ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর দাবার ঘুঁটি

মাসুম খলিলী | Aug 18, 2020 06:46 pm
ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর দাবার ঘুঁটি

ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর দাবার ঘুঁটি - ছবি : সংগৃহীত

 

ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার চুক্তি ঘোষণার সময়টিও বিভিন্ন প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। প্রথমত, সংযুক্ত আরব আমিরাত মনে হচ্ছে ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহু উভয়েরই হাতে খেলছে। উভয় নেতা তাদের দেশে কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যর্থ হওয়ার পরে তাদের নিজের দেশে রাজনৈতিকভাবে বেঁচে থাকার লড়াই করছেন। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ট্রাম্পের অক্ষমতা আমেরিকার অর্থনীতি এবং বেকারত্ব পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়। ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টির বিষয়ে রাজি হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু উভয়েরই রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে একটি লাইফলাইন দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহু উভয়ই ‘শতাব্দীর চুক্তির’ অংশ হিসেবে পশ্চিম তীরের ইসরাইলভুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করার কারণে বিব্রত অবস্থা থেকে তাদের বাঁচানোর চেষ্টাও এর মধ্যে থাকতে পারে।
তৃতীয়ত, সম্ভবত সংযুক্ত আরব আমিরাতকে এই অঞ্চলে আরো বৃহত্তর ভূমিকার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এটি আরব লীগ এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিল (জিসিসি) উভয়েরই ভূমিকাকে ছাড়িয়ে যাবে। আর এটি যে ইসরাইলের জন্য সম্পূরক ভূমিকা হবে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

চতুর্থত, এই মাসের শুরুর দিকে, দীর্ঘস্থায়ী আঞ্চলিক শত্রু ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবসহ বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক বিষয়ে বিরল আলোচনা করেছেন। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি ইরানের সাথে একটি চুক্তি করতে প্রস্তুত এবং সম্ভবত ইরান ও আমেরিকার মধ্যে একটি চুক্তি প্রত্যক্ষ করবে বিশ্ব। আশ্চর্যজনকভাবে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, বাহরাইন ও মিসর মে ২০১৬ সালে কাতার অবরোধ করেছিল কাতারের ইরানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করা, কাতার থেকে ইরানের সামরিক প্রতিনিধিদের বহিষ্কার করা এবং অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা সীমাবদ্ধ করার দাবিতে। শেষ অবধি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পারমাণবিক শক্তি ক্লাবে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত করার বিষয়টি এবং ইসরাইলের সাথে সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ হতে পারে খেলার মাঠের প্রস্তুতি।

আমিরাত এই মাসের শুরুর দিকে ঘোষণা করে যে, তারা বারাকাহ পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র সফলভাবে শুরু করেছে। এটি আরব বিশ্বে প্রথম এবং পারমাণবিক বিদ্যুতের লক্ষ্য অর্জনে দেশটির লক্ষণীয় পদক্ষেপ। এর সাথে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দানের সম্পর্ক থাকতে পারে।

তুরস্কের বিরুদ্ধে আরব ফ্রন্ট?
সাম্প্রতিক বছরগুলোর প্রবণতা হলো, অ-আরব মুসলিম দেশগুলো ক্ষমতা অর্জন করছে যখন আরব মুসলিম দেশগুলোর, বিশেষত উপসাগরীয় আরবদের (অর্থাৎ সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির প্রশাসনের অধীনে মিসর) প্রকৃত সক্ষমতা ভেঙে পড়ছে।

আরব দেশগুলো দ্রুত অমুসলিম পাশ্চাত্যের জিম্মায় নিয়ে চলে যাচ্ছে, জড়িয়ে পড়েছে আরো বেশি পশ্চিমা নিরাপত্তা সুরক্ষায়, আরো বেশি নির্ভরশীল সম্পর্ক তৈরি করছে তাদের সাথে।

ঠিক এ সময় অ-আরব মুসলিম দেশগুলো ইসলামী বিশ্বকে এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকারকে আরো দৃঢ়তার সাথে রক্ষার ভূমিকায় আসছে। এটি করছে এমন একসময় যখন আরব দেশগুলো উম্মাহর দাবি ও উত্তরাধিকার থেকে নিজেদের ক্রমাগতভাবে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এটি হচ্ছে ফিলিস্তিন কাশ্মির রোহিঙ্গা ইত্যাদি ইস্যুতে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্বাধীন নতুন ফ্রন্ট এটি স্পষ্টভাবে করছে এবং প্রকাশ্যে ইসলামী রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে পরিত্যাগ বা প্রত্যাখ্যান করছে।

অ-আরব মুসলিম দেশগুলো পশ্চিমের ‘সম্মুখ দেশ’ অবস্থানটিকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছে। একসময়, তুরস্ক, পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়া সোভিয়েত কমিউনিজমের বিরুদ্ধে ‘দক্ষিণ অঞ্চল’ গঠন করেছিল এবং পশ্চিমাদের স্বার্থ রক্ষা করেছিল। এই তিনটি দেশ তখন থেকেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। এখন এই দেশগুলো নিজস্ব একটি অবস্থান নির্মাণ করতে চাইছে।

তবে, যে দেশগুলোকে আমেরিকা, ইউরোপ এবং ইসরাইল হুমকিস্বরূপ মনে করে, তাদের বিরুদ্ধে আরব দেশগুলো, বিশেষত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করছে। মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে তারা পশ্চিমা শক্তির সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে চাইছে এবং অন্যদের প্রতি হুমকিপূর্ণ বার্তা প্রেরণ করছে।

অ-আরব মুসলিম দেশগুলো বিদেশী আক্রমণ মোকাবেলার প্রয়াস চালাচ্ছে আর আরব মুসলিম দেশগুলো তাদের অঞ্চলের মধ্যে লড়াই করছে আর এটি করার সময় তারা পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তা চাচ্ছে।
অ-আরব মুসলিম দেশগুলো যখন ভেতরে ও বাইরে শক্তি সংগ্রহ করছে, লড়াই করছে, তাদের নিজস্ব শক্তি সক্রিয় করছে তখন আরব মুসলিম দেশগুলো বাইরে থেকে এ শক্তির ওপর আক্রমণ করছে, বিদেশী শক্তির সাথে মিলে তারা নিজেদের মধ্যে সঙ্ঘাত জোরালো করে তুলছে।

আরব দুর্বলতা এর অন্তর্নিহিত কারণ নয়, বরং তাদের প্রশাসন পশ্চিমাদের সাথে যে একতরফা নির্ভরশীল সম্পর্ক তৈরি করে সেটিই এর কারণ। এই সম্পর্ক প্রায় সবসময়ই আরব জনগণ এবং তাদের দেশগুলোর স্বার্থের বিরুদ্ধে ছিল।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us