আর কবে ‘সাবালক’ হবেন নেইমার

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Aug 25, 2020 08:04 am
নেইমার

নেইমার - ছবি : সংগৃহীত

 

বন্যেরা বনে সুন্দর। আর প্যারি সাঁজাঁ প্যারিসেই। রোববার রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের পর আবার তা প্রমাণ হল। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে চূড়ান্ত ব্যর্থ নেইমার। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তিনি আর কবে ‘সাবালক’ হবেন? ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে বদলে দেবেন কঠিন ম্যাচের ভাগ্য।

গত কয়েক বছর ধরেই ইউরোপ সেরা হওয়ার লক্ষ্যে পিএসজি মালিক নাসের আল খেলেফি কোটি কোটি ডলার খরচ করেছেন। বলা ভালো, দল গড়তে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি। বার্সেলোনা থেকে রেকর্ড অর্থের বাই-আউট ক্লজ মিটিয়ে নেইমারকে নেয়া হয়েছিল। এছাড়া মোনাকোর কিলিয়ান এমবাপে, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, উলফসবার্গের টমাস ড্র্যাক্সলার যার সার্থক উদাহরণ। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেতাব এখন পর্যন্ত অধরাই রইল পিএসজি’র কাছে। জানি না, আগামী মরশুমে মিস্টার খেলেফি কীভাবে দল সাজাবেন?

তবে এটা অবশ্যই ঠিক যে, সুগন্ধীর শহরে নেইমারকে নিয়ে আসা তার মস্ত বড় ভুল। বছর তিনেক আগে ব্রাজিলিয়ান তারকাটি প্যারিসে পা রেখেছিলেন। সেই সময় শহরের অধিকাংশ সংবাদপত্রে খেলেফির সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘মেসি কিংবা রোনালদোর থেকে কোনো অংশে কম নয় নেইমার। এত দিন আমরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখতাম। এবার আশা করছি।’

গত ১৫ বছর বিশ্ব ফুটবলকে শাসন করছেন লায়োনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। পেশার প্রতি এরকম দায়বদ্ধতা আর কারো নেই। সাফল্যের খিদেও মারাত্মক। বছরের পর বছর ধারাবাহিকতা কীভাবে বজায় রাখতে হয় তা এই দু’জনের থেকে শেখা উচিত নেইমারের। বার্সেলোনায় থাকাকালীন ব্রাজিলের অ্যাটাকারটির মনে হয়েছিল, অচিরেই তিনি মেসিকে ছাপিয়ে যাবেন। ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পরে জাভি-ইনিয়েস্তাদের মতো সহ-ফুটবলারদের সঙ্গে তাই ঔদ্ধত্যপূর্ণ ব্যবহার করতে তার বাধেনি।

তারপর পিএসজি’র লোভনীয় অফার পেয়েই অনুশীলনে একাধিক ফুটবলারের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে নেইমারের। আমিই সেরা, এই অহঙ্কারই তার পতনের অন্যতম কারণ। মেসি ও রোনালদো, দু’জনে অনুশীলনে প্রচণ্ড সিরিয়াস। ফ্র্যাঙ্ক রাইকার্ড, পেপ গুয়ার্দিওলা, লুই এনরিকে কিংবা অ্যালেক্স ফার্গুসন, কার্লো আনসেলোত্তি, জিনেদিন জিদানরা সবসময়েই প্রকাশ্যে যা বলে এসেছেন। কিন্তু নেইমারের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে একাধিকবার। তারকা থেকে মহাতারকা উপাধি কীভাবে অর্জন করতে হয়, তা শেখেননি এই ব্রাজিলিয়ান। জন্মগত প্রতিভা তো তার রয়েইছে। কিন্তু পরিকল্পিত পথে তার বিকাশ হয়নি। নিজের সবচেয়ে খারাপ দিনেও মেসি কিংবা রোনালদো দলকে জেতাতে পারেন। নেইমার এই জায়গাতেই কয়েক আলোকবর্ষ পিছিয়ে। বছর তিনেক ধরে তিনি খেলার থেকে বেশি মন দিয়েছেন প্লে-অ্যাক্টিংয়ে। ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যাওয়ার মতো তার হাবভাব। যা প্রথমে কাজে দিলেও পরে রেফারিরা তা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছেন।

এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ তিনটি ম্যাচে গোল নেই নেইমারের। একাধিক সোনার সুযোগ পেয়েও তা উড়িয়েছেন বড়লোকের বাউণ্ডুলে ছেলের মতো। করমর্দন দূরত্ব থেকেও তিনি লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ। ভেবে দেখুন, এই নেইমারকে পেয়েই নাসের আল খেলেফি এবং লক্ষ লক্ষ পিএসজি সমর্থক ইউরোপ সেরার স্বপ্ন বুনেছিলেন। ফাইনালেও চূড়ান্ত নিষ্প্রভ এই ব্রাজিলিয়ান। ১৯ মিনিটে একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে বল পেয়েও তিনি তা মারেন ম্যানুয়েল ন্যুয়েরের গায়ে। এছাড়া গোটা ম্যাচে তার অবদান খুঁজতে গেলে দূরবীন চোখে দিতে হবে।

তাই ম্যাচের শেষে তার কান্না মূল্যহীন। এরপর তিনি বিভিন্ন মন্তব্য করবেন। দেবেন সাফাইও। যা ছাপার জন্য নিউজপ্রিন্ট খরচও হবে। কিন্তু তিনি ‘সাবালক’ হওয়ার চেষ্টা করবেন না। চোখের সামনে রয়েছেন মেসি এবং রোনাল্ডো। যাঁদেরকে সামনে রেখে তাঁর পা ফেলা উচিত ছিল। এছাড়া নেইমারের মনে রাখা দরকার, শৃঙ্খলা না থাকলে বেশিদূর এগনো সম্ভব নয়। প্যারিসের লোভনীয় সন্ধ্যা কিংবা রাতের স্বাদ নিতে তিনি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে হারিয়েছে ফোকাস। তারই বহিঃপ্রকাশ তার ছন্দহীন পারফরম্যান্সে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us