মোদির রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা

মো: বজলুর রশীদ | Aug 13, 2020 07:09 pm
মোদির রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা

মোদির রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা - ছবি : সংগৃহীত

 

গত ৫ আগস্ট, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৯৯২ সালে ভেঙে ফেলা মসজিদের ওপর রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের এবং বিজেপি রাজনীতির অঙ্গীকার ছিল ‘রাম মন্দির’ প্রতিষ্ঠার। তিনি বলেন, ‘রাম এত দিন তাঁবুতে ছিলেন, এখন মন্দিরে থাকবেন।’ সেখানেই ৫০০ বছর ধরে ঐতিহাসিক স্থাপনা বাবরি মসজিদ এত দিন ছিল। উদ্বোধনের তারিখটি কাশ্মিরের মর্যাদা হরণের তারিখের সাথে মিলে যায়। ঠিক এক বছর আগে মোদি সরকার কাশ্মিরে সংবিধানের ৩৭০ ধারার খড়গ প্রয়োগ করেন। জ্যোতিষীরা গণাপড়া করে নাকি তারিখটি ঠিক করেছেন। ‘আগেও না পরেও না।’ তা ছাড়া ভারতে এখন প্রতিদিন ৫০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। স্বয়ং মোদির ডান হাত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে। বিতর্কিত প্রধান বিচারপতি গগৈও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। জনগণের জরুরি স্বাস্থ্যসেবাকে শক্তিশালী না করে ধর্মীয় উন্মাদনাকে উসকে দেয়া যেন মোদিদের খুবই প্রয়োজন।

বাবরি মসজিদ ভাঙচুরের কারণে ভারতের অযোধ্যার বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা হয়েছিল। দাঙ্গায় দুই হাজার নিহত হন, যার বেশির ভাগ মুসলমান। ভক্ত হিন্দুদের বিশ্বাস রাম অযোধ্যায় সাত হাজার বছর আগে জন্ম নিয়েছিলেন। দশক ধরে চলমান মামলায় আদালত স্থানটি হিন্দুদের দেন এবং মুসলমানদের মসজিদ নির্মাণের জন্য অপর একটি স্থান নির্ধারণ করেন। বিজেপির উগ্র রাজনীতির জন্য এ রায় একটি বিজয় মনে করা হয়। মোদির আরেকটি রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা হলো- সেকুলার ভারতের পরিবর্তে হিন্দু জাতীয়তাবাদের চরম ভাবধারায় ভারতকে পরিবর্তন করা। ভারতের সংবিধানবিরোধী এই পদক্ষেপ দেশের ২০০ মিলিয়ন মুসলমান গ্রহণ করতে পারেননি। একইভাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য কাশ্মিরে মোদি সরকার ডাইরেক্ট রুল জারি করেন। এটিও বিজেপির একটি অঙ্গীকার। মোদি সংসদে বলেন, ‘এটি তো মাত্র শুরু’। তার এমন বক্তব্য ভারতে সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিচ্ছে বলে সমালোচকরা দাবি করেছেন।

এ দিকে ১২ মিলিয়ন মুসলিমের স্বায়ত্তশাসিত জম্মু কাশ্মিরের স্বাতন্ত্র্য হরণের এক বছর পূর্ণ হলো ৫ আগস্ট। সাংবিধানিক এই অধিকার হরণ করায় কাশ্মিরিদের অধিকার ও সম্মান ভূলুণ্ঠিত হলো। মোদি সরকার কাশ্মিরিদের পরিচয় নষ্ট করার জন্য ইসরাইলি মডেল চালু করেছে বলে অভিযোগ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ, চীন, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের খলনায়ক শাসকরা মোদি সরকারের ধ্যানধারণাকে নীরব বা কখনো সরব সমর্থন দিয়েছেন ফলে ফিলিস্তিনিদের মতোই কাশ্মিরি মুসলমানরাও পরিত্যক্ত হয়েছে বিশ্ব দরবার থেকে। সিএএ, এনপিআর এবং এনআরসির কারণে ভারতের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ-মুসলমান, শিখ ও খ্রিষ্টানরা দুঃস্বপ্নের ভেতর দিন গুজরান করছেন। মোদির কাছে দেশের উন্নয়ন ও উন্নত জীবনযাপনের চেয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের অপসারণ করাই যেন বড় কাজ। গত ফেব্রুয়ারিতে নয়াদিল্লিতে মুসলমানদের আক্রমণ ও মহিলাদের ধর্ষণ, তাদের ঘরবাড়ি পোড়ানো ইত্যাদি আরো একটি কালো অধ্যায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের। ফিলিস্তিনি ভূমি থেকে যেমন আরবদের বের করে সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হয়েছে, তেমনি কাশ্মিরেও মুসলমানদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করার জন্য সংবিধানের ৩৭০ ধারার প্রয়োগ করেছে সরকার। এরই মধ্যে ২৫ হাজার অমুসলিম বহিরাগতকে কাশ্মিরে বসবাস করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

মহাকাব্য রামায়ণে উল্লেখ রয়েছে, বর্তমান উত্তর প্রদেশের অযোধ্যার সরযূ নদীর পাড়ে রামের জন্ম। হিন্দুদের একটি দল মনে করেন যে, রামের জন্মস্থান বর্তমান রাম মন্দির বানানোর স্থানেই, অর্থাৎ যেখানে বাবরি মসজিদ ছিল। মসজিদটি ১৫২৮-২৯ সালে তৈরি হয়েছিল বলে মনে করা হয়। জনৈক মীর বাকী খুব সম্ভবত বাকী তাসখন্দের, যিনি বাদশা বাবরের এক সেনাপতি ছিলেন তৈরি করেন। হিন্দুত্ববাদীদের দাবির ঐতিহাসিক দলিল-প্রমাণ খুবই অপ্রতুল। এই তথ্য অনুসারে মোগলরা হিন্দুদের মন্দির ভেঙে এই মসজিদ তৈরি করেছিলেন। তাদের বিপক্ষ বলেছেন যে, এই দাবি প্রকাশ পেয়েছে মাত্র ১৮ শতকে! এ দাবির অনুকূলে কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। আদালতের রায়েই এসব উল্লেখ করা হয়েছে।

দু’জন হিন্দু গবেষক, কৃষ্ণ ঝা এবং ধীরেন্দ্র কে. ঝা ২০১২ সালে প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের জবানবন্দী নিয়ে লিখেন, ১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধীকে হত্যার পর রামের একটি মূর্তি বাবরি মসজিদে পুঁতে রাখা হয়। স্বল্প পরিচিত সাধু অভিরাম দাস ও তার সহকর্মীরা রাতে মসজিদে ঢুকে এই কর্ম করেছিলেন। আরো জানা যায়, হিন্দু মহাসভা এ কাজে পেছন থেকে ইন্ধন জোগায়। ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে ভারতে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিজেপি ও আরএসএস একত্র হয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জাতীয় রাজনীতিতে সরব হয়। কেন্দ্রে অটল বিহারি বাজপেয়ির নেতৃত্বে কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়।

কিন্তু ‘গরিবি হঠাও, রুটি-কাপড়া-মকান’ এসব নিছক স্লোগানই থেকে যায়। ভারতে ২৪০ মিলিয়ন যুবকের চাকরি নেই, লাখ লাখ অশিক্ষিত, লাখ লাখ মানুষ পুষ্টির অভাবে ধুঁকছে, গভীরে প্রোথিত দরিদ্রতা।
অবস্থা এতদূর গড়িয়েছে যে, সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয়ের চারটি গ্রাম বাংলাদেশের সাথে যুক্ত হতে চাইছে। দেশটির সরকার দীর্ঘ দিন ধরে রাস্তা পাকা না করায় এমন আগ্রহ প্রকাশ করেছেন গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। সম্প্রতি মনিপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘এফপিএসজে রিভিউ অব আর্টস অ্যান্ড পলিটিক্স’ এই খবর প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আরেকটু উন্নত জীবনের আশায় মেঘালয়ের গ্রামবাসীরা বাংলাদেশের অধীনে যেতে চান। এই চারটি গ্রাম মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে। টাইমস অব ইন্ডিয়াও একই সংবাদ প্রকাশ করেছে।

‘সঙ্ঘ পরিবার’ ধর্মীয় শত্রুতার বীজে পানি সেচন করতে থাকে আর হিন্দুত্ববাদের চারাগাছকে মহীরুহে পরিণত করার কাজে লেগে যায়। যুবকদের ব্যস্ত রাখার পথ ধরে। আরএসএস কর্মসূচি দিতে থাকে। হাজার হাজার ‘শাখা’ সারা ভারতে তৈরি করার কাজ চলতে থাকে। কিছু নির্দিষ্ট প্রদেশে, যেমন গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, উড়িষ্যা ও কর্নাটককে অভিযানের ক্ষেত্র বানানো হয়। তখন ভারতের অর্থনীতি মোটেই ভালো ছিল না। ভারত ইকোনমিক জায়ান্টে পরিণত হওয়া, রিডিফাইনিং ইন্ডিয়া- এসব কথার কথা। কৃষকদের ব্যাপক আত্মহত্যার চিত্র ভারত ছাড়া দুনিয়ার আর কোথাও দেখা যায় না। মোদি মুসলমানদের দাবি ও আশা-আকাক্সক্ষাকে পদদলিত করে হিন্দুত্ববাদ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

হিন্দু মিথ অনুসারে শিব হিন্দু ধর্মের এক বড় দেবতা, ইনি স্ত্রী পার্বতী, দুই সন্তান গণেশ ও কার্তিক কৈলাস পর্বতে শাশ্বত ধ্যানে নিমগ্ন। হিন্দু ধর্মমতে শিবের স্থান বেশ উপরে। কৈলাস পবর্ত তিব্বত অঞ্চলে যা চীনের আওতায়। এশিয়ার চারটি নদী ওখান থেকে নির্গত হয়েছে। এ রকম এক বড় দেবতার বিষয় চিন্তা না করে মোদি মনুষ্যরূপী দেবতার সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিচ্ছেন। এসব প্রচেষ্টা রামের মতো এক উদার ও মহৎ প্রাণ ব্যক্তিকে অপমান করার শামিল। যিনি মানবপ্রেমের বাঁশি বাজিয়েছেন তার স্মরণে বিজেপি-আরএসএস হিংসার চারাগাছের শুশ্রƒষা করছেন।

রামকে বা মর্যাদাবান পুরুষ এবং মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ধার্মিক ও পুণ্যবান হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তিনি সাম্রাজ্য ছেড়ে দিয়েছিলেন শুধু তার বিমাতার অনুভূতিতে আঘাত লেগে তিনি যেন কষ্ট না পান। এ কারণে তার ১৪ বছরের নির্বাসন। তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল কারো সাথে বিরোধে না যাওয়া। রাবণকে হত্যার আগে তিনি ছোট ভাই লক্ষ্মণকে বলেছিলেন রাবণের আশীর্বাদ নিতে; কেননা রাবণ ছিলেন এক সিদ্ধহস্ত ব্রাহ্মণ পণ্ডিত। মাইকেল মধুসূদন মেঘনাদবধ মহাকাব্যে রাবণের এই ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। রাম সবসময় বিরোধ ও বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকতেন। তার পরও একশ্রেণীর হিন্দু সীতার বনবাস-পরবর্তী বিষয় নিয়ে রামের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন।

কিন্তু এই মহান চরিত্রের ‘রাম নাম’ নিয়ে হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিকরা খেলা জমিয়েছেন। মন্দির বানানোর জন্য একটি ঐতিহাসিক মসজিদকে ধূলিসাৎ করেছেন। রামপ্রেমীরা বলছেন এসব কলিযুগের কাণ্ড। রাম মন্দিরের প্রধান পুরোহিত বলেছেন, কোরবানিতে মুসলমানরা কোনো গরু জবাই দিতে পারবে না। তবে ‘পাঁঠা বলি’ দিতে অর্থাৎ পাঁঠা, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতির মাধ্যমে কোরবানির কাজ সারতে পারবে। মহিষের বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মহিষ অসুরের বাহন বিধায় তার গোশত ভক্ষণকে হিন্দুরা পুণ্যজ্ঞান করে থাকেন।

জনগণ দেখেছে, কিভাবে বিজেপি মসজিদ ভাঙা, গুজরাটে মুসলমানদের পোড়ানো, গরুর নামে মুসলমান হত্যা, জোরপূর্বক গোমূত্র পান করানোর মাধ্যমে ব্যাপক গণ-আন্দোলনে উত্থান ঘটিয়েছে। যদি রাম মন্দির আন্দোলন না থাকে তবে বিজেপির কোনো রাজনীতিও ক্রিয়াশীল থাকছে না। তাই সমালোচকরা বলছেন অযোধ্যার মন্দির আসলে রাজনৈতিক মন্দির। একটি ব্যাপক জানার বিষয় যে, আরো অনেক স্থানকে ‘রামের জন্মভূমি’ হিসেবে পরিগণিত করা হয়েছে। অযোধ্যায় আরো ১১টি মন্দিরকে রামের জন্ম মন্দির হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তা ছাড়া ভারতের অন্যান্য স্থান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও নেপালের অনেক স্থান ‘রামের জন্মভূমি’ হিসেবে পরিচিতি।

‘রাম মন্দির আন্দোলন’ হিন্দু ধর্মের ‘উদার ও সার্বজনীন’ মতবাদের গোড়ায় কুঠারাঘাত করেছে। স্বয়ং রামকে সচ্চরিত্রবান ও নির্ভেজাল চরিত্র থেকে একজন আক্রমণকারী যোদ্ধার মূর্তিরূপে আবির্ভূত করা হয়েছে। গেরুয়া পোশাক পরিধান করে খড়ম, ত্রিশূল, লাঠি, ভোজালি, কিরিচ, ডাণ্ডা, মুগুর নিয়ে মিছিল করে বিরোধী পক্ষের ঘরবাড়ি জ্বালানো ও নরবলি অনেকের কাছে পুণ্যের কাজ! একজন ধার্মিক হিন্দু মনে করেন ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান। অযোধ্যায় অনেক মন্দির আছে যেগুলোতে শত বছর ধরে রামের জন্মস্থান হিসেবে পূজা-অর্চনা দিয়ে আসছেন তারা। এখন ওই সব মন্দিরের অবস্থান বিশ্বাসীদের কাছে কী হবে? কে এ বিষয়টি এখন সুরাহা করবেন? কী কারণে একটি মসজিদের জায়গাকে রামের জন্মস্থান হিসাবে ‘পিন পয়েন্ট’ করা হলো তা গভীরভাবে ভেবে দেখার বিষয়। হিন্দুত্ববাদের গরম ফসল এখন বিজেপির ঘরে। সামনের দিনগুলো সর্বভারতীয় না হয়ে শুধু বিজেপিপন্থীদের হলে ভারতীয়দের রাজনৈতিক দর্শনে আঘাত করা হবে। হিন্দু ধর্ম অনেক পুরনো, তার সামগ্রিকতা ও বৈচিত্র্যকে হিন্দুত্ববাদ যেন খাদে ফেলে দিয়েছে।

অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের হিন্দুত্ববাদের শত্রু হিসেবে বসানো হয়েছে, যা বড় একটি বিড়ম্বনা বলে ভারতীয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদরা মনে করছেন। হিন্দু ধর্মের কোনো প্রতিযোগিতায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই। হাজার বছর ধরে এটি বেঁচে বর্তে আছে। সত্য, দিব্য ও ওঁমকে পাওয়ার জন্য বহু হিন্দু আরাধনা করে আসছেন। বৌদ্ধধর্ম, জৈন ও শিখ ধর্মের ঢেউ হিন্দু ধর্মবিশ্বাসের ওপর আছড়ে পড়েছে, কোথাও আঘাত করেছে। সেন রাজত্বের সময় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কচুকাটা করা হয়েছিল। এখন হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রসার ও উৎসরণের জন্য ‘শত্রু’র দরকার হওয়ায় মুসলমান বা ইসলামকে সে পিঁড়িতে বসানো হয়েছে, যা শুধু ন্যক্কারজনক নয়, বিপজ্জনকও।

ধর্মের বিষয়টি এমন, যেকোনো মানুষ, যেকোনো ধর্মের বিশ্বাসী বা নাস্তিক হোক না কেন, যেকোনো ধর্মের আঙিনায় ধর্মচর্চা করতে বা শিখতে পারে। গ্রহণ বা বর্জনের বিষয়টি একান্তই তার নিজস্ব। ধর্ম সহমর্মিতা, সহাবস্থান ও ভালোবাসা শেখায়। কিন্তু কোরবানি ও মিলাদুন্নবী সা: বন্ধ করা, তালাক বেআইনি ঘোষণা করা, শব্দদূষণ বলে আজান বন্ধ করা, গোমূত্র পানে বাধ্য করা, হিজাব পরিধান বেআইনি করা, যোগীর মতো চুল-গোঁফ রেখে দাড়ি না রাখার আওয়াজ ওঠানো, এনআরসির নামে লাখ লাখ মানুষকে বিভক্ত করা, বঙ্গোপসাগরে ফেলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া এসব হিন্দুত্ববাদের ইস্যু হলেও হিন্দু ধর্মের বিষয় নয়। রামের কোনো ধর্মচিন্তা এসব বিষয়কে উৎসাহ জোগায় না।

অযোধ্যাতেই ‘রাম জানকি মন্দির’ রয়েছে যার মাধ্যমে সর্বধর্মের মানুষের মধ্যে ধর্মের বিষয় আলোচিত হয়। ‘সর্ব ধর্ম সম্ভব ট্রাস্ট’ সেখানে কাজ করছে। প্রকৃতি পূজারী ও অবিশ্বাসীরাও সেখানে সমবেত হয়ে ধর্মের অমৃতবাণী শুনতে পারে। আচার্য যুগল কিশোর শাস্ত্রী, মন্দিরের পুরোহিত ও মহন্ত, তিনি অসাম্প্রদায়িক মত প্রচারের জন্য ভারতে বিখ্যাত। ফয়সল খান যিনি ‘খোদায়ী খিদমতগার সংস্থা’ নিয়ে কাজ করেন, বিহারের দলিত পণ্ডিত হরিনারায়ণ ঠাকুর, পাটনার হিজড়া প্রতিনিধি রেশমা- এরা মন্দিরের ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করছেন। এ স্থাপনায় গুরুদোয়ারা ও খাজা বাবার দরগার মতো বিনামূল্যে খাবার দেয়া হয়। এই খাবারের আয়োজক হলেন, একজন মুসলমান যার নাম দানিশ আহমদ। তাদের মধ্যে সর্বভারতীয় দর্শন ও ধর্মের আদর্শ এবং অসাম্প্রদায়িকতা কাজ করছে। অনেক সাধু এখানে আছেন। তারা বলেন, এটিই রামের অহিংসা ও ভালোবাসা এবং সর্বজীবে প্রেম। সবাই এখানে শান্তি পায়, কারো সাথে বিরোধ নেই। রামের আলোকবর্তিকা তারাই প্রজ্বলিত রাখবেন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us