একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ : চীনকে ঠেকাতে পারবে এশিয়া?

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Aug 16, 2020 06:59 am
একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ : চীনকে ঠেকাতে পারবে এশিয়া?

একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ : চীনকে ঠেকাতে পারবে এশিয়া? - ছবি : সংগৃহীত

 

গত শতককে বলা হয়ে থাকে ‘আমেরিকান সেঞ্চুরি’। দুই বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার ভূমিকা, অর্থনৈতিক উন্নতি, স্নায়ুযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্বব্যাপী দাদাগিরি—সব মিলিয়ে গত শতক ছিল আমেরিকার। বিশেষজ্ঞদের মত, একইভাবে একুশ শতক হতে পারে ‘এশিয়ান সেঞ্চুরি’। কিন্তু সত্যিই কি তাই হবে? নাকি চীন এসে বাগড়া দেবে?

বিশ্বে আমেরিকার প্রভাব-প্রতিপত্তি বেশ কয়েক বছর ধরেই অনুজ্জ্বল। এর মূল কারণ হিসেবে কেউ কেউ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার নীতিকে দায়ী করে থাকেন। এই যুক্তি অবশ্য ফেলে দেয়ার মতো নয়। নতুন করোনা ভাইরাস মহামারি এসে আমেরিকার আরো লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমেরিকার আর্থসামাজিক বৈষম্যগুলো প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে দেশের হাল আরো শক্ত হাতে ট্রাম্পের ধরার কথা ছিল, সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট অভিযুক্ত হচ্ছেন লাগামহীন ‘উল্টোপাল্টা’ কথা বলা ও কর্মকাণ্ডের জন্য। দেখা যাচ্ছে, তিনি আজ যে কথা বলছেন, কালই তা বাতিল করে দিচ্ছেন। আর এসব কারণেই বলা হচ্ছে, বিশ্ব নেতৃত্ব আর আমেরিকার হাতে থাকছে না।

আমেরিকার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেনসহ কিছু দেশের অবস্থাও সুবিধার নয়। এর উল্টো দিকেই মহামারির বিরুদ্ধে বিভিন্ন এশীয় দেশের সাফল্যের গল্প উঠে আসছে। লন্ডন রিভিউ অব বুকসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামের মতো এশিয়ার দেশগুলো যেভাবে মহামারি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, আমেরিকা বা ব্রিটেনের মতো দেশ তা পারছে না। এমনকি মহামারি শুরুর পর্যায়ে চীনের শাসনপ্রক্রিয়া ও সরকারের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও স্বীকার করতেই হবে যে, নিজেদের দেশে ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়ানো রোধ করতে পেরেছিল শি জিনপিংয়ের সরকার। অথচ মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকারই নেতার আসনে থাকার কথা ছিল।

কিন্তু কেন আমেরিকা পিছিয়ে পড়ছে? ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকা-ব্রিটেনের মতো দেশগুলো নিজেদের ‘শ্রেষ্ঠ’ ভাবতেই ভালোবাসত। নিজেদের সম্পর্কে এই অহেতুক উচ্চ ধারণার কারণেই এখন পিছিয়ে পড়ছে দেশগুলো। এসব দেশের নেতারা ধারণা করতেন, বাকি বিশ্বের কাছ থেকে আর কিছু শেখার নেই তাদের। কিন্তু সেই ধারণা যে ভুল, তা এখন প্রমাণিত হয়েছে। আর এই কারণেই দেশগুলো এশিয়ার চেয়ে পিছিয়ে পড়ছে।

আর এশিয়ার এসব দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। এশিয়ার দেশগুলো হয়ে উঠছে বিশ্ব বাণিজ্যের কেন্দ্র। ব্যাংকক পোস্টের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, একুশ শতকে আসিয়ান জোটভুক্ত দেশগুলো সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬৩৫ মিলিয়ন। এই অঞ্চলে ক্রমেই বাড়ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সংখ্যা এবং সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক বৃদ্ধিও স্থিতিশীল। সব মিলিয়ে এশিয়া হয়ে উঠেছে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম বাজার। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল ও টেমাসেক-এর দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি ২০২৫ সালের মধ্যে ৮৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাবে।

তবে এশিয়ার এই উত্থানে বাগড়া দিতে পারে শি জিনপিংয়ের দেশ। আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ চলার কারণে এখন আঞ্চলিক রাজনীতিতে মনোযোগী হয়েছে চীন। বাণিজ্যের দিক থেকে চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। শুধু ২০১৯ সালে চীনের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪.৬ ট্রিলিয়ন ডলার। এর বাইরে দক্ষিণ চীন সাগরে ক্রমাগত প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে বেজিং। এর পিছনে ভূরাজনৈতিক কারণও আছে। গালফ নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ চীন সাগর চীনের বাড়ির সামনের উঠানের মতো। সুতরাং এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মানেই চীনের নিরাপদ থাকা। এ ছাড়া দক্ষিণ চীন সাগরে আছে প্রায় ১৯০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস ও ১১ বিলিয়ন ব্যারেল তেল। এটুকুই এখন পর্যন্ত পরিমাপ করা গেছে। দক্ষিণ চীন সাগরের আরো অনেক অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ এখনো পরিমাপ করা হয়নি। তা ছাড়া নৌপথে বিশ্ব বাণিজ্যের এক-তৃতীয়াংশ সম্পন্ন হতে দক্ষিণ চীন সাগর পথ ব্যবহার করে। চীনের এমন আগ্রাসী আচরণের কারণে অনেক বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন যে, একুশ শতক ছিনিয়ে নিতে পারে চীন। গত শতাব্দীর একটি সময়কালে চীন এশিয়ার জাগরণে বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু এখন চীন নিজেই একটি সাম্রাজ্যবাদীশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক সি রাজা মোহন মনে করেন, একুশ শতককে নিজেদের করায়ত্ত করতে চাইছে চীন। দেশটি এখন জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলছে, এশিয়ায় ঐক্য প্রতিষ্ঠা এখন আর চীনের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই। চীনের প্রতিবেশীরাও আগ্রাসী নীতির কারণে এখন অস্বস্তিতে। চীন এরই মধ্যে এশিয়াজুড়ে নিজেদের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির মহড়া দেখাতে শুরু করেছে। ফলে সবাইকেই সতর্ক থাকতে হবে। বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র : বর্তমান


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us