মানবদেহেই রয়েছে করোনাপ্রতিরোধী টি-সেল!
মানবদেহেই রয়েছে করোনাপ্রতিরোধী টি-সেল! - ছবি : সংগৃহীত
করোনাভাইরাস প্রতিরোধের সম্ভাবনা হাতের নাগালে চলে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। মানুষের দেহের মধ্যেই এর প্রতিষেধক আছে বলে এখন প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ভ্যাকসিন উৎপাদনের সময় মানবদেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার পুরো বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে গবেষকদের। আর সেই প্রাধান্যের কথা মাথায় রেখেই করোনাকে হারিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের দেহে টি-সেল পর্যবেক্ষণ করলেন গবেষকরা। তাদের মত, এই টি-সেলের গঠন, চরিত্র ভ্যাকসিন উৎপাদনের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। সম্প্রতি এই বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে সেল রিপোর্ট মেডিসিন পত্রিকায়। যেখানে দেখান হয়েছে মানবদেহে প্রতিরক্ষা প্রদানকারী টি-সেল কীভাবে করোনা প্রতিরোধে সফল হচ্ছে।
দেহকে বাইরের ভাইরাস আক্রমণ থেকে প্রাথমিক সুরক্ষা প্রদান করে দেহস্থ টি-সেল এবং অ্যান্টিবডিরা। এই কাজ করতে গিয়ে গবেষকরা বিশেষ এক ধরনের পরীক্ষা করেন। যার নাম- CyTOF। যার মাধ্যমে করোনা ভাইরাসকে রুখতে টি-সেলের মধ্যে কী কী চারিত্রিক পরিবর্তন হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করেন। দেহকোষে ভাইরাস প্রোটিনের বিরুদ্ধে কীভাবে নতুন প্রোটিন তৈরি করছে এই কোষ সেটিও পরীক্ষা করে দেখা হয়। সেখানে দেখা গিয়েছে সারস-কোভ-২ ভাইরাসের সঙ্গে যখন লড়াই করছে টি-সেল তখন প্যাটার্নে বদল আসছে। আর সেই ক্ষমতার জেরেই সুস্থ হয়ে উঠছে করোনা আক্রান্ত রোগী।
কী এই টি সেল ইমিউনিটি?
মানুষের শরীরেই থাকে এই টি সেল। আমাদের দেহে দু’ধরনের প্রতিরোধী কোষ রয়েছে। একটি- ‘বি-সেল’। অন্যটি, টি-সেল। আমাদের দেহের বিশেষ এক ধরনের প্রতিরোধী কোষ নিয়ে তৈরি। দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) গড়ে ওঠে যে কোষগুলি দিয়ে এটি সেই কোষ বা সেল। এই কোষগুলি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্য দেহে নিজস্ব প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে গড়ে তোলে। দেহে নানা ধরনের টি-সেল থাকে। তাদের গায়ে থাকে নানা রকমের ‘রিসেপ্টর’। ভাইরাসের চরিত্র বুঝে এরা কাজ করতে শুরু করে।
করোনা রুখতে কীভাবে কাজ করতে পারে এই টি-সেল?
টি সেল আসলে অনেকটা পদাতিক বাহিনীর মতো। যারা নিজেরা প্রোটিন কাঁধে করে নিয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এগিয়ে যায়। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে যেসব কোষগুলিতে ভাইরাস ঢুকে বসে থাকে সেখানে সরাসরি ঢুকে যায় টি সেল বাহিনী। রীতিমতো যুদ্ধ করেই ভাইরাস ঘায়েল করতে সক্ষম হয় সে, পরীক্ষায় এমন প্রমাণই পাওয়া গিয়েছে। ১৭ বছর আগে সারস ভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর দেহে এমন কিছু বিশেষ ধরনের টি সেল পাওয়া গিয়েছে যারা এই করোনা লড়াইয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএইচইউ) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ কোটি ৩৩ লাখে পৌঁছেছে। এছাড়া কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮ লাখ ৭ হাজারের বেশি মানুষ।
জেএইচইউ‘র দেয়া তথ্য মতে, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন বিশ্বের দেড় কোটিরও বেশি মানুষ।
মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ৫৭ লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ১ লাখ ৭৬ হাজারের বেশি।
ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল। এ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ লাখেরও বেশি মানুষ। এবং মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৬ জনের।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস