কেবল শেষ হিসাবটাই মেলাতে পারলেন না মাহি
মহেন্দ্র সিং ধোনি - ছবি : সংগৃহীত
অবশেষে জল্পনার অবসান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে পাকাপাকিভাবে অবসর নিয়েই ফেললেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ১৫ আগস্ট, স্বাধীনতা দিবসের সন্ধ্যায় খবরটা ছড়িয়ে পড়া মাত্র চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয় মাহির ভক্তকূল। প্রিয় তারকার এমন মলিন বিদায়! চব্বিশ ঘণ্টা পরও ঘোর কাটেনি ক্রিকেট দুনিয়ার। সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ বোলাতে বোলাতে মনে হচ্ছিল, ভারতীয় ক্রিকেটে কত বড় নক্ষত্র পতনটাই না ঘটে গিয়েছে প্রচারের অন্তরালে।
কিন্তু বাস্তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ধোনির প্রস্থান কি সত্যিই খুব অপ্রত্যাশিত ছিল? বরং ২০১৪ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে ধোনির অবসর ছিল অনেক বেশি চমকপ্রদ। বিসিসিআই কিংবা ভারতীয় দল- কোনো পক্ষই সেদিন ঘুণাক্ষরে টের পায়নি যে, তিনি এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন। তুলনায় সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে ধোনির অবসর একটি প্রত্যাশিত ঘটনার প্রতিফলন মাত্র। তবে টাইমিংটা ঠিক হলো না। ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে পরাজয়ের পরেই তিনি দস্তানা জোড়া (টিম ইন্ডিয়ার) খুলে রাখলে হয়তো ভালোই করতেন। তা হলে গত তেরো মাস ধরে এত জল্পনা চলত না। আর অপেক্ষা যখন করলেনই, তখন আইপিএলে খেলেই না হয় সিদ্ধান্তটা নিতে পারতেন!
আসলে ধোনি বরাবরই আনপ্রেডিক্টেবল। ২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে শেষ ওভারে যোগিন্দর শর্মার হাতে যখন তিনি বল তুলে দিয়েছিলেন, তখন গেল গেল রব উঠেছিল চারিদিকে। বাকিটা ইতিহাস। বরফশীতল মস্তিষ্কে বিপক্ষের কৌশল ভণ্ডুল করে বাজিমাত করার ক্ষেত্রে মাহির জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু নিজের কেরিয়ারের শেষ ইনিংসে তিনি হিসেবটা মেলাতে পারলেন না। সব কিছু ওলট-পালট করে দিল করোনা ভাইরাস।
কোভিডের কারণে টি-২০ বিশ্বকাপ এক বছর পিছিয়ে যাওয়ায় ধোনির আর কিছুই করার ছিল না। বয়স বাড়ছে। কমছে রিফ্লেক্স। টিম ইন্ডিয়ার পরের সীমিত ওভারের সিরিজ সেই আগামী বছরের গোড়ায়, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। এতদিন পর জাতীয় দলে ফেরাটা কঠিন ছিল ধোনির পক্ষে। সেটা বুঝতেও পারছিলেন তিনি। হতে পারে মাহি এখনো ভারতীয় দলের অনেক ক্রিকেটারের থেকেই ফিট। কিন্তু ক্রীড়া বিজ্ঞানকে কি অস্বীকার করা যায়? তাই দু’টি পথ খোলা ছিল মাহির সামনে। এক, বিসিসিআই কর্তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে পরের বছর টি-২০ বিশ্বকাপে খেলা। নতুবা ভারতীয় দলে তরুণদের জায়গা ছেড়ে দেয়া। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় পথটাই বেছে নিলেন মাহি। বলা ভালো, বাধ্যই হলেন। তা নাহলে বোর্ড কর্তারাই তার ভাগ্যবিধাতা হয়ে উঠতেন। যা কোনো কালেই পছন্দ ছিল না ধোনির। অগত্যা আপন মর্জিতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সন্ন্যাস নিলেন তিনি। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যে মাহি নিতে যাচ্ছেন, সেটা জানাননি স্ত্রী সাক্ষীকেও। ধোনির অবসরের পিছনে হয়তো অন্য কারণও লুকিয়ে থাকতে পারে। তা হয়তো পরে কখনো ‘আনটোল্ড স্টোরি’র আকারে সামনে আসবে।
মহেন্দ্র পতনে ভারতীয় দল কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার হিসেব করার সময় এখনো আসেনি। ঋষভ পন্থ, লোকেশ রাহুলদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলিয়ে ধোনির অভাব পূরণের চেষ্টা চলবে। তবে প্রতিষ্ঠানের উর্দ্ধে কেউ নয়। সুনীল গাভাসকর, কপিল দেব, সৌরভ গাঙ্গুলি, শচিন টেন্ডুলারের মতো তারকাদের বিদায়ে ভারতীয় দলে কোনো প্রভাব পড়েনি। এটা অনেকটা রিলে রেসের মতো। ব্যাটন শুধু হাত বদলায়। তাই ধোনির অবসরের প্রভাব টিম ইন্ডিয়াতেও দীর্ঘ স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। হয়তো দীর্ঘ ১৬ বছরের অভ্যাস বদলাতে সময় লাগবে। মনে রাখতে হবে, ক্রিকেট হলো টিম গেম। রজার ফেডেরার বয়সের ভারে নুইয়ে পড়লেও খেলে যাচ্ছেন। বলছেন, ‘ট্রফি জেতার জন্য নয়, ভালো লাগে তাই খেলছি।’ কিন্তু দলগত খেলায় তো আর ব্যক্তিগত ভালোলাগা প্রাধান্য পায় না। তাই ধোনির ইচ্ছার অপমৃত্যু ঘটল অনাড়ম্বরভাবেই।
ভারতের সফলতম অধিনায়কের বিদায়ী ম্যাচ আয়োজনের কোনো সুযোগই পেল না বিসিসিআই।
বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সফল ফিনিশার বলা হত ধোনিকে। কিন্তু নিজের ক্রিকেট জীবনের শেষ ইনিংসটা মধুরেন সমাপয়েত করতে পারলেন কোথায় মাহি?
সূত্র : বর্তমান