যেভাবে আমিরাতের নিন্দা করলেন ফিলিস্তিনি গ্রান্ড মুফতি
যেভাবে আমিরাতের নিন্দা করলেন ফিলিস্তিনি গ্রান্ড মুফতি - প্রতীকী ছবি
পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শুধুমাত্র ফিলিস্তিন বা ফিলিস্তিনি নাগরিকদের জন্য নয়। এটা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর সম্পদ। মহানবী সা.-এর উম্মত হিসেবে সব মুসলিমই পবিত্র মসজিদুল আকসার পৃষ্ঠপোষক, তত্ত্বাবধায়ক ও অভিভাবক। কিন্তু ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তি করার পর বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ ও নামাজ আদায়ের অধিকার হারাল সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তাদের নাগরিকরা।
শুক্রবার এই ফাতোয়া দিয়ে ফিলিস্তিনি গ্রান্ড মুফতি শায়খ মুহাম্মদ হুসেন বলেন, মুসলিম উম্মাহর প্রথম কিবলা ও বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ইসলামি ঐতিহ্যবাহী ইবাদাতগাহ মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাসে আমিরাতের নাগরিকদের প্রবেশ ও নামাজ আদায় নিষিদ্ধ (হারাম) করা হলো।
তবে তিনি একথাও বলেন যে, আমিরাতের বেশির ভাগ নাগরিক ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তির পক্ষে নয়। আমেরিকা-ইসরাইলের পদলেহন করে নিজেদের গদি বাঁচিয়ে অঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার ও অস্তিত্বের তাগিদে এই চুক্তি করেছে আমিরাতের রাজতান্ত্রিক সরকার। বুজুর্গ মুফতি আরো বলেন, ইসরাইলের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনকারীরা আল-কুদস ও মসজিদুল আকসাকে ইহুদি ও জায়নবাদীদের হাতে তুলে দিতে চায়।
ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্প্রতি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ইসরাইলের সাথে কয়েক বছর ধরে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পর অবশেষে চূড়ান্তভাবে একটি আনুষ্ঠানিক ‘শান্তি চুক্তিতে’ উপনীত হয়েছে। এর ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে দুই দেশের মধ্যে একটি কৌশলগত সম্পর্ক তৈরির পথ খুলে গেল।
গত চার বছর ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের ওপর যে হামলা চালিয়ে আসছিলেন- এই চুক্তির মাধ্যমে তাদেরকেই পুরস্কৃত করা হলো। এই চুক্তি স্বাক্ষর এবং এর বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়ার মাধ্যমে নেতানিয়াহুর কোয়ালিশন সরকারকেই যেন শক্তিশালী করা হলো। এর মাধ্যমে ইসরাইলের দখলদারিত্বকে আরো গভীর এবং আরবের স্বৈরাচারী শাসকদের সাথে ইসরাইলের জোটবদ্ধ হওয়াকে আরো জোরদার করা হলো। এ দিকে পশ্চিমা মিডিয়ায় কথিত এই শান্তি চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ সাফল্য বলে স্বাগত জানানো হয়েছে। অপর দিকে ইউএই নেতৃবৃন্দ ইসরাইলের আরব ভূমি জবর দখল বন্ধ করার অছিলায়, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্য পূরণের সহায়তা প্রদানের জন্য এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যেই ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের এই চুক্তি করা হয়েছে বলে সাফাই গাইছেন।
আমিরাতের কাছে এফ-৩৫ বিক্রি চায় না ইসরাইল
ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তিতে উপনীত হওয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওপর বেজায় খুশি যুক্তরাষ্ট্র। ওই চুক্তির পুরস্কার হিসেবে আমিরাতকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তার দেশ আমিরাতের কাছে এফ-৩৫ বিক্রির যেকোনো উদ্যোগের বিরোধিতা করবে।
ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সাথে ব্যাপকভিত্তিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সম্মত হওয়ার পরই আমিরাতের কাছে এসব যুদ্ধবিমান বিক্রিতে সম্মত হয় হোয়াইট হাউজ। বুধবার সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ট্রাম্প নিজেই এর ইঙ্গিত দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত লকহিড মার্টিন করপোরেশনের তৈরি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে আগ্রহী। ইসরাইল আগে থেকেই এটি ব্যবহার করে আসছে। এখন আমিরাতের আগ্রহের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
আমিরাতের কাছে ব্যয়বহুল এসব যুদ্ধবিমান বিক্রিতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ থাকলেও এ নিয়ে মিত্র ইসরাইলের বিরোধিতার মুখে পড়তে হচ্ছে দেশটিকে। আমিরাত ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখার মরিয়া চেষ্টা চালালেও দেশটিতে অত্যাধুনিক মার্কিন যুদ্ধবিমান পাঠানোর তীব্র বিরোধিতা করেছে ইসরাইল। দুই দেশের চুক্তির পরও মঙ্গলবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রকাশ্যেই এ উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল, ইসরাইলের সাথে আমিরাতের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ায় দেশটিতে মার্কিন অস্ত্র বিক্রির সুযোগ আরো বাড়বে।
সূত্র : রয়টার্স, পূবের কলম