ভারতেও ট্রায়ালের আগেই টিকার ছাড়পত্র!
ভারতেও ট্রায়ালের আগেই টিকার ছাড়পত্র! - ছবি : সংগৃহীত
গত মাসের গোড়ার কথা। হইচই ফেলে দিয়েছিল ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)-এর ডিজি বলরাম ভার্গবের এক পাতার একটি সরকারি চিঠি। সাময়িক ভাবে জল্পনা ছড়ায়, স্বাধীনতা দিবসেই কি তা হলে লালকেল্লা থেকে কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক আবিষ্কারের সুখবর দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি! ওই চিঠির পরেই অবশ্য ভারতজোড়া বিতর্ক বাধে। ১৫ অগস্টে মোদিও কোনো ‘চমক’ দেননি। কিন্তু সেই ভার্গবেরই একটি নতুন মন্তব্য নিয়ে ফের শুরু হয়েছে বিতর্ক। এ বার তিনি জানিয়েছেন— ভারতে তৈরি দুই সম্ভাব্য প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল প্রায় শেষ। সরকার চাইলে এখনই জরুরি ভিত্তিতে তাদের ছাড়পত্র দিতে পারে। বিশেষ সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই এই খবর দিয়েছে।
পিটিআই সূত্রের দাবি, বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভার্গব। ওই বৈঠকে হাজির থাকা এক এমপি তাদের জানিয়েছেন, ভার্গবকে বৈঠকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কত দিন অতিমারি পরিস্থিতিতে থাকতে হবে মানুষকে? জবাবে আইসিএমআর-এর ডিজি জানান, দেশে তৈরি দু’টি সম্ভাব্য প্রতিষেধকের দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল প্রায় শেষ। সাধারণত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় বা চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষা শেষ হতে ন্যূনতম ৬ থেকে ৯ মাস লাগে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে জরুরি ভিত্তিতে (ইমার্জেন্সি অথরাইজেশন) ছাড়পত্র দেয়ার কথা ভাবতে পারে।
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ আনন্দ শর্মার নেতৃত্বে চার ঘণ্টা ধরে চলে বৈঠকটি। করোনা-পরিস্থিতির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। ভার্গবের ওই মন্তব্যে অনেকেরই প্রশ্ন, সত্যিই কি ট্রায়াল সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই ভ্যাকসিনে ছাড়পত্র দিয়ে দেবে সরকার? নাকি, আইসিএমআরের মাধ্যমে এমন আশ্বাস দিয়ে আখেরে বিহারের আসন্ন ভোটে ফায়দা তুলতে চাইছে মোদি সরকার। কারো কারো বক্তব্য, করোনা পরিস্থিতিতে বেহাল অর্থনীতি নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনা হয়েছে মোদি সরকারের। এখন টিকা বাজারে আসার বিষয়ে নির্দিষ্ট আশ্বাস মিললে শেয়ার বাজার চাঙ্গা হবে। লগ্নিকারীদের মনোবল বাড়বে। অক্টোবর-নভেম্বর থেকে আগামী বছরের শুরু পর্যন্ত উৎসবের মরসুম। তার আগে সত্যিই কোনো সুখবর এলে বিক্রিবাটা বাড়বে। জোরদার হবে বাজার।
এ সব প্রশ্ন ওঠার কারণ একটাই— তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এতে দেড়-দু’হাজার মানুষের উপরে সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের প্রভাব পরীক্ষা করা হয়। খতিয়ে দেখা হয় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও। অনেকেরই বিস্মিত প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ তো রাশিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ!’’ গত ১১ অগস্ট রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেন, করোনার প্রতিষেধক তৈরি করে ফেলেছেন তারা। নাম ‘স্পুটনিক ভি’।
কিন্তু ঘণ্টা কয়েক পরে এক রুশ মন্ত্রীর বিবৃতিতে জানা যায়, তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল তখনো শুরু হয়নি। অর্থাৎ ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই ভ্যাকসিনটির নথিভুক্তির ছাড়পত্র দিয়ে ফেলেছে রুশ সরকার। যদিও ওই ভ্যাকসিনের নির্মাতা গামালিয়া ইনস্টিটিউটের এক ডিরেক্টর আজ জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে রাশিয়ার ৪৫টি কেন্দ্রে ৪০ হাজার মানুষের উপরে ‘স্পুটনিক ভি’ পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করা হবে। বিদেশি গবেষকদের নজরদারিতেই তা করা হবে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, রাশিয়া বৃহস্পতিবারই জানিয়েছে, ‘স্পুটনিক ভি’ তৈরির ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চায় তারা। রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের সিইও কিরিল দিমিত্রিয়েভ বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, ভারত এটি তৈরি করতে সক্ষম। এই ধরনের যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমেই চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।’’
টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে, এমন কেন্দ্রগুলোকে গত ২ জুলাই ভার্গবের লেখা একটি চিঠি ঘিরে বিতর্ক বেধেছিল। চিঠিতে তিনি বলেছিলেন, সম্ভাব্য প্রতিষেধকটির ফাস্ট-ট্র্যাক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সারতে হবে। কারণ ১৫ অগস্টের মধ্যে টিকা তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দেশের গবেষক মহল সেই সময়েই বলেছিল, এ ভাবে ঘাড়ে বন্দুক রেখে গবেষণা হয় না। এর পরে কিছুটা থিতিয়ে গিয়েছিল বিষয়টি। বিরোধীদের অভিযোগ, বিজ্ঞানীরা বারবার সতর্ক করলেও দ্রুত টিকা আনার জন্য তাদের লাগাতার চাপ দেয়া হচ্ছে। সম্ভবত তারই ছায়া দেখা যাচ্ছে ভার্গবের বিভিন্ন মন্তব্যে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা