ভারতীয় বাহিনী রাতে অভিযানে গিয়েছিল কেন?
ভারতীয় সেনাবাহিনী - ছবি : সংগৃহীত
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসে ১৭ জুন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ির উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়, ওই ঘটনার তদন্ত খুবই প্রয়োজন। এতে দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি প্রদানের দাবিও জানানো হয়। চীন আরো দাবি জানায়, ভারতের উচিত রণাঙ্গনে থাকা তার সৈন্যদের কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা।
ওয়াং তার মনোভাব প্রাণঘাতী সংঘর্ষের দু’দিন পর টেলিফোন সংলাপে তার ভারতীয় প্রতিপক্ষ এস জয়শঙ্করকে জানান। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য ওই ফোন করা হয়েছিল।একই দিন ভারতীয় মিডিয়ায় ঘটনার তদন্ত ও অপরাধীদের শাস্তি প্রদানের চীনা দাবি নিয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
গত ১৮ জুন প্রখ্যাত ভারতীয় সাংবাদিক করন থাপার সাথে দি ওয়্যারকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে চীনে নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্রসচিব নিরুপমা রাও রাতের বেলায় চীনা ভূখণ্ডে ভারতীয় সৈন্যদের প্রবেশে বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
থাপার যখন তাকে জিজ্ঞাসা করেন যে এই প্রশ্ন ওঠতে পারে কি দিনের বেলায় না করে রাত সাড়ে ৭.৩০টায় অন্ধকারে পার্বত্যপূর্ণ ও বিপজ্জনক একটি এলাকায় চীনা সৈন্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার কমান্ডিং অফিসার কর্নেল বাবুর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কিনা? এর জবাবে নিরুপমা বলেন, এটি অবশ্যই একটি প্রশ্ন এবং এর জবাব দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ব্যাটালিয়ন কমান্ডার হিসেবে রাত ৭.৩০-এ চীনা সৈন্যদের প্রত্যাহার যাচাই করার সিদ্ধান্তটি কর্নেল বাবুই নিয়েছিলেন নাকি উচ্চতর পর্যায় থেকে নির্দেশনার আলোকে তিনি তা করেছিলেন, তা অস্পষ্ট।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল এইচ এস পানাগ ১৮ জুন দি প্রিন্টে এক কলামে লিখেছেন, সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থরাই পেশাগত রীতি অনুযায়ী বাহিনী ব্যবহার করতে সরকারকে পরামর্শ দেয়ার পেশাগত দায়দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এসব সৈন্যে রক্ত সরকার ও সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিদের হাতে।
অবশ্য, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গালওয়ান সংঘর্ষের পর ২২ জুন প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় মৃত সৈন্যদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, ‘দেশ কো ইজ বাত কা গর্ব হোগা কি ভি মারতে মারতে মরে’ (জাতি গর্বের সাথে দেখছে যে তারা তারা শত্রুদের মারতে মারতে মরেছে)।
একইভাবে স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোভিন্দ বলেন, পুরো জাতি গালওয়ানে নিহতদের সম্মান জানায়... লড়াইয়ে তাদের সাহসিকতা প্রদর্শিত হযেছে। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করলেও আমরা যেকোনো আগ্রাসনের সমুচিত জবাব দিতে সক্ষম।
অবশ্য গালওয়ান সঙ্ঘাতের প্রায় দুই মাস পর ভারতের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ভারতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত সান ওয়ে দং আবারো চীনা অবস্থান তুলে ধরেছেন।
নয়া দিল্লির চীনা দূতাবাসের প্রকাশিত চায়না-ইন্ডিয়া রিভিউ ম্যাগাজিনে তিনি বলেন, আমরা ভারতীয় পক্ষকে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি, লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহিতার আনতে বলছি, রণাঙ্গনে থাকা সৈন্যদের কঠোর শৃঙ্খলায় রাখতে বলছি, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি নিশ্চিত করতে সব ধরনের উস্কানিমূলক কাজ দ্রুত বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
সবশেষে ভারত সরকার স্বীকার করেছে যে গালওয়ান সংঘর্ষে তাদের সামরিক বাহিনী একটি ভুল করেছে, আর তা কথায় নয়, কাজে।
সূত্র : এশিয়া টাইমস