ইবাদত কবুলের ৩ শর্ত
ইবাদত কবুলের ৩ শর্ত - ছবি : সংগৃহীত
মানবজাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য আল্লাহ তায়ালার ইবাদত ও দাসত্ব করা। পবিত্র কুরআনে তিনি ঘোষণা করেছেন, আমি মানুষ এবং জিন জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। (সূরা জারিয়াত : ৫৬)
আর ইবাদত কবুল হলে সফলতা সুনিশ্চিত। কিন্তু আমাদের ক’জনের ইবাদত কবুল হয়? সুতরাং এমনভাবে ইবাদত করতে হবে যেন তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়। যেকোনো ইবাদত কবুল বা গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য তিনটি প্রধান ও মৌলিক শর্ত রয়েছে।
প্রথম শর্ত : ইখলাসের সাথে ইবাদত করা। ইখলাস মানে একমাত্র আল্লাহকে খুশি ও সন্তুষ্ট করার জন্য ইবাদত করা। ইখলাস হলো, ইবাদতের প্রাণ। প্রাণহীন দেহের যেমন মূল্য নেই, তেমনি ইখলাস ছাড়া ইবাদতেরও কোনো দাম নেই। যদি ইবাদতের সাথে মনের অভিপ্রায়, খেয়াল-খুশি যুক্ত হয় তাহলে সেটা ইখলাস পরিপন্থী বলে বিবেচিত হবে এবং সে ইবাদত আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তাদের শুধু এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁর জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে। (সূরা বায়্যিনাহ : ৫)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, হে রাসূল! আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কাজকর্ম, আমার জীবন, আমার মরণ, সবই মহাবিশ্বের পালনকর্তার জন্য। (সূরা আনআম : ১৬২)
হাশরের ময়দানে আল্লাহ পাক অনেক বড় বড় রিয়াকারকে (লোক দেখানো ইবাদতকারী) প্রতিদান না দিয়ে বলবেন, তোমরা আমার সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত করোনি বরং তোমরা তো ইবাদত করেছ মানুষ তোমাদেরকে বড় আবেদ বলার জন্য। আর দুনিয়াতে তা বলা হয়ে গেছে।
তেমনি হাদিস শরিফে বিবৃত হয়েছে, নিয়তে গড়বড় থাকলেও ইবাদতের সাওয়াব পাওয়া যায় না। যদিও নিয়তকৃত বিষয়টি অর্জিত হয়।
হজরত উমর রা: বলেন, আমি প্রিয়নবী সা:কে বলতে শোনেছি যে, আমলের ফলাফল নির্ভর করে নিয়তের ওপর। সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়া লাভের জন্য অথবা কোনো নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে হিজরত করবে সে তা পেয়ে যাবে আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলকে পাওয়ার জন্য হিজরত করবে সেও তাদের পাবে। (সহিহ বুখারি : ৩৮৯৮)
দ্বিতীয় শর্ত : হালাল খাবার ভক্ষণ করা। একজন মুমিন বান্দাকে আকিদা-বিশ্বাস ও ইবাদতের ক্ষেত্রে যেমন কিছু বিধিবিধান, কিছু নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়, ঠিক এমনিভাবে তার জীবন চলার যত উপকরণ তাতেও কিছু বিধিবিধান মেনে চলতে হয়। এর ভেতরে রয়েছে তার খাবার-দাবারও। খাবারের বিধান সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে রাসূলগণ! পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎ কাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত। (সূরা মুমিনুন : ৫১)
অনুরূপ হাদিস শরিফে নবীজী সা: বলেন, দীর্ঘ সফরে ক্লান্ত, এলোমেলো কেশি এক লোক আকাশ পানে হাত দারাজ করে দোয়া করে হে প্রভু! হে প্রতিপালক! অথচ তার পানাহার হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবিকাও হারাম। এমতাবস্থায় কিভাবে তার দোয়া কবুল হবে। (জামে আত তিরমিজি : ২৯৮৯)
হালাল খাবার ভক্ষণ, এমন মৌলিক বিষয় যে, তা গ্রহণ না করলে জান্নাতেই যাওয়া যাবে না। হাদিস শরিফে এমন কঠোর বাণীও উচ্চারিত হয়েছে।
তৃতীয় শর্ত : সুন্নত পদ্ধতিতে ইবাদত করা। ইবাদত বা আমল কবুল হওয়ার জন্য প্রিয়নবী সা:-এর অনুসরণ ও অনুকরণ জরুরি। কোনো মনগড়া পদ্ধতিতে ইবাদত করলে তা কবুল হবে না। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, রাসূল সা: তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো আর যা থেকে তিনি তোমাদের নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাকো। (সূরা হাশর : ৭)
হাদিস শরিফে নবীজী ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এমন আমল করল যার মধ্যে আমাদের নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত বলে গণ্য হবে। (সহিহ মুসলিম : ৪৩৮৫)
নবীজী সা: প্রতিটি আমলের শুধু তরিকাই বলে দেননি বরং প্র্যাক্টিক্যালি শিক্ষাও দিয়ে গেছেন। রাসূল সা: একটি ইবাদত করতেন আর বলতেন আমি যেভাবে করি তোমরাও সেভাবে করো। যেমন নামাজ সম্পর্কে তাঁর বাণী, তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখো সেভাবে নামাজ পড়ো। (সহিহ বুখারি : ৭২৪৬)
আল্লাহ আমাদের বিশুদ্ধভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন!
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম, সুয়াগাজী, সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা