শ্রেষ্ঠ হওয়ার সেরা ১০ উপায়
শ্রেষ্ঠ হওয়ার সেরা ১০ উপায় - ছবি : সংগৃহীত
গোটা সৃষ্টির মধ্যে মানুষই একমাত্র সৃষ্টি, যাকে আল্লাহ তায়ালা সুমহান মর্যাদার আসনে সমাসীন করেছেন। তাকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব বলে ঘোষণা করেছেন। এ মর্যাদা তিনি আর কাউকে দেননি।
অভিন্ন উৎস অর্থাৎ হজরত আদম ও হাওয়া আ:-এর সন্তান হিসেবে সব মানুষ সমমর্যাদার অধিকারী। তবুও নিজ গুণ-বৈশিষ্ট্যের কারণে মানবসমাজের একজন অন্যজনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে থাকেন। এমনি কিছু বৈশিষ্ট্যের বিবরণ রাসূলে কারিম সা: বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ করেছেন। পরিচয় দিয়েছেন শ্রেষ্ঠ মানুষদের। আলোচনা করেছেন শ্রেষ্ঠ মানুষের বিভিন্ন গুণাবলির কথা। হাদিসে বর্ণিত শ্রেষ্ঠ হওয়ার অনেক বৈশিষ্ট্যের মধ্য থেকে এখানে ১০টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো।
১. মুত্তাকি হওয়া : আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা:কে জিজ্ঞেস করা হলো, শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী কে? রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, মানুষের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার কাছে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে বেশি ভয় করে। (বুখারি : ৪৬৮৯)
২. কুরআন শিক্ষা: নিজে বিশুদ্ধ কুরআন শিক্ষা করা এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়া। উসমান রা: সূত্রে বর্ণিত, নবী কারিম সা: ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে তা শিক্ষা দেয়। (বুখারি : ৫০২৭)
৩. নিজের চরিত্র সুন্দর করা : আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যার চরিত্র সবচেয়ে বেশি সুন্দর। (বুখারি : ৩৫৫৯)
৪. অন্যের কল্যাণকামী হওয়া: আবু হুরায়রা রা: সূত্রে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সা: সাহাবায়ে কেরামের একদলের মধ্যে উপবিষ্ট অবস্থায় বললেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি কে, আমি কি তা তোমাদের বলব? সাহাবায়ে কেরাম নীরব রইলেন। রাসূলুল্লাহ সা: এ কথা তিনবার বললেন। অতঃপর জনৈক সাহাবি আরজ করলেন, অবশ্যই বলুন হে আল্লাহর রাসূল! রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হলো, যার কাছ থেকে সবাই মঙ্গলের আশা করে এবং তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে। আর তোমাদের মধ্যে নিকৃষ্টতম ব্যক্তি হলো, যার কাছ থেকে মঙ্গলের আশা করা যায় না এবং তার অনিষ্ট থেকে মানুষ নিরাপদ নয়। (তিরমিজি : ২২৬৩)
৫. লেনদেনে উত্তম হওয়া : আবু হুরায়রা রা: সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজ পাওনাদারের পাওনা উত্তমভাবে আদায় করে। (বুখারি : ২৩০৫)
৬. দীন-ধর্ম রক্ষায় নিয়োজিত হওয়া: আবু সাঈদ খুদরি রা: সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা:কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সর্বোত্তম মানুষ কে? রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ওই মুমিন, যে নিজ জান-মাল নিয়ে (দীন-ধর্ম রক্ষায়) আল্লাহর পথে জিহাদ করে। (বুখারি : ২৭৮৬)
৭. নিজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সদাচারী হওয়া: আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজের পরিবারের কাছে ভালো। (তিরমিজি : ১৯৭৭)
৮. প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা : আবু সাঈদ রা: সূত্রে বর্ণিত: একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সা:-এর ঘরের পাশে বসা ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সা: বের হয়ে ইরশাদ করেন, ‘আমি কি বলব, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম মানুষ কে? সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম মানুষ হলো, যে প্রতিশ্রুতি পূরণে অধিক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। (মুসনাদে আবু ইয়ালা : ১০৫২)
৯. উত্তম প্রতিবেশী এবং উত্তম সঙ্গী হওয়া: আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, সঙ্গী হিসেবে আল্লাহ তায়ালার কাছে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে নিজের সঙ্গীদের কাছে ভালো এবং প্রতিবেশী হিসেবে আল্লাহ তায়ালার কাছে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, যে আপন প্রতিবেশীর কাছে ভালো। (সুনানে তিরমিজি ১৯৪৪)
১০. পাপমুক্ত জীবনযাপন করা : আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সর্বোত্তম মানুষ কে? রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ওই ব্যক্তি, যার অন্তর পাপমুক্ত, পরিষ্কার, কারো প্রতি কোনো আক্রোশ ও বিদ্বেষ নেই এবং যে সত্যবাদী হয়। (ইবনে মাজাহ : ৪২১৬)
হাদিসের বিশাল ভাণ্ডারে এরকম আরো অনেক বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ আছে। এসব বর্ণনার কোনোটিই পারস্পরিক সাংঘর্ষিক নয়। প্রতিটিই নিজ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। তাই আমাদের উচিত হলো, মুসলিম হিসেবে উল্লিখিত প্রতিটি গুণ অর্জনে ব্রতী হওয়া। একই সাথে কুরআন ও হাদিসের অধ্যয়নের মাধ্যমে আরো ইসলামী জ্ঞান অর্জন ও তা বাস্তব জীবনে অনুসরণের মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর প্রিয়পাত্রে পরিণত করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহায় হন। আমীন।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামেয়া রাহমানিয়া দারুল ইসলাম, দক্ষিণ কাজলা, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা