আফগানিস্তানও চীনের প্রভাবে চলে যাচ্ছে?
আফগানিস্তানও চীনের প্রভাবে চলে যাচ্ছে? - ছবি : সংগৃহীত
২০০১ সালে তালেবান সরকারের পতনের পর থেকেই কাবুলের সাথে নয়াদিল্লীর বিনিময় সবসময় ইতিবাচকভাবেই চলে এসেছে। কারজাই থেকে নিয়ে ঘানি প্রশাসনের সবাই আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে ভারতের বেসামরিক সহায়তা নিয়ে সাধুবাদ জানিয়েছে। তবে চীন ও পাকিস্তানের মতো দেশের সাথে কাবুলের বিনিময়ের কারণে একটা উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে যে, অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আফগানিস্তান স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কি না।
ভারত ও চীন উভয়েই যেহেতু তাদের আঞ্চলিক প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে, এবং অনেক জায়গাতেই দুই দেশ তাদের স্বার্থ নিয়ে প্রতিযোগিতার মধ্যে রয়েছে, এ অবস্থায় আফগানিস্তান অবশ্যি পথ খোঁজার চেষ্টা করবে যাতে তারা নিজেদের অর্জন বাড়াতে পারে এবং ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারে। ভারতের সাথে আফগানিস্তানের কৌশলগত অংশীদারিত্ব তাদেরকে চীনের সাথে সম্পর্ক সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে ভারত যে ভূমিকা রেখেছে, সেটাকে ভারতের স্বার্থের জন্য সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু তালেবানকে যুক্ত করে চলমান রাজনৈতিক দর কষাকষির প্রক্রিয়ায় তাদের অনুপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে অনেক তর্কের সুযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে, চীন মনে হচ্ছে আফগানিস্তানে তাদের নতুন অধ্যায় খুলতে চায়। তালেবানের জন্য তারা যোগাযোগের চ্যানেল উন্মুক্ত করছে এবং এ অঞ্চলে তাদের মিত্র পাকিস্তান সেখানে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করছে। আমেরিকা যখন আফগানিস্তান থেকে সরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে, তখন মার্কিন-চীন উত্তেজনা বৃদ্ধি, ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতি, ভারত-চীন সম্পর্কের নতুন করে অবনতি, এবং আফগানিস্তানের নড়বড়ে শান্তি প্রক্রিয়ার প্রেক্ষিতে আফগানিস্তানে চীনের পরিকল্পনার বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা নয়াদিল্লীর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে সম্প্রতি যেখানে চারদেশীয় বৈঠক করেছে চীন, পাকিস্তান, নেপাল আর আফগানিস্তান।
ভারতের কাছের ও কিছুটা দূরের প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীনের প্রভাব বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বেশ কিছু বিতর্কের জন্ম হয়েছে। কিছু ভাষ্যকার মনে করেন ইরান আর আফগানিস্তানের মতো দেশকে চীনের প্রভাব বলয়ে ছেড়ে দিয়ে ভারতকে অনেক কিছু হারাতে হবে। অন্যরা সুপারিশ করেছেন যাতে এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভারত অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে।
কিন্তু আফগানিস্তানের মতো দেশে চীনের অর্থনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আগেও সমস্যার মধ্যে পড়েছে। তাছাড়া, অর্থনৈতিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আফগানিস্তান চীনের অগ্রাধিকারের তালিকাতেও নেই। বেইজিং যদিও তালেবানদের সাথে যোগাযোগ বাড়াতে চায় এবং কাবুল সরকারের সাথে তাদের যোগাযোগ বাড়ছে, কিন্তু মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কারণে আফগানিস্তানে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে, সেটার সাথে সমস্যাকবলিত শান্তি আলোচনা মিলিয়ে সার্বিক পরিস্থিতিটি সে দেশে চীনের পরিকল্পনার জন্য খুব একটা সহায়ক হবে না।
ইরানের সাথে চাবাহার রেল প্রকল্প নিয়ে সম্প্রতি বাধার মুখে পড়লেও আফগানিস্তানে ভারতের স্বার্থ এবং তাদের সাথে সম্পর্ক যথেষ্ট বহুমুখী এবং ইরানে চীনের প্রবেশের কারণে সেটা হুমকির মুখে পড়বে না। আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে সহায়তার ক্ষেত্রে এখনও অনেক কিছু অর্জনের রয়েছে ভারতের।
আফগানিস্তান ইস্যুতে এবং আফগানিস্তানে ভারত-চীনের বিনিময়ের বিষয়টি ঠিক সেভাবে পরস্পরবিরোধী নয়। আফগানিস্তান বরং প্রমাণ করেছে যে, তারা সেই আঞ্চলিক দেশগুলোর একটি যারা তাদের জাতীয় স্বার্থে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে।
সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর