জাতীয় দলের ফুটবলার এখন সিএনজি-চালক

রফিকুল হায়দার ফরহাদ | Aug 21, 2020 09:52 pm
জাতীয় দলের ফুটবলার এখন সিএনজি-চালক

জাতীয় দলের ফুটবলার এখন সিএনজি-চালক - ছবি : সংগৃহীত

 

‘ভাই জীবনে কোনো দিন ভাবিনি সিএনজি চালিয়ে জীবন চালাতে হবে। হওয়ার কথা ছিল অনেক টাকার মালিক। অথচ এখন সংসারের ঘানি টানতে চালাতে হচ্ছে সিএনজি’। দুঃখ ভারাক্রান্ত কন্ঠে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললেন জি এম মামুন।

২০০৭ সালে বাংলাদেশের ফুটবলে যুগান্তকারী এক ঘটনা ঘটে। একই সময়ে দুই জাতীয় দলকে পাঠানো হয় বিদেশে। একটি সৈয়দ নইমুদ্দিনের অধীনে ভারতের নেহেরু কাপে। অন্যটি হাসানুজ্জামান বাবলুর কোচিংয়ে খেলতে যায় মালয়েশিয়ার মারদেকা কাপে। সেই মারদেকা কাপে বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন জি এম মামুন। ওই বছরই প্রথম পেশাদার লিগে ঢাকা আবাহনীর, মোহামেডান ও মুক্তিযোদ্ধার বিপক্ষে খুলনা আবাহনীর জয়ের নায়ক তিনি। মুক্তিযোদ্ধার পাঁচজনকে কাটিয়ে গোল করার পরই নইমুদ্দিনের নজরে পড়েন তিনি। এরপর ২০১০ সালে সকার ক্লাব ফেনীর অনুশীলনে হাঁটুতে ছোট পাওয়ার পর আর ফিরতে পারেননি ফুটবলে। সেই প্রচন্ড ধাক্কার পরই আজ মামুন সিএনজি ড্রাইভার। ভাড়ায় চালানো এই বাহন থেকে দিনে যে ৪/৫ শত টাকা পান তা দিয়েই স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে কষ্টে চলছে মামুনের জীবন।

‘আগে আমার টাকায় সংসার চলত। তিন ভাই এর মধ্যে আমিই ছিলাম পরিবারের সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জনকারী। আমার টাকায় বাবার নামে জায়গা জমি কেনা হতো। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর অন্য দুই ভাই আর আমার পাশে দাঁড়ায়নি। এক ভাই ডাক্তার। অন্যজন থাকে বিদেশে। তারা সামান্য পরিমাণ টাকাও সাহায্য করে না। এই দুঃখের কথা কাকে বলবো।’ বলেন মামুন।

২০০৪ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবলে ওয়ারীর হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া এই স্ট্রাইকার বলেন, ইনজুরিতে পড়ে খেলা ছাড়ার পর মুদি দোকান দিয়েছিলাম। তাতে তেমন লাভ না হওয়ায় পরে ইজিবাইক কিনে তা চালিয়ে জীবন চলছিল। পরে তা চুরি হয়ে যাওয়ায় এখন ভাড়ায় সিএনজি ( স্থানীয় নাম মহেন্দ্র) চালাই। ফুলতলা থেকে রুপসা রুটে চলে আমার এই বাহন। তথ্য দেন, ২০১১-এর মওসুমের জন্য আমাকে নিতে চেয়েছিল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। এই ক্লাবে খেললে আরো এগিয়ে যেতে পারতাম। পাল্টে যেত ফুটবল ক্যারিয়ারই। কিন্তু ইনজুরি সবই শেষ করে দিয়েছে।

দেশে করোনার শুরুর দিকে লক ডাউনের প্রবল প্রভাব পড়েছিল খুলনার ফুলতলাতেও। সে সময় সিএনজি চালাতেও পারছিলেন না মামুন। প্রচন্ড অর্থ কষ্টে পড়ি। তখন খুলনা খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে কিছু চাল ডাল কিনে দেয়া হয় আমাকে। জানালেন তিনি। কষ্টের সাথে আরো বলেন, ‘আগে যাদের সাথে বসে আড্ডা দিতাম তারা এখন আমার এই জীবন দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। না চেনার ভান করে।’

অবশ্য এই কষ্টের মধ্যেও ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা সামান্যতমও কমেনি জি এম মামুনের। ২০১০ সালেই খুলনার ফুলতলাকে চালু করেছেন ফুলতলা ফুটবল অ্যাকাডেমী। সেই অ্যাকাডেমীর ফুটবলার আসিফ শেখ খেলেছেন বাসাবো তরুণ সংঘে। চট্টগ্রাম লিগে খেলা সুজন ডাক পেয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৬ জাতীয় দলের ক্যাম্পে। এখন এক বেলা সিএনজি চালান। আর বিকেলে অ্যাকাডেমীতে সময় দেন।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us