যেসব আমলে হজের সওয়াব পাওয়া যায়
যেসব আমলে হজের সওয়াব পাওয়া যায় - ছবি : সংগৃহীত
সেলাইবিহীন দুই টুকরো সাদা কাপড় পরে পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করা প্রতিটি মুমিনের হৃদয়ে লালিত স্বপ্ন। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ (হে আল্লাহ, আমি হাজির) গত বছর এ সময়ে প্রায় ২৫ লাখ মুসল্লির ধ্বনিতে মুখরিত হয়েছিল মক্কার আরাফাতের ময়দান। লাখো মুসল্লির হৃদয়ের মণিকোঠায় লালন করেছিল এ বছর হজে যাওয়া। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপ ভেঙে দিয়েছে সেই সোনালি স্বপ্ন। তবে দয়াবান আল্লাহ এমন কিছু পথ বের করে দিয়েছেন; যেগুলো দ্বারা যে কেউ মকবুল হজের অথবা ওমরাহর সওয়াব পেয়ে যেতে পারে। দয়ার নবী মুহাম্মাদ সা: বিভিন্ন হাদিসে সেসব আমল বাতলে দিয়েছেন।
দ্বীন শিখা বা শিখানোর উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়া : এটা অনেক বড় সওয়াবের একটা কাজ। হজরত আবু উমামা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে গেল কোনো ভালো কথা শিখা বা শিখানোর উদ্দেশ্যে, সে পরিপূর্ণরূপে হজ আদায়কারী একজন ব্যক্তির মতো সওয়াব লাভ করবে।’ (তাবারানি, হাদিস : ৭৪৭৩)
নামাজের পর জিকির : আবুদ্দারদা রা: থেকে বর্ণিত আছে, আমরা একবার রাসূল সা:-কে বলি, হে আল্লাহর রাসূল! ধনী ব্যক্তিরা সওয়াবের ক্ষেত্রে আমাদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তারা হজ করেন, আমরা হজ করি না। তারা সংগ্রাম-যুদ্ধে শরিক হন, আমরা শরিক হতে পারি না। তখন রাসূল সা: বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন আমলের কথা বলব যেটা তোমরা করলে তোমরা তারা যে আমল করে তার চেয়ে বেশি সওয়াব পাবে? আর সেটা হলো প্রতি নামাজের পর তোমরা ৩৪ বার আল্লাহু আকবার, ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ও ৩৩ আলহামদুলিল্লাহ পড়ো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১১১৫৪)
ইশরাকের নামাজ : শরিয়তের পরিভাষায় সূর্যোদয়ের পর সূর্যের পূর্ণ কিরণ বিচ্ছুরিত হওয়ার পর মাত্র দু-চার রাকাত ইশরাকের নামাজের দ্বারা মিলবে হজ ও ওমরাহর সওয়াব। হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত। রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করে, এরপর বসে থেকেই সূর্য না ওঠা পর্যন্ত জিকির-আজকারে নিমগ্ন থাকে, পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, সে একটি হজ ও একটি ওমরাহর সওয়াব লাভ করবে। পরিপূর্ণ! পরিপূর্ণ! পরিপূর্ণ!’ (তিরমিজি, হাদিস : ৫৮৬)
পিতা-মাতার সেবা ও তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার : আনাস ইবনে মালিক রা: বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল সা:- এর কাছে এসে বলল, আমি জিহাদে-সংগ্রামে অংশ নিতে চাই, কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য ও সক্ষমতা নেই। তখন রাসূল সা: তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার মাতা-পিতার কেউ কি জীবিত আছেন?’ লোকটি বলল, আমার মা জীবিত। তখন রাসূল সা: বললেন, ‘তাহলে মায়ের সেবা করে আল্লাহর কাছে যুদ্ধ-সংগ্রামে যেতে না পারার অপারগতা পেশ করো। এভাবে যদি করতে পারো এবং তোমার মা সন্তুষ্ট থাকেন তবে তুমি হজ, ওমরাহ এবং যুদ্ধ-সংগ্রামের সওয়াব পেয়ে যাবে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং মায়ের সেবা করো।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ, হাদিস : ১৩৩৯৯)
মসজিদে নামাজের জামাতে হাজির হওয়া : আবু উমামা রা: বর্ণনা করেন, নবীজী সা: এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে ফরজ নামাজ আদায় করল সে যেন হজ করে এলো। আর যে ব্যক্তি নফল নামাজ আদায় করতে মসজিদে গমন করল সে যেন ওমরাহ করে এলো।’ (তাবারানি, হাদিস : ৭৫৭৮)
জুমার নামাজ : আবু উমামা রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ঘর থেকে উত্তমরূপে অজু করে ফরজ নামাজের উদ্দেশ্যে বের হয়, সে ইহরাম বেঁধে হজে গমনকারীর মতো সওয়াব লাভ করে। আর যে ব্যক্তি শুধু সালাতুদ্দুহা (পূর্বাহ্নের নামাজ) আদায়ের উদ্দেশ্যে কষ্ট করে বের হয়, সে ওমরাহ আদায়কারীর মতো সওয়াব লাভ করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫৫৮)
মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় : সৌদি আরবে বসবাসরত ভাইদের সে সুযোগ রয়েছে। রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি নিজ ঘরে পবিত্রতা অর্জন করল, তারপর মসজিদে কুবায় এসে কোনো নামাজ আদায় করল, সে ওমরাহর সওয়াব হাসিল করল।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪১২)