ভারতের রাফাল, পাকিস্তানের আল-খালিদ-১
ভারতের রাফাল, পাকিস্তানের আল-খালিদ-১ - ছবি : সংগৃহীত
দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার দীর্ঘস্থায়ী কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে। মতপার্থক্য প্রশমিত করার বদলে উভয় দেশ তাদের যুদ্ধ সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় বিমান বাহিনীতে রাফাল জঙ্গি বিমান ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে আল-খালিদ-১ ট্যাঙ্ক অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনা এই অঞ্চলের কৌশলগত পরিবেশে স্থায়ী প্রভাব ফেলবে।
ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক ক্রয়
প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশগুলো থেকে সামরিক ক্রয় ও সামরিক সরঞ্জামের বাধাহীন দেশীয় উন্নয়ন জনগণের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে বাধার সৃষ্টি করে, বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য। অধিকন্তু সামরিক শক্তিবৃদ্ধি আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে নিরাপত্তা সঙ্কট সৃষ্টি করে। এর ফলে সৃষ্টি হয় অস্ত্র প্রতিযোগিতা।
ভারত ও পাকিস্তান ধরন ও সংখ্যার দিক থেকে তাদের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার সম্প্রসারণ ও আধনিকায়ন করছে। তারা তাদের প্রচলিত সামরিক বাহিনীও শক্তিশালী করছে।
গত ২৯ জুলাই ভারতীয় বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন ১৭-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ৫টি রাফাল জঙ্গি বিমান। রাফাল হলো উন্নত পঞ্চম প্রজন্মের বিমান। এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২,২০০ কিলোমিটার।
বলা হচ্ছে, ২০২১ সালে বাকি ৩১টি রাফালও পেয়ে যাবে ভারত। বর্তমানে চীনের সাথে সীমান্ত উত্তেজনায় রয়েছে ভারত। পাকিস্তানের সাথেও তার উত্তেজনা চলছে।
রাফাল জঙ্গি বিমান
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ঘোষণা করেছেন যে রাফালের আগমনে ভারতের সামরিক ইতিহাসের নতুন যুগের সূচনা ঘটবে। বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক নীতি ও এলএসি রক্ষায় দুর্বলতার মুখে এই ঘটনাকে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্ব স্বস্তির কারণ হিসেবে দেখছে।
ভারতের সামরিক মতবাদ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী ও চীনের বিরুদ্ধে ভয় প্রদর্শনের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। রাফাল জঙ্গি বিমান ভারতের পরমাণু ও প্রচলিত উভয় ধরনের আঘাত হানার সক্ষমতা বাড়াবে। এটি ভারতীয় ও পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর ভারসাম্য বিন্যাসেও ভূমিকা রাখবে। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর রয়েছে এফ-১৬ ও জেএফ-১৭ জঙ্গি বিমান। এগুলো চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির ফলে ক্ষমতাসীন ভারতের ক্ষমতাসীন এলিটরা হয়তো পাক্সিতানের বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মধ্যেমে তার সামরিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারবে। এ ধরনের সামরিক পদক্ষেপ উভয় দেশের জন্যই বিপর্যয়কর হতে পারে।
চীনের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক অবস্থান
চীনের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক অবস্থান গ্রহণে রাফাল জঙ্গিবিমান অনেক বেশি ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করলেও বাস্তবে এগুলো তেমন কিছু করতে পারবে না।
ভারত ইতোমধ্যেই পরমাণু সক্ষমতাপূর্ণ স্বল্প, মাঝারি ও আন্তঃমহাদেশীয় পাল্লার ব্যালাস্টিক ও ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ করেছে। এগুলো স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ডের (এসএফসি) অধীনে রাখা হয়েছে। এসব অস্ত্র দিয়ে এসএফসি চীন ও পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডের টার্গেটগুলোতে হামলা চালাতে সক্ষম।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অগ্নি-৩ ভারতের উত্তর-পূর্ব এলাকা থেকে নিক্ষেপ করা হলে চীনের মূল ভূমিতে আঘাত করতে পারবে। অগ্নি-৫ দিয়ে ভারত আরো ভেতর থেকে আক্রমণ চালাতে পারবে।
রাফাল চুক্তির রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ
সামরিক মাত্রা ছাড়াও রাফাল চুক্তির রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ রয়েছে। ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসসহ অনেকে অভিযোগ করছে যে ৯.৪ বিলিয়ন ডলারের ফরাসি রাফাল চুক্তিটি স্বচ্ছ নয়, ভারত অতিরিক্ত অর্থ দিচ্ছে।
পাকিস্তান-ভারত অস্ত্র প্রতিযোগিতা
ভারতের সাথে সামরিক ভারসাম্য রক্ষা করতে গিযে পাকিস্তান হিমশিমখাচ্ছে। ২৮ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী আল-খালিদ-১ মেইন ব্যাটল ট্যাঙ্ক তার আর্মার্ড কোর রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করে। চীন ও ইউক্রেনের সহযোগিতায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হেভি ইন্ড্রাট্রিজ তক্ষিলা এটি নির্মাণ করে।
আল-খালিদ-১ মেইন ব্যাটল ট্যাঙ্কের বৈশিষ্ট্য
এই ট্যাঙ্কটির দুর্দান্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিশেষ করে এর আক্রমণ করার ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি। এতে মাজল রেফারেন্স সিস্টেম, সলিড স্টেট অটোলোডার, ইমপ্রুভড রেডিয়েশন ডিটেক্টর রয়েছে। পরমাণু পরিবেশেও এটি কাজ করতে সক্ষম। এটি উচ্চতর কৌশলগত চলমানতা রয়েছে। নগর যুদ্ধেও এটি সক্ষম।
আল-খালিদ-১ মেইন ব্যাটল ট্যাঙ্ককে যুদ্ধক্ষেত্রে রাজা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারতের কোল্ড স্ট্রার্ট ডকট্রিনের মোকাবেলায় এটি অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনস্বীকার্য যে উত্তপ্ত ও জটিল আঞ্চলিক কৌশলগত পরিবেশে ভারত ও পাকিস্তানের প্রয়োজন তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকায়ন করা। কিন্তু অস্ত্র প্রতিযোগিতা সবসময়ই ক্ষমতার পরিবর্তন করে, ভুল ধারণার সৃষ্টি করে। আর তা সঙ্ঘাতময় দলগুলোকে স্থিতিশীলতার বদলে প্রতিরোধমূলক যুদ্ধ কৌশল গ্রহণে উৎসাহিত করে।
সংক্ষেপে বলা যায়, ব্যাপক সমরসজ্জা ভারত ও পাকিস্তানের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিপজ্জনক। আর তা দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি সৃষ্টি করে।
জিভিএস