ভারতের অস্ত্র আমদানি নীতি অকার্যকর?
ভারতের অস্ত্র আমদানি নীতি অকার্যকর? - ছবি : সংগৃহীত
স্থানীয়ভাবে ম্যানুফেকচারিং জোরদার করার জন্য কিছু অস্ত্র ও সামরিক সম্ভার আমদানি বন্ধ করার ভারতের পদক্ষেপ বাধার মুখে পড়েছে। দেশটি এখন চীনের সাথে সীমান্ত উত্তেজনা ও পাকিস্তানের সাথে উত্তপ্ত সম্পর্কের কারণে প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির জন্য দুই বিলিয়ন ডলারের সরঞ্জাম ক্রয় করতে যাচ্ছে।
গত ৯ আগস্ট ৪৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের যেসব সরঞ্জাম আমদানি নিষিদ্ধ করা হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে যোগাযোগ উপগ্রহ, প্রচলিত সাবমেরিন, হালকা মেশিন গান। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা বলছেন, স্থানীয় উৎপাদন ব্যবস্থার ত্রুটি ও সামরিক বাহিনীর জরুরি প্রয়োজনের কারণে এই ঘোষণা ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশকে প্রতিরক্ষা নির্মাণের পরাশক্তিতে পরিণত করার ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত তা তেমনভাবে শুরু করা যায়নি।
পরিকল্পনা ছিল, ২০২০ সালের মধ্যে দেশী সরঞ্জাম ও সিস্টেম উৎপাদন ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। কিন্তু ওই পরিকল্পনা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে, সময় বাড়িযে করা হয়েছে ২০২৭ সাল।
এখন ভারত হিমালয় অঞ্চলে চীনের বিরুদ্ধে উত্তেজনাকর অবস্থায় রয়েছে। দুই দেশের সম্পর্ক চার দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে।
নয়া দিল্লিভিত্তিক মনোহর পরিকর ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের অমিত কাউসিশ বলেন, প্রতিরক্ষা আমদানি হ্রাস ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের জন্য আগেই অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন তালিকা খুব একটা প্রভাব ফেলবে না।
সন্দেহগ্রস্ত হওয়ার কারণ আছে। একই ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল ২০১৩ সালে ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের অধীনে। কিন্তু কাজের কাজ তেমন হয়নি।
কোন আইটেমটি দেশীয়ভাবে নির্মাণ করা হবে, তা কোন সংস্থা নির্ধারণ করবে, তাও ওই নতুন আদেশে পরিষ্কার করা হয়নি।কারণ স্থানীয়ভাবে নির্মিত প্রতিরক্ষা পণ্য ও অস্ত্রে আমদানি করা খুচরা যন্ত্রাংশের প্রয়োজন পড়তে পারে।
২০১৬ সালে দেশীয়ভাবে তৈরী স্ব-চালিত একটি বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সামরিক মহড়ায় ব্যর্থ হয়। পরে তদন্তে দেখা যায়, আমদানি করা একটি উপাদান ব্যর্থ হয়েছে।
মিডিয়ার সাথে কথা বলার দায়িত্বপ্রাপ্ত না হওয়ায় পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে দুই কর্মকর্তা বলেন, সিস্টেমটি সমাধান করা না যাওয়ার কারণ হলো স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকারকরা জানতেন না যে কিভাবে আমদানি করা পণ্যটি মেরামত করতে হয়।
নয়া দিল্লিভিত্তিক স্বাধীন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক রাহুল বেদী বলেন, এ ধরনের প্রয়াসে প্রযুক্তির সুবিধা থাকা মৌলিক বিষয়। বর্তমানে ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্প মূলত সংযোজন পর্যায়ের চেয়ে একটু উন্নত।
আবার বিদেশী কোম্পানির সাথে যৌথ উদ্যোগে বা অন্য দেশের কোনো কোম্পানির লাইসেন্স নিয়ে দেশে অস্ত্র উৎপাদন করলে ওই নিষেধাজ্ঞার কোনোই মূল্য থাকে না।
অবশ্য ভারতের বিকাশমান প্রতিরক্ষা শিল্পে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও নতুন নীতির ব্যাপারে আশাবাদও আছে।
লারসেন অ্যান্ড টারবো লিমিটেডের সিনিয়র নির্বাহী ভাইস-প্রেসিডেন্ট জয়ন্ত পাতিল বলেন, আমরা নিশ্চিত যে এই তালিকা নতুন নতুন কর্মসূচিতে সংযোজন করা হবে, আমাদের জাতির অনুপ্রেরণার জন্য নতুন রোডম্যাপ তৈরী করা হবে।
সূত্র : ব্লুমবার্গ