পরের টার্গেট পাকিস্তান
জেনারেল বাজওয়া - ছবি : সংগৃহীত
এটা বেশ মজার বিষয় যে, একই ফ্রন্টটি সম্প্রতি পাকিস্তানকে লক্ষ্যবস্তু করে আসছে। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে পাকিস্তানকে লক্ষ্যবস্তু করতে শুরু করে।
পাকিস্তানে তাদের বিনিয়োগ বাতিল করা হচ্ছে, প্রদত্ত সহায়তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে, এবং কাশ্মীর সম্পর্কিত ভারতের পরিকল্পনাগুলোকে সুস্পষ্ট সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। কাশ্মীর ইস্যুতে ওআইসিকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। কাশ্মীরে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণকে গভীরে নিয়ে যেতে ইসরাইলি ভূমিকায় সহায়তা দিতে কাজ করছে তারা। কাশ্মীরের মর্যাদা ও স্বায়ত্তশাসনের অবশিষ্টটুকু সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে যখন ছিনিয়ে নেয়া হয় ঠিক তখনই বাহরাইন, আমিরাতে ভারতের নেতৃত্বকে সংবর্ধিত করা হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, তুরস্কের পরে এই আরব দেশগুলো কি পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও ব্যবহার হতে চলেছে? এই প্রশ্নের জবাব সম্ভবত হ্যাঁ। এরপর কোন দেশ আসবে? খুব সম্ভবত শক্তিমত্তায় উদীয়মান মুসলিম শক্তি ইন্দোনেশিয়া।
শিয়া-সুন্নির পর সুন্নি গৃহযুদ্ধ এখন দিগন্তে!
‘সিভিল ডেমোক্রেটিক ইসলাম : পার্টনারস, রিসোর্সেস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিস’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের বিষয় ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত হয়েছিল। কীভাবে ‘ইসলামী গৃহযুদ্ধ’ আয়োজন করা যায় তার ব্যাখ্যা সেখানে করা হয়।
এর এক বছর পরে, ‘মুসলিম বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল’ শিরোনামে ৫৬৭ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনে ইসলামী গৃহযুদ্ধের বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। এ জন্য গঠিত ফ্রন্টগুলোর মধ্যে প্রথমটি হলো, শিয়া-সুন্নি যুদ্ধ এবং দ্বিতীয় ফ্রন্টটি আরব মুসলিম আর অ-আরব মুসলমানদের যুদ্ধ। প্রথম পর্বটি সম্ভবত শেষ করে আনা হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় পর্বের মঞ্চায়নের কাজ হবে। আর এতে ইউএই এবং এরপর বাহরাইন ওমান সৌদি আরব যোগ দিলে মিসরসহ তাদের দাঁড় করানো হবে তুরস্ক ও মিত্র দেশগুলোর বিরুদ্ধে। পেছনে থাকতে পারে ইসরাইল, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র। এই মেরুকরণটি ঠিক কী রূপ নেবে তা পরিষ্কারভাবে বলা কঠিন। তবে লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং সর্বশেষ লেবাননের বিস্ফোরণের ঘটনায় মনে হচ্ছে আয়োজন অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
আরব রাস্তাগুলো কি জাগ্রত হবে!
কথিত ইসলামী গৃহযুদ্ধের যে আয়োজন হচ্ছে তা এই অঞ্চলের দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং মিসর সরকারকে শিয়া-সুন্নি যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। তাদের এখন সুন্নিদের মধ্যে গৃহযুদ্ধের জন্য চালিত করা হচ্ছে। আর তুরস্ককে তাদের সামনে প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে হাজির করা হচ্ছে।
এই সরকারগুলো প্রতিটি যুদ্ধে এর আগে পরাজিত হয়েছিল এবং অঞ্চলটি এখন ধ্বংসের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। তারা পরের যুদ্ধেও হয়তো হারতে চলেছে। তবে আরব জনগণের জন্য তাদের রাষ্ট্রকে এদিকে নিয়ে যাওয়া আত্মহত্যার প্রস্তুতি ছাড়া অন্য কিছু নয়। তারা আরব দেশগুলোতে ফাঁদ পেতেছিল। এসব নেতা এবং তাদের শাসনব্যবস্থা আরব অঞ্চলকে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আরব মুসলিম দেশগুলো ক্রমাগত শক্তি হারাতে থাকার পর অ-আরব মুসলিম দেশগুলো কেন ক্ষমতা অর্জন করছে? এই উপলব্ধি গভীরভাবে করা প্রয়োজন। প্রশ্ন হতে পারে এ পরিস্থিতিতে বিকল্প কি? আরবদের এখনই জেগে উঠতে হবে! অবশ্যই নতুন উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে হবে! ইসরাইল ও তার মিত্রদের সিদ্ধান্তের ঘুঁটি হিসেবে জনগণের বিরুদ্ধে সরকারের শক্তি ব্যবহারের ব্যাপারে রুখে দাঁড়ানোর আর কোনো বিকল্প নেই।
mrkmmb@gmail.com