করোনা পরিস্থিতিতে মর্নিং ওয়াক ঠিক হবে?
করোনা পরিস্থিতিতে মর্নিং ওয়াক ঠিক হবে? - ছবি : সংগৃহীত
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, করোনা অতিমারীর সময়ে মর্নিং ওয়াকে যাওয়া উচিত হবে কি না। সেক্ষেত্রে আমার উত্তর, অবশ্যই সকালে হাঁটা যাবে। তবে কতকগুলো নিয়ম মানতে হবে।
• দল বেঁধে হাঁটা নয় : সকালের দিকে দল বেঁধে হাঁটেন অনেকে। অতিমারীর সময় এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। বরং একে অপরের সঙ্গে ৬ ফুটের শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটতে হবে। আড্ডা দেয়া যাবে না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে, ৩০ মিনিট হেঁটে ফের বাড়িতে ফিরে আসতে হবে।
• বয়স্করা বিশেষ সতর্কতা নিন : সব বয়সের মানুষই সকালে হাঁটতে পারেন। তবে সত্তরোর্ধ্ব মানুষেরা বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যেই হাঁটুন। অর্থাৎ বয়স্ক মানুষেরা ছাদ, বারান্দা, বাড়ির সামনে চাতালে পায়চারি করলেই ভালো হয়। আসলে বেশি বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে ‘রিভার্স কোয়ারেন্টাইন’-এর ব্যবস্থা করতে হয়। অর্থাৎ বিদেশ থেকে ছেলেমেয়েরা দেশে ফিরলে, বৃদ্ধ বাবা ও মা’কে বাড়ির মধ্যেই পৃথকভাবে রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। ফলে সন্তানের থেকে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা কমে।
• মাস্ক পরে হাঁটুন : মাস্ক ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউই হাঁটতে বেরবেন না।
• কীভাবে হাঁটবেন : সারা দিনে আধা ঘণ্টা হাঁটলেই যথেষ্ট। তবে টানা হাঁটতে হবে। থেমে থেমে হাঁটলে চলবে না। এভাবে সপ্তাহে মোট ১৫০ মিনিট হাঁটলেই উপকার পাওয়া যায়।
• অন্য শারীরিক সমস্যা থাকলে : যাদের স্থূলত্বের সমস্যা রয়েছে, হাঁটুতে ব্যথা রয়েছে, তারা হাঁটতে যেতে না পারলেও বসে বসেও ব্যায়াম করতে পারেন। সেক্ষেত্রে একটা চেয়ারে বসে তারা ছোট বেলায় স্কুলে ফিজিক্যাল ট্রেনিং করার মতো ‘১-২-৩-৪’ করে হাতের সঞ্চালন করতে পারেন। আবার চেয়ারে বসেই দুটি পা’কে পাশাপাশি রেখে কোমর থেকে পা শূন্যে তোলা ও নামানোর মতো এক্সারসাইজ করতে পারেন। এমনকী শুয়ে-শুয়েও এভাবে হাতের ও পায়ের সঞ্চালন করা যায়।
হাঁটাহাঁটির উপকারিতা
• হাঁটাহাঁটির অভ্যেস শরীরের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। হাঁটলেই শরীরের বিভিন্ন পেশিগুলিতে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেনের দরকার পড়ে। দ্রুত হারে সেই অক্সিজেন পেশিতে পৌঁছে দিতে রক্ত সঞ্চালনও দ্রুত হতে থাকে। শরীরের পেশিরও বৃদ্ধি ঘটে। কারণ, পেশিতে যত বেশি রক্তসঞ্চালন হবে, পেশিরও বৃদ্ধি তত বেশি হবে। ফ্যাট জমবে কম।
• হাঁটাহাঁটির অভ্যেসে গ্লুকোজ মেটাবলিজম বাড়ে। এককথায়, শরীরে শর্করার শোষণ ও আত্তীকরণের হার বাড়ে। এই কারণেই সুগারের রোগীকে হাঁটতে বলা হয়। আবার সুস্থ মানুষ নিয়মিত হাঁটলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।
• বেশি দুশ্চিন্তা করলে শরীরে কর্টিজল নামে হর্মোন বেরয়, যা রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়ায়। হাঁটাহঁটির মতো এক্সারসাইজ করলে আমাদের শরীরে এন্ডোর্ফিন নামে হর্মোন বের হয়। এন্ডোর্ফিন দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে।
• হাঁটলে ফুসফুসের ব্যায়াম হয়। কমবয়স থেকেই হাঁটার অভ্যেস করলে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের সমস্যা এড়ানো যেতে পারে।
• হাঁটা মানেই ক্যালরি বার্ন। তাই হেঁটে অতিরিক্ত মেদ ঝরানো সম্ভব।
• সকালের রোদে হাঁটলে ত্বকে ভিটামিন ডি সংশ্লেষ হয়। ফলে হাড়ের ক্ষয় রোধ হয়।
অর্থাৎ হাঁটাহাঁটি করলে শরীরের সার্বিক উন্নতি হয়। সুগার, প্রেশার, কোলেস্টেরলের মতো বিভিন্ন জটিল সমস্যা বাসা বাঁধতে পারে না। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়। অতএব সকালে মাস্ক পরে ও বাকি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা মেনে প্রাণভরে হাঁটুন। সুস্থ থাকুন। অতিমারীকে হারিয়ে দিন।
লেখক : অধ্যাপক, পিজি হাসপাতালের জেনারেল মেডিসিন বিভাগ, কলকাতা
সূত্র : বর্তমান