নস্ট্রাডেমাসের ভবিষ্যদ্বাণীতে ইরানি বিপ্লব
নস্ট্রাডেমাস - ছবি : সংগৃহীত
গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এরই মধ্যে বিশ্বের অন্তত ১৮৮টি দেশ বা অঞ্চলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। চীনের উহান শহর থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) প্রতিদিন মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা কেবল বাড়ছেই। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, ৩১ জুলাই ২০২০, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৭৪ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৫ জনে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ছয় লাখ ৭৬ হাজার ৪০৯ জন। সুস্থ হয়েছেন এক কোটি ৯ লাখ ৩২ হাজার ৯১৮ জন।
একইভাবে আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই যে, এখন থেকে ৪৫০ বছরেরও বেশি আগে ফ্রান্সের এক অতীন্দ্রিয় ভবিষ্যদ্বক্তা নস্ট্রাডেমাস অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন, যার সব ফলপ্রসূ না হলেও কিছু বাস্তবায়িত হয়ে বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। ৫৪০ বছরেরও আগে কবিতার ছন্দে তিনি লিখেছেন ‘ঝড়, মহামারী অথবা যুদ্ধ পারস্যের রাজার পতন ঘটাবে না। এটি বিশ্বাসের (ঈমান) ওপর ভিত্তি করে হবে এবং শুরু হবে ফ্রান্স থেকে।’
ভবিষ্যদ্বাণীটি এখানে তুলে দেয়া হলো :
‘Rain, fame and war will not cease in Persia, too great a faith will betray with the monarch.These (actions) started in France will end there. A secret sign for one to be sparing.’
এখানে স্মরণযোগ্য : আয়াতুল্লাহ খোমেনি ফ্রান্সে নির্বাসিত হয়ে সেখান থেকেই ইসলামী বিপ্লবের নেতৃত্ব প্রদান করে শেষে বিজয়ী হন ১৯৭৯ সালে। ভবিষ্যদ্বাণীটিতে পারস্যে বা ইরানে বিপ্লব হবে ফ্রান্সে বসে- এত আগে এ ধরনের কল্পনা করাও কারো পক্ষে কখনো কি সম্ভব? অত্যাধুনিক বিশ্বের বিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তি কি এর কোনো সুরাহা করতে সক্ষম? বাস্তবে আজকের বিজ্ঞান এ ধরনের কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করার সুযোগ খোলা না রাখলেও ইতিহাস বলছে, যুগে যুগে বিজ্ঞানীরা অবশ্য অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করে সফল হয়েছেন।
নিম্নের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোরও কি কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে বা দেয়া যাবে? এমনকি কাকতালীয়ভাবেও কি কোনোভাবে এরকম ভবিষ্যতের কথা বলা বাস্তবে কি কখনো সম্ভব?
১২০১ সালে তৎকালীন বাংলার রাজা লক্ষণ সেন বাংলার রাজধানী নদীয়ায় অবস্থান করছিলেন। কারণ নদীয়া ছিল সবচেয়ে সুরক্ষিত অঞ্চল। রাজসভার কিছু দৈবজ্ঞ পণ্ডিত তাকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, এক তুর্কি সৈনিক তাকে পরাজিত করতে পারে। লক্ষণ সেন নদীয়ার প্রবেশপথ রাজমহল ও তেলিয়াগড়ের নিরাপত্তা জোরদার করেন। লক্ষণ সেনের ধারণা ছিল যে, বর্তমান ঝাড়খণ্ডের শ্বাপদসঙ্কুল অরণ্য দিয়ে কোনো সৈন্যবাহিনীর পক্ষে নদীয়া আক্রমণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু বখতিয়ার সে পথেই তার সৈন্যবাহিনীকে নিয়ে আসেন। নদীয়া অভিযানকালে বখতিয়ার ঝাড়খণ্ডের মধ্য দিয়ে এত দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয়েছিলেন যে, তার সঙ্গী মাত্র ১৮ জন সৈনিক তার সাথে তাল মেলাতে পেরেছিলেন।
বখতিয়ার সোজা রাজা লক্ষণ সেনের প্রাসাদদ্বারে উপস্থিত হন এবং প্রহরীদের হত্যা করে প্রাসাদের ভেতরে প্রবেশ করেন। এতে প্রাসাদের ভেতরে হইচই পড়ে যায় এবং লক্ষণ সেন দিগি¦দিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে পেছনের দরজা দিয়ে নৌপথে বিক্রমপুরে চলে যান। লক্ষণ সেনের দৈবজ্ঞ পণ্ডিতরা যা যা বলেন; ঠিক সে রকমটি ঘটে গেল, কিন্তু এর কি কোনো বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা আদৌ সম্ভব! কিভাবে দৈবজ্ঞ পণ্ডিতরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তার চেয়ে ও গুরুত্বপূর্ণ হলো, এ ঘটনা প্রমাণ করে যে, ভবিষ্যতের ঘটনাপ্রবাহ কোথাও সংরক্ষিত যা আমাদের কল্পনায়ও আসে না। আর আছে বলেই এরকম অনেক ঘটনা বিশ্বে ঘটেছে, যা আগেভাগে প্রকাশ সম্ভব হচ্ছে।