দু’জন ক্রাউন প্রিন্স ও এক স্বৈরশাসকের অক্ষ
দু’জন ক্রাউন প্রিন্স ও এক স্বৈরশাসকের অক্ষ - ছবি : সংগৃহীত
নির্ভরতার সম্পর্কটি এখন নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে এবং এটি আরো ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে। এর নেতৃত্ব এখন মোহাম্মদ বিন জায়েদ (সংযুক্ত আরব আমিরাত), মোহাম্মদ বিন সালমান (সৌদি আরব) এবং সিসি (মিসর) দিচ্ছেন।
তারা প্রথম দিকে ইরানের বিরুদ্ধে আরব সরকারগুলোকে ব্যবহার করেছিল। এই রূপটি তাদের আগ্রহের ভিত্তিতে নয়, বরং ইসরাইলের অগ্রাধিকার এবং মার্কিন পরিকল্পনার ভিত্তিতে ছিল। তারা তিন দশক ধরে এই প্রসঙ্গে লড়াই করে আসছে এবং সর্বদা হেরে গেছে। কারণ তাদের পরাজয়কে অনিবার্য করা হয়েছে।
সুতরাং, আরব-পারস্য সীমানাটি ইরান-ইরাক সীমান্ত থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত টানা হয়েছিল। তারা ইরাক ও সিরিয়াকে হারিয়েছে এবং তারা এখন লেবানন ও ইয়েমেনকে হারাতে চলেছে।
অঘোষিত যুদ্ধ!
এবার প্রায় একই মানসিকতা নিয়ে তুরস্কের বিরুদ্ধে আরব শক্তিকে সক্রিয় করা হচ্ছে। তারা সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, উপসাগরীয় দেশ এবং সিসির মিসরের সমন্বয়ে একটি ‘তুরস্ক-বিরোধী ফ্রন্ট’ প্রতিষ্ঠা করেছে।
এই মোর্চা আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন পরিচালনা, অর্থনৈতিক আক্রমণ, হত্যা ও মৃত্যুদ- কার্যকর করা- ইত্যাদির মাধ্যমে তুরস্ককে প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্বল করার চেষ্টা করছে।
তারা তুরস্কের সাথে লিবিয়ায়, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে, ককেশাসে, পারস্য উপসাগরে, লোহিত সাগরের আশপাশে এবং মধ্য আফ্রিকায় অঘোষিত যুদ্ধ চালাচ্ছে। এসব করতে গিয়ে তারা ইসরাইল, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ তথা বাস্তবে গ্রিস এবং গ্রিক সাইপ্রিয়ট প্রশাসনের সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছে।
পরের টার্গেট পাকিস্তান
এটা বেশ মজার বিষয় যে, একই ফ্রন্টটি সম্প্রতি পাকিস্তানকে লক্ষ্যবস্তু করে আসছে। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে পাকিস্তানকে লক্ষ্যবস্তু করতে শুরু করে।
পাকিস্তানে তাদের বিনিয়োগ বাতিল করা হচ্ছে, প্রদত্ত সহায়তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে, এবং কাশ্মীর সম্পর্কিত ভারতের পরিকল্পনাগুলোকে সুস্পষ্ট সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। কাশ্মীর ইস্যুতে ওআইসিকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। কাশ্মীরে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণকে গভীরে নিয়ে যেতে ইসরাইলি ভূমিকায় সহায়তা দিতে কাজ করছে তারা। কাশ্মীরের মর্যাদা ও স্বায়ত্তশাসনের অবশিষ্টটুকু সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে যখন ছিনিয়ে নেয়া হয় ঠিক তখনই বাহরাইন, আমিরাতে ভারতের নেতৃত্বকে সংবর্ধিত করা হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, তুরস্কের পরে এই আরব দেশগুলো কি পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও ব্যবহার হতে চলেছে? এই প্রশ্নের জবাব সম্ভবত হ্যাঁ। এরপর কোন দেশ আসবে? খুব সম্ভবত শক্তিমত্তায় উদীয়মান মুসলিম শক্তি ইন্দোনেশিয়া।
শিয়া-সুন্নির পর সুন্নি গৃহযুদ্ধ এখন দিগন্তে!
‘সিভিল ডেমোক্রেটিক ইসলাম : পার্টনারস, রিসোর্সেস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিস’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের বিষয় ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত হয়েছিল। কীভাবে ‘ইসলামী গৃহযুদ্ধ’ আয়োজন করা যায় তার ব্যাখ্যা সেখানে করা হয়।
এর এক বছর পরে, ‘মুসলিম বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল’ শিরোনামে ৫৬৭ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনে ইসলামী গৃহযুদ্ধের বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। এ জন্য গঠিত ফ্রন্টগুলোর মধ্যে প্রথমটি হলো, শিয়া-সুন্নি যুদ্ধ এবং দ্বিতীয় ফ্রন্টটি আরব মুসলিম আর অ-আরব মুসলমানদের যুদ্ধ। প্রথম পর্বটি সম্ভবত শেষ করে আনা হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় পর্বের মঞ্চায়নের কাজ হবে। আর এতে ইউএই এবং এরপর বাহরাইন ওমান সৌদি আরব যোগ দিলে মিসরসহ তাদের দাঁড় করানো হবে তুরস্ক ও মিত্র দেশগুলোর বিরুদ্ধে। পেছনে থাকতে পারে ইসরাইল, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র। এই মেরুকরণটি ঠিক কী রূপ নেবে তা পরিষ্কারভাবে বলা কঠিন। তবে লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং সর্বশেষ লেবাননের বিস্ফোরণের ঘটনায় মনে হচ্ছে আয়োজন অনেক দূর এগিয়ে গেছে।