আক্রান্ত হলে ৩ মাস দেহে থাকে করোনাভাইরাস?
আক্রান্ত হলে ৩ মাস দেহে থাকে করোনাভাইরাস? - ছবি : সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত আছে তবে ‘দাপট’ কমেছে। ধোঁয়াশার মতো শোনালেও আসলে বিষয়টা এটাই। প্রতি দিন লাখ লাখ লোক আক্রান্ত হচ্ছে এই ভাইরাসে। অবশ্য পাল্লা দিয়ে কিন্তু বাড়ছে সুস্থতার সংখ্যাও। ভ্যাকসিন আসেনি ঠিকই, কিন্তু প্রতিরোধ ক্ষমতা কিন্তু তৈরি হয়ে যাচ্ছে মানবদেহে। আর এই আবহেই এবার চমক জাগালো নয়া তথ্য।
মার্কিন মুলুকের বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন যে একবার কোনো ব্যক্তি যদি কোভিড ভাইরাসে আক্রান্ত হন সেক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার তার আর আক্রান্তের সম্ভাবনা প্রায় থাকে না। অন্তত এখন পর্যন্ত এমনটাই প্রমাণ পেয়েছে সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)।
কেন এমনটা হচ্ছে? বৈজ্ঞানিক কোনও ব্যাখ্যা আছে?
হ্যাঁ। দেখা গিয়েছে কোনো ব্যক্তি কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠলেও তার দেহে এই ভাইরাস খুব কম শক্তিশালী হলেও তিন মাস থেকে যাচ্ছে। এমনকী তিন মাসের মধ্যে যখন ফের একবার তার পরীক্ষা হচ্ছে তখন ধরাও পড়ছে। কিন্তু এটা কিন্তু নতুনভাবে আক্রান্ত হচ্ছে তা নয়। তবে আশার কথা এটাই যে ১৪ থেকে ১৬ দিন পর যখন কোভিড পজিটিভ রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন এরপর তার দেহে ভাইরাস থাকলেও সে ভাইরাস কিন্তু পরবর্তী তিন মাস অন্য কারুর দেহে সংক্রমিত হচ্ছে না।
সিডিসির তরফে জানা হয়, “সারস কোভ-২ ভাইরাসের পুনরায় আক্রমণ নিয়ে বিশদে কোনো খবর নেই। কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি যে এমনটাই হচ্ছে। তবে আমরা বাকি তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।” তবে আক্রান্ত হওয়ার পরবর্তী তিন মাসে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা তৈরি হচ্ছে সে বিষয়ে প্রামাণ্য কোনো যুক্তি দেয়া হয়নি সিডিসির পক্ষ থেকে। তবে যেহেতু এই ভাইরাস দেহে থেকে যাচ্ছে তাই নতুন করে আক্রান্ত কিন্তু হচ্ছে না। তাই তাদের মত কোনো ব্যক্তি সম্পূর্ণ করোনা মুক্ত কি না তা পরীক্ষা করতে হলে তিন মাস পরই করা উচিত।
মার্কিন মুলুকে করোনা নিয়ে সবরকম পরীক্ষানিরীক্ষার করার মাঝেই ফের নয়া নির্দেশিকা জারি হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “যারা করোনা আক্রান্ত কিন্তু খুব মৃদু উপসর্গ রয়েছে তাদের ১০ দিন আইসোলেশনে রেখে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু যাদের ক্ষেত্রে লক্ষণ খুব গুরুতর, তাদের কমপক্ষে ২০ দিন আইসোলেশনে রাখা উচিত।”
আরো সংক্রমক হয়ে উঠছে করোনভাইরাস
ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ফের চরিত্র বদল হলো নোভেল করোনাভাইরাসের। যেহেতু এই ভাইরাসের জিনের কাঠামো আরএনএ। তাই এদের মিউটেশন বা চারিত্রিক বদল খুব স্বাভাবিক। তবে এবার অবশ্য চরিত্র বদলে আরো সংক্রমক হয়ে উঠেছে করোনা ভাইরাস। কিন্তু জীবাণুর যে মারণ প্রভাব তা কমেছে। তাই এই চরিত্র বদলকে ‘ভালভাবেই’ দেখছে গবেষকমহল।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরের সিনিয়র কনসাল্টেন্ট তথা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ ইনফেকশিইয়াস ডিজিস-এর প্রধান পল ট্যামব্যাগ জানান যে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ‘D614G’ মিউটেশন হয়েছে ভাইরাসের এবং এর ফলে কমেছে মৃত্যু হার। পলের কথায়, এর থেকে এটাই বোঝা যাচ্ছে যে এর মারণ চরিত্র কমেছে।
সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে পল বলেন, “হয়তো এটা ভালো যে সংক্রমক হলেও চরিত্র বদলে এই ভাইরাস মারণ হয়ে উঠেছে না।” তার মতে এই ভাইরাস যতবার চরিত্র বদলেছে ততই এর মারণ ক্ষমতা কমেছে। তবে হ্যাঁ, যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকের মৃত্যু হচ্ছে কারণ সেই সকল রোগীদের দেহে হয়ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কম।
রোবারই এই তথ্য জানা গেছে। এর পর থেকে আরো সতর্ক হয়ে উঠেছে মালেসিয়া প্রশাসন। কারণ সিঙ্গাপুরের এক এজেন্সি জানিয়েছে যে সেই শহরেও কিন্তু পাওয়া গেছে এই চরিত্র বদলে যাওয়া করোনাকে। অর্থাৎ মৃত্যু সংখ্যা কম হলেও আক্রান্ত আরো বাড়ার দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে সদ্য প্রকাশিত এই গবেষণা।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস