ভারতের পাশে মালদ্বীপ ছাড়া কেউ নেই!
নরেন্দ্র মোদি - ছবি : সংগৃহীত
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অবস্থান কিছুটা টানাপড়েনের মধ্যে পড়ে গেছে। নয়াদিল্লী শুধু তাদের পুরনো প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের সাথেই সমস্যার মধ্যে নেই, বরং নেপাল, বাংলাদেশ এবং সম্ভবত শ্রীলংকার সাথেও সমস্যার মধ্যে পড়েছে। অন্যদিকে তিব্বত সীমান্তে চীনের দিক থেকে চাপ তো রয়েছেই। বর্তমানে এ অঞ্চলে মালদ্বীপ সম্ভবত একটি মাত্র দেশ যেখানে কিছুটা স্বচ্ছন্দ্যে আছে ভারত।
চলতি বছরের মে মাসে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি ভারতকে অবাক করে দিয়ে নেপালের নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেন, যেখানে বিতর্কিত অঞ্চলকে নেপালের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন মানচিত্রে কালাপানি, লিম্পিয়াধুরা এবং লিপুলেখ এলাকাকে নেপালের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মিডিয়ার সাথে আলাপকালে নেপালের ভূমি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী পদ্মা কুমারী আরিয়াল বলেছেন যে, মানচিত্র তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। তিনি আরো জানান যে, কালাপানির কাছের গুনজি, নাভি ও কুটি এলাকাগুলোকেও নেপালের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেগুলো আগের মানচিত্রে ছিলে না।
ভারত-নেপাল মানচিত্র প্রকাশের পর, পাকিস্তান এখন তাদের নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে। ভারত কর্তৃক জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের এক বছর পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে পাকিস্তান নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে। এতে জম্মু ও কাশ্মীরের পুরোটা এবং গুজরাটের একাংশকে পাকিস্তানের অংশ দেখানো হয়েছে। এটাকে ঐতিহাসিক উপলক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, “এই রাজনৈতিক মানচিত্রে আমাদের জাতির আকাঙক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে এবং কাশ্মীর বিবাদ নিয়ে আমাদের নীতিগত অবস্থানটি এখানে ফুটে উঠেছে”।
ভারত এই পদক্ষেপে বিরক্ত হয়েছে এবং নয়াদিল্লী এটাকে ‘হাস্যকর পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে, যেটার কোন ‘আইনি ভিত্তি বা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ নেই। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এটাকে ‘অযৌক্তিক রাজনীতির চর্চা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং ক্রস-বর্ডার সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে আঞ্চলিক শক্তি অর্জনের যে নেশা রয়েছে পাকিস্তানের, সেটাই এখানে আবার প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে। বিরোধী কংগ্রেস দলের পার্লামেন্ট সদস্য মনীষ তিওয়ারি এক টুইটে বলেছেন যে, এটা আসলে একটা ‘চীনের ভূরাজনৈতিক বিবৃতি’। তিনি আরো বলেন, “নেপালের নতুন মানচিত্র প্রকাশের পরপরই পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ দেখে মনে হচ্ছে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ভারতের দূরত্বের সুযোগ নিচ্ছে চীন। অন্য দুই প্রতিবেশীদের কেউ যদি এ পথে হাঁটে তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না”।
বাংলাদেশের সাথেও সমস্যার মধ্যে রয়েছে ভারত। মোদির প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কটা ভালোভাবেই পার করেছে ভারত, কিন্তু সেই অবস্থাটা এখন আর নেই। ভারতের সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) – যেখানে মুসলিমদেরকে, বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসী মুসলিমদেরকে টার্গেট করা হয়েছে, সেটা দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি করেছে। বাংলাদেশ সিএএ-কে কিভাবে দেখে সেটা স্পষ্ট করেছে শেখ হাসিনার সরকার। তাছাড়া ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশী অভিবাসীদের ‘উইপোকা’ আখ্যা দেয়ায় সেটা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে।
দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলংকায় রাজাপাকসারা ক্ষমতায় ফিরে আসায় সেটাও নয়াদিল্লিতে উদ্বেগের কারণ সৃষ্টি করতে পারে। রাজাপাকসাদের চীনের ঘনিষ্ঠ মনে করা হয়, আর এমন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে যে, চীন চায় যাতে শ্রীলংকা ভারত ও জাপানের মতো তাদের অন্যান্য মিত্র থেকে দূরে থাকে। ভারতে নিযুক্ত শ্রীলংকার সাবেক হাই কমিশনার অস্টিন ফার্নান্দো সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে বলেছেন যে, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য শ্রীলংকার ব্যাপারে ভারতের অতি সতর্ক কৌশল অনেকটা দায়ি। লংকান সরকার সম্প্রতি জাপানি অর্থায়নের হালকা রেল প্রকল্প স্থগিত করেছে। এতে বোঝা গেছে যে, সবকিছু সেখানে ঠিক মতো চলছে না।
অধিকাংশ প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্কে কমবেশি টানাপড়েনের মধ্যে শুধুমাত্র মালদ্বীপেই ভারত তাদের অবস্থান ঠিক রাখতে পেরেছে এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব সেখানে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। ভারতীয় মিডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে ভারত মালদ্বীপের জন্য আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণার পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে, যেটা মালেকে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় সাহায্য করবে।
নয়াদিল্লী অন্য প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য শক্ত চেষ্টা করবে, কিন্তু অন্তত এখনকার মতো শুধু মালদ্বীপের সাথে সম্পর্ক নিয়েই তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর