ভারতকে কী বার্তা দিতে চান চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী?
ওয়াং ইয়ি - ছবি : সংগৃহীত
বিরল এক সফরে শুক্রবার তিব্বত করছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি। তিনি ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকাও পরিদর্শন করেন। গত তিন মাস ধরে দুই দেশের সীমান্তে সামরিক অচলাবস্থা চলছে এবং তা দূর হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
শনিবার দেয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে ভারতের নাম উল্লেখ ছিলো না। তবে চীনা পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে এই সীমান্ত সফর বেশ অস্বভাবিক এবং এর প্রতীকী অর্থ রয়েছে।
কূটনৈতিক আলোচনা ও সামরিক দেন-দরবার দীর্ঘদিন চলে আসা এই সীমান্ত অচলাবস্থার নিরসন করতে পারেনি, যা ক্রমেই আরো বড় হয়ে উঠছে এবং ক্রমেই বাণিজ্য, প্রযুক্তি, বিনিয়োগ ও ভূ-রাজনীতিতে তিক্ত বিরোধের জন্ম দিচ্ছে।
ভারতের সঙ্গে সীমান্ত আলোচনায় চীনের বিশেষ প্রতিনিধি ওয়াং বলেন, চীনের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তিব্বতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বিশাল গুরুত্ব রয়েছে। তিনি করোনা-উত্তর বিশ্বে নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মুখে জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষায় স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করতে কূটনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
ভারতের স্বাধীনতা দিবসে জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণের একদিন আগে ওয়াং ওই সফরে যান।
ভারতের সঙ্গে চীনের দীর্ঘ ও অচিহ্নিত সীমান্ত রয়েছে, যার বেশিরভাগ অংশ তিব্বতের সঙ্গে।
বিগত ৫০ বছরের মধ্যে প্রথম গত ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর সীমান্ত এলাকা সফরকারী চীনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা ওয়াং। ওই সংঘর্ষে একজন কর্নেলসহ ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়।
তিব্বতিদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাতিল করে দিয়ে ওয়াং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অধীনে, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তিব্বতের অর্জনগুলোর প্রশংসা করেন।
তিনি এই অঞ্চলে সীমান্ত অবকাঠামো উন্নয়ন ও দারিদ্র দূরীকরণ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তিব্বত।
নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানী গু সু বলেন, কোন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য তিব্বত সফরে যাওয়া বিরল ঘটনা। কোন অঞ্চল যখন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তখন এ ধরনের সফর অনুষ্ঠিত হয়।
পাঁচ বছর আগে বেইজিংয়ে শি তিব্বতের ব্যাপারে একটি বৈঠক ডাকলে তখন তিব্বত সফরে গিয়েছিলেন ওয়াং।
গু সু বলেন, সীমান্ত এলাকায় সফরে গিয়ে ওয়াং দেশে বিদেশে সব মহলে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন। আর সেটা হলো, বিতর্কিত সীমান্ত এলাকাগুলোর উপর সার্বভৌমত্ব পুনর্ব্যক্ত করলো বেইজিং।
গু এবং সাংহাই মিউনিসিপ্যাল সেন্টারের ভারত বিশেষজ্ঞ ওয়াং দেহুয়া দুজনেই বলেছেন, ভারতের হকিশ অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে চীন নিজেকে দুর্বল দেখাতে চায় না।
গালওয়ান ঘটনার পর মোদির জাতীয়তাবাদী সরকার চীনা প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, ৫৯টি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয় জাতীয় নিরাপত্তার অযুহাত দেখিয়েছ।
তারা চীনকে মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল আলিঙ্গনের পাশাপাশি সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও অস্ত্র কেনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
ওয়াং বলেন, ওয়াংয়ের সফর হলো ভারতকে কার্যকরভাবে মোকাবেলার জন্য সমর্থন আদায় ও কৌশল প্রণয়নের লক্ষ্যে। বিশেষ করে ভারত যখন এখনো নয়া চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দোল খাচ্ছে।
তিনি বলেন, চীন স্পষ্টত ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না, তবে আমাদেরকে সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হবে, এবং ওয়াং সম্ভবত তিব্বতে সেটাই করছেন।
সিচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক বিশেষজ্ঞ সান সিহানি বলেন, তিব্বত অনেক দিন ধরেই বেইজিংয়ের জন্য স্পর্শকাতর ইস্যু। ভারত বা কোন বিদেশী শক্তি যেন তিব্বত কার্ড ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
সান আরো বলেন, ভারতের সঙ্গে সংঘাত চীনের জন্য লাভজনক হবে না। তাই বেইজিং সম্ভবত বর্তমান নীতিই বাজায় রাখবে।
সূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট