টনসিলে ইনফেকশন : কিভাবে বুঝবেন, কী করবেন

ডা: মো. আব্দুল হাফিজ শাফী | Aug 19, 2020 02:03 pm
টনসিলে ইনফেকশন

টনসিলে ইনফেকশন - ছবি : সংগৃহীত

 

টনসিল এক ধরনের লসিকাগ্রন্থি বা লিস্ফয়েড টিস্যু। এতে কোনো প্রকার ইনফেকশন বা প্রদাহ হলে আমরা এটাকে টনসিলাইটিস বলি। মানবদেহে গলার ভিতরে দুই পাশে একজোড়া টনসিল থাকে, টনসিলের প্রদাহ বলতে আমরা এর ইনফেকশনকেই বুঝে থাকি। টনসিলের ইনফেকশন একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। শীতে বাড়ে টনসিল। টনসিলাইটিস সাধারণত ৩ থেকে ১৪ বছরের শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

তবে বড়দের ক্ষেত্রে যে একেবারেই হয় না, তা কিন্তু নয়। টনসিল ইনফেকশনের জন্য ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া উভয়ই দায়ী। ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে প্রধানত বিটা হেমোলাইটিক স্ট্রেপ্টোক্কাস দিয়ে হয়। এই ইনফেকশনের অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে বার বার ঠাণ্ডা সর্দি লাগা, পুষ্টিহীনতা, পরিবেশ দূষণ, দেহে অপর্যাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানীয় আসক্তি ও আবহাওয়ার পরিবর্তন।


লক্ষণ দেখে কিভাবে টনসিল ইনফেকশন বুঝবেন :

ষ গলা ব্যথা এবং সাথে খাবার গিলতে সমস্যা হতে পারে এবং শরীরে ক্লান্তি ভাব থাকে।
ষ জ্বর ১০২ ডিগ্রি-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। সাথে মাথা ব্যথা ও বমির ভাব থাকতে পারে।
ষ গলার সাথে কানের সম্পর্ক রয়েছে। কানে ব্যথা থাকবে এবং গায়ে ব্যথা হতে পারে।
ষ শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় মুখ দিয়ে লালা পড়তে দেখা যায়।

এই রকম সমস্যাকে আমরা তীব্র ইনফেকশন বলে থাকি। চিকিৎসকের দেয়া উপদেশ মেনে চললে এবং সঠিক সময়ে নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে টনসিলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সাধারণত এন্টিবায়োটিক, মাউথওয়াশ, ব্যথার ওষুধ, এন্টিহিস্টামিন ও প্রচুর পরিমাণে পানি পানের মাধ্যমে এই ইনফেকশনের চিকিৎসা করা হয়। তবে কেউ যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ না করে এবং চিকিৎসকের উপদেশ মেনে না চলে তবে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হয়ে থাকে, যাকে আমরা দীর্ঘমেয়াদি টনসিলে ইনফেকশন বলে থাকি। চিকিৎসা শাস্ত্রে দীর্ঘ মেয়াদি টনসিলে ইনফেকশনকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, তবে এই দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন যদি বছরে চার-পাঁচবার করে পরপর দুই বছর হয়, তবে অসুস্থ টনসিল অপারেশন করিয়ে নেয়াই ভালো।
দীর্ঘমেয়াদি টনসিলের ইনফেকশন থাকলে অপারেশন না করালে নিচের সমস্যাগুলো হতে পারে :

ষ টনসিলের ইনফেকশন চারপাশে ছড়িয়ে টনসিলে পুঁজ জমে ফোড়া হতে পারে 
ষ টনসিল বড় হয়ে শ্বাস নেয়ার পথ বন্ধ করে দিলে শ্বাসকষ্টও হতে পারে।
এ ছাড়া বড় টনসিলের কারণে খাবার গিলতে গেলে কষ্ট হতে পারে।
ষ ঘন ঘন ঠাণ্ডা লাগা থেকে কানে ইনফেকশন হতে পারে।
ষ বাতজ্বর হতে পারে।
ষ রক্তের মাধ্যমে টনসিলের জীবাণু কিডনিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ষ বয়স্কদের ক্ষেত্রে একদিকের টনসিল বড় থাকলে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ থাকলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এই ধরনের সমস্যা অবহেলা করা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধের মাধ্যমে যদি সমাধান না হয়, তবে টনসিল অপারেশন করানো ভালো এবং নিরাপদ।

আমাদের দেশে নিয়মিত টনসিল অপারেশন হচ্ছে। তবে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে ইএনটি সোসাইটি থেকে টনসিলের রুটিন অপারেশন যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে আশার কথা তীব্র ইনফেকশন প্রথমে হলে সে ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভালো ওষুধ সেবন, উপদেশ মতো ঠাণ্ডা এড়িয়ে চললে, কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করলে এবং লেবু চা-এর অভ্যাস করলে অপারেশনের টেবিলে যাওয়া থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

লেখক : বিসিএস (স্বাস্থ্য), নাক-কান-গলা বিভাগ, বিএসএমএমইউ (প্রেষণে), ঢাকা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us