমাকে আগুন থেকে বাঁচিয়ে রাখুন, সেভাবে তুমি তোমার একজন মুসলিম ভাইকে আগুন থেকে বাঁচালে। যে মুসলিম অপর মুসলিমের ঋণ পরিশোধ করে দেবে, শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাকে মাফ কের দেবেন (শরহে সুন্নাহ)।

ঋণ পরিশোধ করার বাসনা : ঋণ পরিশোধ করার নিয়ত থাকলে আল্লাহ তায়ালা সাহায্য করেন। মহানবী সা: বলেন, যে ব্যক্তি কারো কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে এবং তা আদায় করার নিয়ত রাখে। আল্লাহ তার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করে দেন অর্থাৎ পরিশোধ করা সহজ করে দেন। আর যে ব্যক্তি ঋণ নিয়ে তা আদায় করার নিয়ত রাখে না। আল্লাহ তায়ালা তাকে ধ্বংস করেন (সহিহ বুখারি)।
ঋণ পরিশোধ করার অনিচ্ছা : ঋণ পরিশোধে উদাসীন হওয়া হারাম। যত দ্রুত পারা যায় ঋণ পরিশোধ করে দেয়া উত্তম। কারণ হায়াতের কোনো গ্যারান্টি নেই। মহানবী সা: বলেন- সক্ষম ব্যক্তির ঋণ আদায়ে গড়িমসি করা তার মানহানি ও শাস্তিকে বৈধ করে দেয়। (আবু দাউদ)

শিক্ষা : পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত ঋণের ভয়াবহতা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, যাতে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কবরে যেতে না হয়। মৃত্যুর পর ওয়ারিশগণ সম্পদ বণ্টন করে নিয়ে যাবে। তারা ঋণ পরিশোধ না করলে ঋণের শাস্তি তাকেই পেতে হবে। বিশেষ করে ব্যাংক, ব্যক্তি বা এনজিও ইত্যাদি থেকে সুদে ঋণ গ্রহণ করার ব্যাপারে অবশ্যই আল্লাহকে ভয় করা উচিত। কারণ সুদের নিম্নতম গুনাহ হলো আপন মাকে বিবাহ করা। আর সর্বোচ্চ গুনাহ হলো আল্লাহর সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করা।

লেখক : প্রধান ফকিহ্, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা, ফেনী


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us