বাংলাদেশ কি এবার সচেতন হতে পারবে?
শ্রিংলা - ছবি : সংগৃহীত
বিবিসি বলছে, ‘...বাংলাদেশ সরকার প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সাক্ষাতের বিষয়টি স্বীকারই করেনি।’ তা হলে কি শ্রিংলার মানসম্মানবোধ থাকলে আর এ অফিসমুখী হবেন না কখনো?
তিস্তা একটা ‘ডেড ইস্যু’ ভারতের কাছে, ২০০৯ সালের বহু আগে থেকেই। তিস্তা থেকে আসলে ভারতের কাউকে কিছু দেয়ার নেই। উৎস থেকে যা নেয়া সম্ভব এমন সব পানি আন্তর্জাতিক নদী আইন ভঙ্গ করে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়। ২০০৯ সালের আগেই ভারতের এসব কাজ সম্পন্ন হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও শেখ হাসিনার কাছে প্রতিশ্র“তি দেয়া হয়েছিল, তিস্তা চুক্তি হবে। আজো তা বলে যাওয়া হচ্ছে।
আজ আবার ভারত যখন শুনেছে, চীন-বাংলাদেশ তিস্তা নিয়ে নতুন করে এক প্রকল্পের কথা ভাবছে তাতে অস্থির হয়ে ছুটে এসেছেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। যাদের না শক্তি না আত্মসম্মানবোধ কোনোটাই থাকে না, তারাই এভাবে আসে আর ‘ফুটা’ হয়ে যান।
দাওয়াত খেতে এসে দেখছেন, হোস্ট নিজের শ্বশুরবাড়ি রওনা দিচ্ছে- এর মানে হলো, আপনি নিজেই নিজেকে অপমানের মধ্যে ফেলেছেন, কারণ আপনার দাওয়াতই ঠিকমতো নেয়া হয়নি, কেউ দেয়নি বা দাওয়াত ছিল না। আপনি সৌজন্যও বোঝেন না, বা সৌজন্য সাক্ষাতের সময় কোলাকুলির নামে অস্বস্তিকরভাবে জড়িয়ে ধরতে চান। এতে একসময় সবাই আপনাকে কিন্তু এড়িয়েই চলবে। কিন্তু আপনার মনে ধারণা, আপনি নিজে বিরাট একটা কিছু। ভারত বিরাট কিছু একটা গুরুত্বপূর্ণ দেশ হয়ে গেছে যেন। তাই কি? কোনো দেশের জন্য বিরাট কিছু হওয়ার মানে একটাই- প্রথমত অর্থনীতিতে বিরাট কিছু হওয়া। কিন্তু ভারত কি অর্থনীতিতে বিরাট কিছু হতে পেরেছে? না তা ভারতও কখনো দাবি করেছে বলে শুনিনি। তাহলে এই আত্মপ্রবঞ্চনা কেন?
এটা একদিন হওয়ারই ছিল। ভারতের সাথে বাংলাদেশের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কবে ছিল? মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে কিছু ছিল তবু সেটি কি গভীর কোনো ‘রক্তের সম্পর্ক’ না, তা কখনো বলা হয়নি। কেউ দাবি করেননি। তবে প্রয়োজনীয় ঘনিষ্ঠ তা অবশ্যই ছিল। আর পরে শেখ মুজিব দেশে ফিরলে সবকিছু তো আরো ফরমাল হয়ে যায়, অর্থনৈতিক দিক থেকে সময়টাও খুবই কঠিন ছিল। তেল অবরোধে পরে জ্বালানি তেলের দাম দশ গুণ হয়ে যাওয়াতে সবার অর্থনীতিরই ত্রাহি ত্রাহি অবস্থায়। সবাই নিজেকে কোনো মতে টিকিয়ে রাখতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ফলে কোনো ‘বাড়তি উচ্ছ্বাস প্রকাশ’ কি আদিখ্যেতা- কোনো পক্ষেরই ছিল না। আর মুজিবের মৃত্যুর পর সেই বাস্তবতাও অন্য দিকে চলে যায়। তাই, এটা কেবলমাত্র এই ২০০৯ সাল যখন থেকে ভিত্তিহীন কথার ফুলঝুরি শুরু হয়েছে, যার শুরু হয়েছিল অতীতের এক আমলে। ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ শব্দটার ব্যবহার শেখের আমলেও কখনো ছিল না। কারণ এর মানে, এক ধরনের সোনার-পাথরের বাটি। আর ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে নির্বাচনের পরে আরো অপমানজনক শব্দ ‘স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক’, এটা নিয়ে আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
কিন্তু ২০০৯ সালের বাংলাদেশকে ভারতের ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ বলে ‘সম্পর্ক’কে কেন দেখানো হয়েছিল? এটা কি ভারতের কোনো অর্থনৈতিক অর্জন? অথবা ভারত কোনো ইনফ্লুয়েনশিয়াল দেশ হয়ে উঠেছে সেই জন্য কি? না এর কোনোটাই নয়। কারণ বড়ভাই পিঠে হাত রেখেছিল। গ্লোবালি নতুন নেতা হিসেবে চীনের উত্থান ঠেকাতে, ভারত ‘চায়না ঠেকানোর’ (চায়না কন্টেইনমেন্ট) কাজ করবে আর বিনিময়ে বাংলাদেশকে তার হাতে ‘তুলে দেয়া হবে’। আর এই থেকেই ভারতের ‘মুই কী হনু’-এর শুরু। আজ কংগ্রেসের এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শশী থারুর লিখে বলছেন, চীন ঠেকানোতে ক্ষেপ মারতে যাওয়া ঠিক হয়নি। ইতোমধ্যে আমেরিকার থিংকট্যাংকের মতামতেও টান পড়েছে; বলা হচ্ছে, চীন ঠেকানো প্রোগ্রাম নেয়া ঠিক হয়নি। কেন? কারণ এর কোনো কার্যকারিতা নেই। কারো অর্থনৈতিক উত্থান ‘ঠেকানোর’ জিনিস এটা নয়।
অথচ এটাই তো আমেরিকা মানতে চায়নি তখন। চীনের অর্থনৈতিক উত্থান ও প্রভাব বেড়ে যাওয়া এসব তো অবজেকটিভ বা বাস্তব অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ঘটনা। তার মধ্যে কোনো ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছা নির্ভরতা নেই। ওবামা আমলের শেষেই এই অনুভব উন্মোচিত হয়ে পড়েছিল। তাই ট্রাম্প এসে অকার্যকর, চায়না ঠেকানো প্রোগ্রামে ভারতের সাথে সম্পর্ক ভেঙে দিয়ে দূরে চলে যান। অর্থাৎ চীনা উত্থান অবজেকটিভ। কাজেই এটা ঠেকানোর বিষয় নয়।
এখন ভারতের মিডিয়া জগত ও এর সাংবাদিকেরা ২০০৯-২০১৭ সাল পর্যন্ত চীন ঠেকানোর কাজে ভারতের ফলস উত্থান এবং এর নায়ক নায়ক ভাব আর এসব ঘটনার উত্থান ও পতন যদি না বোঝেন আর যদি বিশ্বাস করতে থাকেন, ভারত পরাশক্তি হয়ে গেছে তাতে তাদের স্টুপিডিটি কে ঠেকাবে? বিদেশ মন্ত্রণালয়ে কিছু বাড়িয়ে বলা চাপাবাজি থাকে, মোদির ভারত বিরাট পরাশক্তি আর ভারত বাংলাদেশের জন্য একটা ডোনার কান্ট্রি- এসব কথা কি ভারতের সাংবাদিকদের বিশ্বাস করা-না-করা ফেলে যাচাই ও ফ্যাক্ট জেনে রাখা তাদের দায়িত্ব নয়? কিন্তু দ্য হিন্দু’র সুহাসিনী হায়দার বা কল্লোল ভট্টাচার্য বা একালে দ্য প্রিন্টের নয়নিমা বসু এরা যেন নিজেই নিজের ফাঁদ থেকে বের হতে পারতে চান না। তাদের কে বের করবে? এরা ভারতকে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো ঋণদাতা ডোনার কান্ট্রি বানিয়ে ছেড়েছেন। ভারত কিসের ডোনার?
মফস্বলের কোনো পৌরসভায় চাপকল সরবরাহ করেছে, রাজশাহীতে ভারত তিন লাখ টাকা বৃত্তি দিয়েছে বা এক প্রাইভেট কলেজের দোতলায় চার-পাঁচটা ঘর তুলে দিয়েছে ইত্যাদি। এসব হলো নাকি বাংলাদেশে ভারতের ‘উন্নয়ন কর্মসূচি’। অথচ আসাম-ত্রিপুরা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যে করিডোর সুবিধা নিচ্ছে এর জন্য অবকাঠামোর ঋণ বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে নিজের জনগণকে বন্ধক রেখে নিয়েছে। যাদের নিজ করিডোরের অর্থনৈতিক দায় ও খরচ বইবার মুরোদ নেই তারা নাকি ঋণদাতা! পদ্মা সেতু এবং সেতুর রেল ব্যবহার করে ভারত কলকাতা-আগরতলা যোগাযোগ শক্ত করবে।
এরা ঠিকাদার আরা ঋণদাতাকে এক মনে করে থাকেন। বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্প ভারতকে চীনের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখতে চায়, কাজ পেতে চায়। এরা ঠিকাদার আর ঋণদাতা চীনের এই দুই ভূমিকাকে গুলিয়ে ফেলে একাকার করে দেখেন। আর ভাবেন, এটা আসলে কেবল চীনের ঠিকাদারি ভূমিকা। তাই ভারতকে চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো কোম্পানি মনে করেন। কিন্তু বুঝতেই পারেন না, চীন যদি ঋণদাতার ভূমিকাতে নাই থাকে তাহলে আর ঠিকাদারের দরকার কী?
তবে চীন ২০১৬ সালের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশে কেবল ঠিকাদার ছিল। আর ২০১৬ সাল থেকে ঋণদাতা হয়ে গেছে যাতে মাত্র তিন বছরে ঋণ বিতরণ করেছে ২৬ বিলিয়ন ডলারের যেখানে প্রতিশ্রুতি ছিল ২০ বিলিয়ন ডলারের। এটা কত পরিমাণ অর্থ এর একটা ধারণা দেয়া যাক। এর আগে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া অবকাঠামো ঋণ; ধরা যাক ১৯৯১ সালের কথা। আমরা তিন বছরে এক বিলিয়ন মানে, বছরে ৩৩৩ মিলিয়নের মতো পেলেই মনে করতাম যথেষ্ট ঋণ পেয়েছি। আর এ বছরগুলোতে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি দেখা দেবে না। সুতরাং আমাদের তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানেরা সন্তুষ্ট থাকতেন। আর এখন চীনা ঋণ তিন বছরে ২৬ বিলিয়ন, মানে গড়ে বছরে আট বিলিয়নের বেশি। অথচ ভারতীয় সাংবাদিকরা ভাবছেন, বাংলাদেশে ভারত চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী দাতা দেশ হয়ে গেছে।
আমাদের সরকারের এক বিগেস্ট মিস্টেক হলো ২০১৪ সালে, ভারতের সমর্থন ছাড়া ক্ষমতায় থাকা অসম্ভব ভেবেছিল। ফলে ভারতের সমর্থনটাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভেবেছে। সেই অভ্যাসে ২০১৮ সালেও ভারত এ সরকারকেই সমর্থন দিক, এটা চাইতে গিয়েছিল; কিন্তু ‘জ্ঞানী’ ভারতীয়রা চিন্তায় পড়ে যায় যে, যার পাবলিক রেটিং-ই নেই সেই ব্যক্তি আবার পরের নির্বাচনে জিতে আসবেন কী করে? এই চিন্তা করে বাংলাদেশের অনুরোধ তারা রাখেনি। ঘটনা হলো, ভারতের খুবই দক্ষ গোয়েন্দা বিভাগ বুঝেইনি যে, নিশীথ ভোটের সাথে রেটিংয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।
সরকার তাই ২০১৯ সালে নিশীথ ভোটে বিজয়ী হয়ে শুরু থেকেই ভারতনির্ভরতা উপেক্ষা করে চীনের দিকে ঘনিষ্ঠতার নীতি নিয়েছিল। ‘সামআপ’ করে বললে, বাংলাদেশে কেউ ক্ষমতায় থাকতে হলে তাকে ভারতের সমর্থন পেতেই হবে- এটা কোনো ইস্যুই ছিল না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গত চার বছরের নীতির পরোক্ষ কারণে এই অবস্থাটা তৈরি হয়েছিল। আর তাই এবার নির্বাচনের পর থেকে শেখ হাসিনার সাহস করে চীনের পক্ষে ও সাথে দাঁড়ানো।
আবার এর মানে ভারতকে এতিম করে দেয়া নয় বা যা আগে দিয়েছে, তা কেড়ে নেয়া নয়। কিন্তু নতুন কমিটমেন্ট দেয়া হবে না, কোনো নতুন নির্ভরতার সম্পর্ক হওয়ার কথা না।
আর এর ফাঁকে, চীন নিজেকে বাংলাদেশের সাথে তার সম্পর্ক, বিভিন্ন প্রকল্প ইতোমধ্যে রিভিউ করে নিয়েছে। তাই আবার নতুন অবকাঠামো ঋণ দিতে চীন রেডি। সাথে এবার চীন কিছু হোমওয়ার্কও করে এসেছে।
তিস্তা প্রসঙ্গ
ভারত যে বাংলাদেশকে তিস্তার তেমন কোনো কিছুই দেবে না- সেটি ২০০৯ সালের আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। পানি টেনে নিয়ে গিয়ে যেখানে যা নেয়ার তা করা হয়ে গিয়েছিল। সেখানে আর কোনো দিন ভারতকে হাত লাগাতে হবে না। তবু প্রণব মুখার্জি তিস্তা চুক্তি করবেন বলে বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন হাসিনা সরকারের সাথে একটা চুক্তি সই করতে যার কোনো বাস্তবায়ন মূলত ভারত কোনো দিন করবে না। মমতা দোষ দেবেন কেন্দ্রকে আর কেন্দ্র দোষ দেবে মমতাকে- এভাবেই পার করে দেয়া হবে সময়।
এ কারণে ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের নির্ধারিত ঢাকা সফরের তিন দিন আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব কলকাতায় সফরে যান। গিয়ে মমতাকে জানান, তিনি যেন কোনো আপত্তি না তোলেন তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে। কারণ তাকে বাংলাদেশকে ‘কোনো পানি দিতে হবে না’। কিন্তু মমতা বলেন, এই অসততার চুক্তি করতে তিনি মনমোহনের সাথে বাংলাদেশে যাবেন না। এমন কাজে তিনি সম্পৃক্ত হতে অপারগতা জানান। আর সেখান থেকেই সব দায় মমতার উপরে চাপিয়ে কংগ্রেস সরকার দায় সারে।
চীন এ বিষয়ে পুরোটাই ওয়াকিবহাল। তাই সে বাংলাদেশকে প্রকল্প সাহায্য দিয়ে হাত বাড়িয়েছে। আর স্বভাবতই এই প্রকল্প বাই ডিফল্ট ভারতবিরোধী এবং বাংলাদেশে জনপ্রিয় হবে আর ভারতীয় চাতুর্যকে আরো ভালো করে সামনে তুলে ধরবে। এগুলো চীনের হোমওয়ার্ক বা পুরনো প্রকল্প রিভিউ। অর্থাৎ এভাবে প্রায় আরো নয়টা নতুন প্রকল্প নিয়ে চীন আগাচ্ছে যাদের মোট মূল্য ৬.৪ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা ‘উন্নয়ন-ই’ দিতে গেলে, নিজের কর্মীদের খাওয়াতে গেলে, চীনই তাদের একমাত্র ভরসা।
ঢাকার কোনো কোনো রিপোর্টে চীনের এই ‘নতুনভাবে’ হাজির হওয়াটাকে চীনের বাংলাদেশে শুধু অর্থনীতির ক্ষেত্রে নয়, রাজনীতির ক্ষেত্রেও জড়িয়ে পড়া বলে দাবি করা হয়েছে। তবে এটা একেবারেই ওভার-রিডিং বলে মনে করার কারণ আছে। এ ছাড়া অনেকে আবার এখানে ভারতের প্রভাব এবং তা ও আবার একচেটিয়া প্রভাব ছিল বলে অনুমান করে থাকেন। এ ধরনের অনুমানও ভিত্তিহীন।
এক কথায় বললে, প্রথমত চীনের বাংলাদেশে ‘রাজনৈতিকভাবে জড়িয়ে পড়া’ কথাটার কোনো ভিত্তি নেই, এ জন্য যে, চীনের রাজনৈতিক ভূমিকা মানে কী- কোন টাইপের রাজনীতি? যেমন আমেরিকান টাইপ হলে এর মানে হলো হিউম্যান রাইটস সুরক্ষা করতে হবে এবং প্লুরালিজম চর্চা করতে হবে- এরকম? কথা এরকম চিন্তা করে বলতে হবে। চীনের এখনো এমন কোনো বিশেষ টাইপের রাজনীতি নেই। মূল কারণ, হিউম্যান রাইটস এখনো কমিউনিস্টদের চিন্তার সাথে কম্পিটিবল বলে মনে করা হয় না।
তবে কি চীনের রাজনীতি মানে আমাদের দেশে সুনির্দিষ্ট কোনো দলের প্রতি আগ্রহ? সে সুযোগও নেই। কারণ যে চীন গ্লোবাল নেতা হতে চায়, সে কেবল একটা নির্দিষ্ট দলের পক্ষে দাঁড়াতে পারে না। এটা আত্মঘাতী কারণ, চীনকে সবার নেতা হতে হবে।
আর ওদিকে আমেরিকার নেতৃত্বের জমানায় এশিয়ায় ভারতের কখনো একচেটিয়া প্রভাব ছিল বলে অনুমান- এসব কথা অমূলক। খুব সম্ভবত তারা ভারতের একালে চীন ঠেকানোর ‘ক্ষেপ’ নেয়ার কথা মনে রেখে এগুলো বলছেন। সেগুলো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। ভারতও সেই আগের মতোই গুরুত্বহীন আম-ভারত হয়ে গেছে। কারণ, এতে আমেরিকার কড়া এক আক্কেল হয়ে গেছে। কারণ তাকেই সব স্বার্থলাভের বাইরে রেখে ঢাকা-দিল্লি রুল করে গেছে। এ দিকে আমেরিকার বিশ্বাসযোগ্যতাও নষ্ট হয়েছে প্রচুর। টিআইবি, আর সুলতানা কামালরা মিলে এখন এন্টি-ইন্ডিয়ান। তারা এখন অভিযোগ করেছেন সবাই নাকি কয়লা বিদ্যুৎ করে পরিবেশ নষ্ট করছেন। তা ভালো। কিন্তু ভাসুরের নাম নেন না কেন? দোষ ধরেন চীন আর ভারতের। জাপান আর আড়ালে কি মাতারবাড়িতে আমেরিকা নেই? কাজেই, এতে হবে না। ফ্রেশ সৎ ইমেজ লাগবে।
তবে আগামীতে মানে নভেম্বরের পরে এবং জানুয়ারি থেকে আমেরিকা আবার নিজের গ্লোবাল ভূমিকা ফিরে পেতে চেষ্টা করবে। তা কতটা ফিরে পাবে তা দেখতে হবে। তবে আগামী দিনে আমেরিকার বগলে ভারতকে দেখা যাবে না খুব সম্ভবত।
আর ভারত? বাংলাদেশে ভারতের দিন শুকিয়ে গেল। মনে হচ্ছে সরকারের মোহ কেটে গেছে। তাহলে কি একটা পর্বের সমাপ্তি ঘটল?
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com