চীন-পাকিস্তান কৌশলগত জোটে কেন উদ্বিগ্ন ভারত!
চীন-পাকিস্তান কৌশলগত জোটে কেন উদ্বিগ্ন ভারত! - ছবি : সংগৃহীত
চীনা স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াঙ ইয়ি ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাখদুম শাহ মাহমুদ কোরেশি শুক্রবার দক্ষিণ চীনের হাইনান প্রদেশে চীন-পাকিস্তান ফরেন মিনিস্টার্স স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগের দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেন।
চীন ও পাকিস্তান ২০১৮ সালের নভেম্বর চীন-পাকস্তান স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে উন্নীত করে।
চীন-ভারত উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এবং ভারতের জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার প্রথম বর্ষপূর্তির কয়েক দিনের মধ্যে ভারত সম্ভবত চীন ও পাকিস্তানের মধ্যকার সংলাপকে ভারতকে টার্গেট করে কৌশলগত জোট হিসেবে দেখছে। অবশ্য দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের বর্তমান অবস্থানের ভিত্তিতে চীন দ্বিপক্ষীয়ভাবে বিরোধ মেটানোর আশা করছে। চীনের এ ধরনের কোনো ‘জোট’ গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছ না। চীনের নিজের শক্তিতেই ভারতকে মোকাবেলা করার সক্ষমতা রাখে।
কাশ্মিরের ব্যাপারে চীন বারবার বলে আসছে যে কাশ্মির ইস্যুটি ভারত ও পাকিস্তানর মধ্যকার ঐতিহাসিক বিরোধী। চীন এই পরিস্থিতিকে জটিল করে এমন কোনো একতরফা পদক্ষেপের বিরোধী।
চীনা অবস্থানের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রবাস্তব শীনবার বলেন, যৌথ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জম্মু ও কাশ্মিরের উল্লেখের বিষয়টি ভারত প্রত্যাখ্যান করে। তিনি বলেন, ভারত মনে করে এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সামিল।
নয়া দিল্লির কাছ থেকে এমন প্রতিক্রিয়া অপ্রত্যাশিত নয়। ভারত জোর দিয়ে বলছে যে কাশ্মির প্রশ্নে তার অবস্থান চীন, পাকিস্তান ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবস্থানের সাথে অপ্রাসঙ্গিক। প্রস্তুত, কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা ভারতের প্রত্যাহার ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সীমিত নয়। এর কারণ হলো, কাশ্মির হলো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ অঞ্চল এবং তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। অধিকন্তু, বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা বাতিল করার পর স্থানীয় অধিবাসীদের, বিশেষ করে মুসলিমদের রীতিনীতি ও জীবনযাত্রা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। কাশ্মির প্রশ্নে ভারতের বক্তব্য এই বিরোধপূর্ণ অঞ্চলের ব্যাপারে চীনা অবস্থানে কোনো প্রভাব বিস্তার করবে না।
শ্রীবাস্তব শনিবার চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) প্রশ্নে ভারতের অবস্থানও আবার বলেন। তিনি বলেন, এটি ভারতের ভূখণ্ড দিয়ে অতিক্রম করেছে, যা পাকিস্তান অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। সিপিইসি নির্মাণ ভণ্ডুল করার জন্য নয়া দিল্লি কোনো কিছু করা থেকে বিরত থাকেনি এবং চীনা প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে (বিআরআই) দানবীয়ভাবে তুলে ধরছে। কৌশলগত ও জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকে সিপিইসি ভারতের মধ্যে হুমকি সৃষ্টি করেছে। চীন অবশ্য বলে আসছে যে সিপিইসি কেবলই একটি অর্থনৈতিক প্রকল্প, কিন্তু তা ভারতের নিরাপত্তার জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না। কিন্তু তবুও ভারতের দ্বিধার অবসান ঘটেনি। এই প্রেক্ষাপটে নয়া দিল্লি এই প্রকল্পের যেকোনো ধরনের অগ্রগতিতে আপত্তি উত্থাপন করে আসছে।
তবে ভারতের আপত্তির কারণেই চীন সিপিইসি পরিত্যক্ত করবে, এমন নয়। বরং চীন এটির প্রসার করা অব্যাহত রাখবে। পাকিস্তানের সাথে চীনের জোরালো জাতীয় শক্তি ও ব্যাপকভিত্তিক সহযোগিতার কারণে ভারত বলতে গেলে কোনোভাবেই সিপিইসির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্যের দেশগুলো বারবার হংকং ও তাইওয়ানের মতো চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে চীনকে উত্যক্ত করতে থাকলেও পাকিস্তান শুক্রবার জোরালভাবে চীনের মূল স্বার্থগুলোর প্রতি দৃঢ় সমর্থন দিয়েছে এবং তাইওয়ান, জিনজিয়াং ও হংকংয়ের সাথে সম্পর্কিত বিষয়াদিতে চীনের প্রতি আস্থাশীল থাকার কথা জানিয়েছে। এসব ইস্যুতে এটিই পাকিস্তানের ধারাবাহিক অবস্থান।
উভয় পক্ষ বহুপক্ষীয়বাদের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে, একতরফাবাদ, সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা করেছে, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য পরিচর্যায় হুর ভূমিকাকে সমর্থন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে, পরাশক্তি হিসেবে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে, তখন চীন ও পাকিস্তানের বিবৃতিটি মহামারিটি দমন ও বৈশ্বিক ঘটনাবলীতে ব্যাপক তাৎপর্য বহন করে। এতে দায়িত্বশীল শক্তি হিসেবে চীনের ভাবমূর্তি ফুটে ওঠে।
সূত্র : গ্লোবাল টাইমস