কারা স্থান পাচ্ছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগে?
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ - ছবি : সংগৃহীত
নতুন-পুরান মিশেলে গঠন করা হচ্ছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। কমিটির খসড়া তালিকা গত মার্চে দলীয় প্রধানের হাতে জমা দিয়েছে উত্তর আওয়ামী লীগ। করোনা পরিস্থিতির জন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার কাজ এত দিন আটকে ছিল। আগের থেকে মানুষের জীবন-জীবিকা এখন সচলের দিকে ধাবমান। ফলে আগামী মাসে উত্তরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। তারা এখনো যাচাই বাছাইয়ের কাজটিই শেষ করতে পারেনি। যদিও আগামী মাসে খসড়া তালিকা জমা দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, গত কমিটিতে নিষ্ক্রিয় থাকা, দলীয় পদবি ব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন, থানা-ওয়ার্ড কমিটি গঠনে বাণিজ্যসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথে যেসব নেতা জড়িত ছিলেন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এবার কোনোভাবেই তাদের ঠাঁই হচ্ছে না। দুই মহানগরে গত কমিটির অন্তত বিতর্কিত অর্ধশতাধিক নেতা বাদ পড়ছেন। ইতোমধ্যে দলীয় প্রধানের কাছে ৭১ সদস্য দেয়ার কথা থাকলেও কয়েকজনের নাম বেশি যুক্ত করে চূড়ান্ত খসড়া তালিকা জমা দিয়েছে উত্তর আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রধানের বোঝার সুবিধার্থে নামের পাশে সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও তুলে ধরা হয়েছে।
ওই তালিকায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশের মতো নতুন মুখ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী, যুব মহিলা লীগ ও বিভিন্ন থানার যোগ্য, দক্ষ ও সক্রিয় নেতা। আর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এখনো যাচাই বাছাইয়ের কাজই শেষ করতে পারেনি। গত বছরের ৩০ নভেম্বর দুই মহানগরে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উত্তরে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ মো: বজলুর রহমান ও এস এম মান্নান কচি এবং দক্ষিণে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আবু আহমেদ মন্নাফী ও মো: হুমায়ুন কবির নির্বাচিত হন।
নতুন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরই দুই মহানগর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার লক্ষ্যে জীবনবৃত্তান্ত জমা নেন। তারই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ আওয়ামী লীগ প্রাথমিকভাবে একটি খসড়ার চিন্তাভাবনা করে রেখেছে। কিন্তু ওই খসড়া আর চূড়ান্ত করতে পারেনি। তবে গত কমিটিতে যারা ছিলেন এর মধ্যে ৯ জন সহসভাপতির মধ্যে দুইজন মারা গেছেন, দুই সহসভাপতি নতুন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন এবং আরেকজন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ফলে বাদ পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। দলীয় পদবি ব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে থেকে বাণিজ্য, থানা-ওয়ার্ড কমিটি গঠনে বাণিজ্য ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হওয়াসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তিনজন যুগ্ম সম্পাদকের মধ্যে দুইজন, তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে একজন এবং অন্যান্য ২০ জন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে নিষ্ক্রিয় ১০ জন বাদ পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
গত কমিটিতে ৩৪ জন কার্যনির্বাহী সদস্যের মধ্যে দু’টি পদ শূন্য ছিল। ৩২ জন কার্যনির্বাহী সদস্যের মধ্যে নিষ্ক্রিয় ১০-১২ জন বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই সব নিষ্ক্রিয় ও বিতর্কিত নেতাদের স্থলে সাবেক তরুণ ও সক্রিয় ছাত্রনেতা, বিভিন্ন থানার সক্রিয় ও যোগ্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন এমন আভাস পাওয়া গেছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: হুমায়ুন কবির নয়া দিগন্তকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য কাজ শুরু করেছিলাম। করোনা পরিস্থিতির জন্য আটকে গেছে। এখন জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। যদিও এ মাসে হবে না। আগস্ট হলো শোকের মাস। আগামী মাসে আমরা সম্পন্ন করার চেষ্টা করব। যাচাই-বাছাই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যাচাই বাছাই শেষ হয়নি। প্রাথমিকভাবে আমরা একটা চিন্তাভাবনা করে রেখেছি। বসলেই সেগুলো চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মো: বজলুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, গত মার্চে আমরা নেত্রীর হাতে পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া জমা দিয়েছি। করোনা পরিস্থিতির জন্য আমরা আর সামনে এগোতে পারিনি। এখন মানুষের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক হয়ে আসছে, সব কিছু সচল হচ্ছে। রাজনীতিও সচল করতে হবে। তিনি বলেন, আগামী মাসের প্রথম দিকে নেত্রীর সাথে দেখা করার ইচ্ছা রয়েছে। আশা করছি, ওই সময় পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আগের কমিটির যারা নিষ্ক্রিয় ও বিতর্কিত তারা বাদ পড়ছেন। ওই জায়গায় সাবেক তরুণ ও সক্রিয় ছাত্রনেতা, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন থানার সক্রিয় নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রায় ১৩ বছর পর ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল প্রথম ঢাকা সিটির আদলে আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রাণ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করে দু’টি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এ কে এম রহমাতল্লাহ ও সাদেক খান এবং দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হাজী আবুল হাসনাত ও শাহে আলম মুরাদ। ওই সময় নানা বিতর্কে জড়িয়ে পদ হারান অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। আর সভাপতি এম এ আজিজ মৃত্যুবরণ করায় দক্ষিণে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয় আবুল হাসনাতকে। এরপর গত ৩০ নভেম্বর ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে নানা বিতর্কে জড়িয়ে দুই মহানগরের চারজনই পদ হারান। ওই চারটি পদেই নতুন মুখ তুলে এনেছে আওয়ামী লীগ।