নেপালি সেনাবাহিনী নিয়ে ভয়!
নেপালি সেনাবাহিনী - ছবি : সংগৃহীত
নেপালের সেনাবাহিনীকে বাণিজ্যিক প্রকল্পে বিনিয়োগের অনুমতি দিয়ে একটি খসড়া বিল উত্থাপন করা হয়েছে, যেটা নেপালের গণতন্ত্র, রাজনীতি এবং অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
আর্মি ওয়েলফেয়ার ফাণ্ডের ৪৬ বিলিয়ন রুপির মতো ক্যাশ রিজার্ভ রয়েছে এবং বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ৬ বিলিয়ন রুপি। সেনাবাহিনী এখন সরাসরি প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চায়, কারণ ব্যাংকে রাখা ফিক্সড ডিপোজিটের চেয়ে সেখানে লাভ আসবে বেশি।
বিনিয়োগ থেকে বেশি মুনাফা লাভের অধিকার সেনাবাহিনীর রয়েছে। কিন্তু এর যে প্রভাব নেপালের গণতন্ত্রের উপর পড়বে, সেটার ভারসাম্য কিভাবে রক্ষা করা হবে?
সেনাবাহিনীর প্রকল্পে সরাসরি বিনিয়োগ না করার বহু কারণ রয়েছে। এটা করলে সেনাবাহিনীর রাজনীতি নিরপেক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, স্বার্থের সঙ্ঘাত শুরু হবে, এবং অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
কিন্তু এর চেয়েও বড় কারণ রয়েছে, যে জন্য সেনাবাহিনীকে তাদের বিনিয়োগের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। সেটা হলো নেপালের গণতন্ত্রকে রক্ষা করা।
জনগণের আস্থার অবনতি
২০১৮ সালের ২৪ জুলাই রিপাবলিকাতে প্রকাশিত লেখায় আমি বলেছিলাম যে, জাতীয় অবকাঠামো প্রকল্পে জড়ানো সেনাবাহিনীর উচিত হবে না, কারণ এটা তাদের ইমেজ ধ্বংস করার ফাঁদ মাত্র। বিগত দুই বছরে বহু কিছু ঘটেছে।
দুর্নীতির অভিযোগ, অবকাঠামো ও অন্যান্য ক্রয় প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়ার কারণে সেনাবাহিনীর প্রতি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানুষের আস্থা কমে গেছে।
চলতি বছরের জুনে কোভিড-১৯ কেন্দ্রিক ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে সেনাবাহিনীকে বিবৃতি দিতে হয়েছিল। মে মাসের শুরুর দিকে, আর্মি ওয়েলফেয়ার ডিরেক্টরেটের সাথে জড়িত দুজনকে অনিয়মের দায়ে আটক করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্টেট অ্যাফেয়ার্স কমিটি অভিযোগ করে যে, আগের সেনাপ্রধানের সময় ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম হয়েছে।
সেই সাথে রয়েছে কাঠমাণ্ডু-তারাই এক্সপ্রেসওয়ে অবকাঠামো প্রকল্প, ২০০ বিলিয়ন রুপির যে প্রকল্পের কাজ দেয়া হয়েছিল সেনাবাহিনীকে।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে জানিয়েছেন যে, প্রকল্পের ব্যাপারে যথেষ্ট রাজনৈতিক সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে না। প্রকল্প নিয়ে সেনাবাহিনী দুর্নীতির তদন্ত করছে। বাহিনীর ডিজাইন বাছাই, তত্ত্বাবধান কনসালটেন্টনদের বিরুদ্ধে স্বচ্ছতার অভাব এবং ক্রয় নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
শেষ আশ্রয়স্থল
নেপালের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে জনগণের আস্থা লাগবে সেনাবাহিনীর, অর্থ নয়।
নেপালের নবীন গণতন্ত্রের দুর্বলতাগুলো স্পষ্ট হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দারুণভাবে ব্যার্থ হচ্ছে, জনগণের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে। দুর্নীতি গভীর হচ্ছে। দায়মুক্তি জোরালো হচ্ছে। বিচার ব্যাবস্থা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্টের দিক থেকে কোন আশা দেখা যাচ্ছে না। ভূরাজনৈতিক প্রভাব এখানে বেশি দৃশ্যমান এবং মেরুকরণের বিষয়টিও স্পষ্ট।
নেপালের শিশু সংবিধান ভিত্তি পায়নি এখনো। যে সব সরকারী প্রতিষ্ঠান গণতান্ত্রিক নীতিমালাকে রক্ষা করে, সেগুলো এগিয়ে আসতেই ব্যার্থ হয়েছে।
এখনো নেপালের গণতন্ত্র কাজ করার কারণ হলো এতে পুঁজি যোগ হচ্ছে। ব্যবস্থাগুলো চালিয়ে নেয়ার জন্য যথেষ্ট অর্থ রাষ্ট্রের রয়েছে। ঋণ নিতেও সমস্যা হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক দাতা ও উন্নয়ন অংশীদাররা অর্থ দিচ্ছে।
কিন্তু যে সংবিধানের পেছনে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি নেই, সেটা অর্থ দিয়ে বেশিদিন টিকবে না। এক সময় টাকা ফুরিয়ে যাবে এবং এই সিস্টেম তখন অন্যকিছুর দ্বারস্থ হবে। সেই মুহূর্তটা হয়তো আমাদের চিন্তার চেয়েও নিকটবর্তী।
এই মুহূর্তটাতে এসেই সবশেষ আস্থার জায়গা হিসেবে সেনাবাহিনীর ভূমিকার পরীক্ষা হবে। এবং এই সময়টাতেই মৃতপ্রায় গণতন্ত্রকে উদ্ধার করে জনগণের আস্থা ফিরে পেতে পারে সেনাবাহিনী।
নেপাল সেনাবাহিনী যেভাবে অর্থ রোজগারের কথা ভাবছে, সেভাবেই তাদের ভেবে দেখা দরকার যে, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস তারা কিভাবে ফিরে পাবে। নেপালের সীমান্ত রক্ষার জন্য কেউ সেনাবাহিনীকে ডাকবে না। কিন্তু গণতন্ত্র রক্ষার জন্য হয়তো তাদেরকে ডাকা হতে পারে।
সূত্র : অন্নপূর্ণা এক্সপ্রেস