আশুরার রোজার যত ফজিলত

এবিএম ওসমান গণি | Aug 24, 2020 02:59 pm
আশুরার রোজার যত ফজিলত

আশুরার রোজার যত ফজিলত - ছবি : সংগ্রহ

 

চান্দ্র বছরের প্রথম মাসের নাম মহররম মাস। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ মাস। পবিত্র কুরআনুল কারিমে চারটি মাসকে (জিলকদ, জিলহজ, মহররম এবং রজব) হারাম (সম্মানিত বা নিষিদ্ধ) মাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার কিতাবে আসমান ও জমিন সৃষ্টির সূচনা হতে (বছরে) ১২টি মাস নির্ধারিত। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। (সূরা আত্-তাওবাহ ৩৬ নং আয়াত)
এ চারটি মাসে সব পাপ ও অন্যায় থেকে বিরত থাকতে ও অধিক নেক আমল করতে কুরআন ও হাদিসে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ চার মাসের মধ্যে মহররম মাসকে বিশেষভাবে মর্যাদা দিয়ে আল্লাহর মাস বলে হাদিসে ঘোষণা করা হয়েছে। এজন্য মহররম মাসে বিশেষ করে আশুরাকে কেন্দ্র করে নফল রোজার সাওয়াব অন্য নফল রোজার সাওয়াবের চেয়ে বেশি।
নিম্নের হাদিসটি থেকে আমরা তা জানতে পারি।
আবু হুরাইরাহ রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, রমজান মাসের পর (সবচেয়ে বেশি ফজিলতের সিয়াম) আল্লাহর মাস মহররমের সাওম সর্বোত্তম এবং ফরজ সালাতের পর রাতের সালাতই সর্বোত্তম। (আবু দাউদ ২৪২৯)
মুহাররম মাসের দশম দিবসকে আশুরার দিবস বলা হয়। আশুরার দিবসে রোজার রাখা সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস তুলে ধরা হলো।

১. আশুরার দিনে সাওম পালন করা ইচ্ছাধীন : আশুরার দিবসে রোজা রাখা বা না রাখার ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে হজরত আয়িশা রা: বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: প্রথমে ‘আশুরার দিনে সাওম পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, পরে যখন রমজানের সাওম ফরজ করা হলো তখন যার ইচ্ছা (আশুরার) সওম পালন করত আর যার ইচ্ছা করত না। (বুখারি, ২০০১ নং, আবুদাউদ ২৪৪২ নং হাদিস]

এ ব্যাপারে হজরত আয়িশা রা: থেকে আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, জাহিলিয়্যাতের যুগে কুরাইশগণ ‘আশুরার সওম পালন করত এবং আল্লাহর রাসূল সা:-ও এ সাওম পালন করতেন। যখন তিনি মদিনায় আগমন করেন তখনো এ সাওম পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন। যখন রমজানের সাওম ফরজ করা হলো তখন আশুরার সাওম ছেড়ে দেয়া হলো, যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না। (বুখারি, ২০০২ নং হাদিস)

২. আশুরার সাওম পালনের নির্দেশ : জাহেলি যুগে মক্কার মানুষেরা আশুরার দিন সাওম পালন করত। হিজরতের পূর্বে রাসূলুল্লাহ সা: নিজেও এ সাওম পালন করতেন। মদিনায় হিজরতের পর তিনি এ দিনে সাওম পালন করার জন্য মুসলমানদের নির্দেশ দেন।
হজরত ইবন আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন যে, ইয়াহুদিরা আশুরার দিনে সাওম পালন করে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার? (তোমরা এদিনে সওম পালন করো কেন?) তারা বলল, এ অতি উত্তম দিন, এ দিনে আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাইলকে তাদের শত্রুর কবল থেকে নাজাত দান করেন, ফলে এ দিনে মুসা আ: সাওম পালন করেন। আল্লাহর রাসূল সা: বললেন, আমি তোমাদের অপেক্ষা মুসার অধিক নিকটবর্তী, এরপর তিনি এদিনে সাওম পালন করেন এবং সাওম পালনের নির্দেশ দেন। (বুখারি ২০০৪ নং, আবু দাউদ ২৪৪৪ নং, ইবনে মাজাহ ১৭৩৪ নং হাদিস)

৩. সর্বাধিক প্রাধান্য দিতেন : রমজানের ফরজ রোজার পরে সব ধরনের নফল রোজার মধ্যে আশুরার রোজাকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিতেন বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
হজরত ইব্ন আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সা:কে আশুরার দিনের সাওমের উপর অন্য কোনো দিনের সাওমকে প্রাধান্য প্রদান করতে দেখিনি এবং এ মাস অর্থাৎ রমজান মাস (এর উপর অন্য মাসের গুরুত্ব প্রদান করতেও দেখিনি)। (বুখারি, ২০০৬ নং হাদিস)

৪. মহররমের নয় তারিখে রোজা রাখা : মহররম মাসের নবম তারিখে রোজা রাখার গুরুত্ব আলাদাভাবে বর্ণিত হয়েছে।
হজরত আল-হাকাম ইবনু আ’রাজ রহ: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস রা:-এর নিকট এলাম। এ সময় তিনি মাসজিদুল হারামে তার চাঁদরে হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। আমি তাকে আশুরার সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যখন তুমি মহররমের নতুন চাঁদ দেখবে, তখন থেকে গণনা করতে থাকবে। এভাবে যখন নবম দিন আসবে তখন সাওম অবস্থায় ভোর করবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মুহাম্মাদ সা: কি এভাবে সাওম রাখতেন? তিনি বলেন, মুহাম্মাদ সা: এভাবেই সাওম রাখতেন। (আবু দাউদ ২৪৪৬ নং হাদিস)

৫. আশুরার সাওম পালন : আশুরার দিবসে রোজা রাখার জন্য মহানবী সা: বিশেষভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন।
হজরত আবদুর রহমান ইবনু মাসলামাহ রহ: হতে তার চাচা থেকে বর্ণিত, একদা আসলাম গোত্রের লোকেরা নবী সা:-এর নিকট আগমন করলে তিনি বললেন, তোমরা কি তোমাদের এই দিনে সাওম রেখেছ ? তারা বলল, না। তিনি বললেন : দিনের বাকি অংশটুকু (পানাহার না করে) পূর্ণ করো এবং এদিনের সাওম কাজা করে নাও। (আবু দাউদ ২৪৪৭ নং হাদিস)
হজরত আয়িশা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: আশুরার দিন সিয়াম রাখতেন এবং এ দিন সিয়াম রাখতে নির্দেশ দিতেন। (মুসলিম ১১২৫, তিরমিজি ৭৫৩, আবু দাউদ ২৪৪২)

৬. আশুরার রোজার ফজিলত : আশুরার দিবসের রোজা দ্বারা বিগত বছরের গুনাহ মাফের আশা করা যায়।
হজরত আবু কাতাদাহ রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, আশুরার দিনের রোজার দ্বারা আমি আল্লাহর নিকট বিগত বছরের গুনাহ মাফের আশা রাখি। (ইবনে মাজাহ ১৭৩৮,তিরমিজি ৭৫২, আবু দাউদ ২৪২৫)
মহররম ও আশুরার গুরুত্ব অনুধাবন করে আমাদের আল্লাহ তায়ালা ও মহানবী সা: নির্দেশনা অনুযায়ী নফল রোজা ও অন্যান্য ইবাদত পালন করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : খতিব, ইসলামিয়া হাট জামে মসজিদ, উত্তর পতেংগা ও সিনিয়র শিক্ষক, বেপজা পাবলিক স্কুল ও কলেজ, সিইপিজেড, চট্টগ্রাম।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us