কমলা হ্যারিসের অজানা অধ্যায়!
কমলা হ্যারিস - ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গ নারী কমলা হ্যারিস। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন তাকে নিজের রানিং মেট ঘোষণা দেয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর নজর কাড়তে সমর্থ হয়েছেন তিনি।
নির্বাচনে জিতলে একই সঙ্গে তিনি হবেন দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনেও যুক্ত থাকলেও ফিলিস্তিন ইস্যুতে তার অবস্থান পুরোপুরি বিপরীত মেরুতে। প্রকাশ্যেই তিনি ফিলিস্তিনে ইসরাইলি দখলদারিত্বের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। ২০১৯ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রশ্নের উত্তরে কমলা বলেন, সামগ্রিকভাবে ইসরাইল মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে চলে। যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার, স্বাধীনতা এবং সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইয়ের রেকর্ড রয়েছে কমলা হ্যারিসের। সেই তিনিই আবার লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে শরণার্থীতে পরিণত করা ইসরাইলকে মানবাধিকারের প্রবক্তা মনে করেন।
ভারতীয় মা ও জ্যামাইকান বাবার মেয়ে কমলা একজন ব্যাপটিস্ট খ্রিষ্টান। তবে তার স্বামী ডগলাস ইমহফ একজন ইহুদি। তারা মূলত আন্তঃধর্ম বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে কমলা হ্যারিস ইসরাইলের একজন ‘কট্টর সমর্থক’ হিসেবে পরিচিত। মার্কিন সিনেটর নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পরই ২০১৭ সালে আমেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির (এআইপিএসি) সমাবেশে ভাষণ দেন তিনি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান ইহুদিবাদী লবি হিসেবে পরিচিত।
ইতঃপূর্বে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই মার্কিন রাজনীতিক।
বামপন্থী ভাষ্যকার এবং প্রগ্রেসিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা কুলিনস্কির মতে, ইসরাইলের মানবাধিকার রেকর্ডের প্রতি ভ্রƒক্ষেপ না করে কমলা হ্যারিস দেখিয়ে দিয়েছেন যে, তার কথিত নৈতিক উদ্বেগের আসলে কোনো ভিত্তি নেই। আদতে এমন কোনো উদ্বেগই তার নেই। ভোটের মাঠে অগ্রসর হতেই তিনি এ ‘রাজনীতির খেলা’ খেলছেন। ২০১৮ সালে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রস্তাবে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুসালেমে ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা হয়েছিল। কমলা হ্যারিস ওই বিল প্রত্যাখ্যান করেন। কমলা হ্যারিসের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে। তার মা শ্যামলা গোপালান ছিলেন দক্ষিণ ভারতের তামিল। আর বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস ছিলেন জ্যামাইকান। শ্যামলা গোপালান ছিলেন স্তন ক্যান্সার গবেষক। ইউসি বার্কেলিতে এন্ডোক্রিনোলজিতে ডক্টরেট করার জন্য ১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন তিনি। সেখানেই পরিচয় ডোনাল্ড হ্যারিসের সঙ্গে।
অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করতেন ডোনাল্ড। এ দম্পতির দুই কন্যাসন্তানের একজন কমলা হ্যারিস ও অপরজন মায়া হ্যারিস। কমলার ছোট বোন মায়াও একজন রাজনৈতিক অ্যাকটিভিস্ট। ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা শিবিরে কাজ করেছেন তিনি। কমলার সাত বছর বয়সে মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। মায়ের কাছেই বড় হয়েছেন দুই বোন। ২০০৯ সালে মায়ের মৃত্যু হয়। কমলা হ্যারিস নিজেকে কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকলেও নিজের ভারতীয় শেকড়ের কথাও তুলে ধরেন।
সূত্র : মিডলইস্ট আই ও টাইমস অব ইসরাইল