রুশ ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ?
রুশ ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ? - ছবি : সংগৃহীত
করোনাভাইরাস নিয়ে ভয়াবহ দুশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়ে বিশ্বকে প্রথম করোনা ভ্যাকসিন দিলো রাশিয়া।অপেক্ষার আট মাস পর অবশেষে জনসাধারণের জন্য কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে এলো রাশিয়া। ভ্লাদিমির পুতিনের দেশই বিশ্বে প্রথম যারা মানবদেহে এই ভ্যাকসিন ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিলো। মঙ্গলবারই এই ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পুতিনের মেয়ের দেহেই এই ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। এই ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে রাশিয়ার গামালেয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি। এটি সেই ভ্যাকসিন উৎপাদক যারা গত মাসেই জানিয়েছিল মানবদেহে এই ভ্যাকসিনের সফল প্রয়োগের কথা।
কোভিড-১৯ ভাইরাস রুখতে বিশ্বে যখন ভ্যাকসিন উৎপাদনে প্রথম সারিতে রয়েছে অক্সফোর্ড-মডার্নার মতো ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থারা। ঠিক সেই সময়েই সকলকে তাক লাগিয়ে প্রথম সারির প্রথমে উঠে এলো রাশিয়া।প্রথম পর্যায়ে এই ভ্যাকসিনে মানবদেহে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। দ্বিতীয় ধাপে দেহে গড়ে উঠছে প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনটাই জানান হয়েছে।
রাশিয়ার এই ভ্যাকসিনের নাম কী?
মস্কোর গামালেয়া ইনস্টিটিউটের এই ভ্যাকসিনের নাম- গাম-কোভিড-ভ্যাক লাইও ভ্যাকসিন (Gam-COVID-Vac Lyo vaccine)। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল না করেই কীভাবে এই ভ্যাকসিন দেশের জনগণের জন্য উপলব্ধ করছে তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল। যদিও সেই জল্পনায় জল ঢেলেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন স্বয়ং।
কীভাবে কাজ করবে এই ভ্যাকসিন?
রাশিয়ার এই ভ্যাকসিনটি মূলত সারস-কোভ-২ অ্যাডেনোভাইরাস ডিএনএ-এ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই করোনা ভাইরাসকেই ল্যাবে দুর্বল করে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। যাতে তারা মানবদেহে ঢুকে নিউট্রোফিল, ইউসোনোফিল, বেসোফিলকে কাজে লাগিয়ে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়। সংবাদসংস্থাকে গামালেয়া ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর আলেকজান্ডার গিন্টসবার্গ নিশিত করে জানান যেভাবে ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে সেখানে ব্যবহৃত ডিএনএ শরীরে ঢুকে কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।
কীভাবে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হয়েছে?
ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ক্ষেত্রে রাশিয়া শুধুমাত্র প্রথম পর্যায়ের যে রিপোর্ট সেটাই প্রকাশ্য এনেছিল। সেখানে দাবি করা হয় যে মানদেহে অত্যন্ত সফলভাবে এই ভ্যাকসিন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করছে। জুলাই-এর মাঝামাঝি সময়ে রাশিয়ান সংবাদমাধ্যম এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে বলা হয় যে যেসকল স্বেচ্ছাসেবককে এই ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে তাদের দেহে কোনোরকম ভ্যাকসিনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়নি। এই ট্রায়ালে ৭৬ জন স্বেচ্ছাসেবকদের নেয়া হয়। তাঁরা প্রত্যেকেই সেনাবাহিনীর। এদের মধ্যে অর্ধেক জনকে এই ভ্যাকসিনের লিক্যুইড ফর্ম দেয়া হয় বাকি জনকে পাউডার ফর্মের ভ্যাকসিন দেয়া হয়।
অগাস্টের তিন তারিখ একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয় যেখানে বলা হয়, গামালেয়া ইনস্টিটিউট তাদের ট্রায়াল শেষ করেছে। তবে তিনটি ট্রায়াল শেষ হয়েছে কি না তা বলা ছিল না।
প্রেসিডেন্ট পুতিন জানান যে গত আড়াই মাস ধরে মানবদেহে এই পরীক্ষা চলছে। তবে একাংশের মতো আমেরিকার সঙ্গে টেক্কা দিতেই রাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত। বিশ্ববাজারে নিজেদের জায়গা প্রকাশ করতে এবং নিজেদের প্রতিপত্তি বজায় রাখতেই রাশিয়ার এই কাজ। বিশেষজ্ঞদের মতে তৃতীয় ট্রায়ালের আগেই ভ্যাক্সিন প্রস্তুত করলে সেখানে ভুলত্রুটি থাকার সম্ভাবনা প্রবল। তাঁদের বক্তব্য লড়াইয়ে এগিয়ে থাকার জন্য যেভাবে এই ভ্যাকসিনের কাজ হয়েছে সেখানে চিন্তা থাকছে। কীভাবে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল ছাড়াই এই ভ্যাকসিনকে বাজারে আনা হবে সে বিষয়ে প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।
কত দাম হবে এই ভ্যাকসিনের? কোন দেশ কিনতে আগ্রহী?
বিশ্বে এই প্রথম কোনো ভ্যাকসিন যার বিষয়ে বিশদে কোনো খবরই প্রকাশ্যে আসেনি। এই ভ্যাকসিনের দাম কত হতে পারে সে ব্যাপারে মঙ্গলবার কিছু জানাননি প্রেসিডেন্ট পুতিন।
এদিকে রাশিয়ার শিল্প এবং ব্যবসা মন্ত্রী ডেনিস মান্তুরোভ একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, “প্রতি মাসে কয়েক হাজার হাজার ডোজ তৈরি হবে। ২০২১ এর মধ্যে তা কয়েক লক্ষে পৌঁছে যাবে। ব্রাজিল, ভারত ও আরো অনেক দেশ এই ভ্যাকসিন নেয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে।”
যদিও সংবাদসংস্থা দ্য টেলিগ্রাফ জানান্য যে ব্রিটেন রাশিয়ার তৈরি এই ভ্যাকসিন নিজের দেশের লোককে দিতে অনীহা প্রকাশ করেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস