পাকিস্তানের নতুন মানচিত্রে ভারতের বিরুদ্ধে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধের ইঙ্গিত!
পাকিস্তানের নতুন মানচিত্র - ছবি : সংগৃহীত
পাকিস্তানের নতুন মানচিত্রে ভারতের মনে দুই প্রতিবেশীর সাথে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধের শঙ্কায় ইন্ধন দিচ্ছে, যদিও এ ধরনের কোনো পদক্ষেপের কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। পাকিস্তানের নতুন রাজনৈতিক মানচিত্রে চীনের দাবি করা অংশটুকু বাদ দিয়ে ভারত-শাসিত পুরো কাশ্মিরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তবে এই অঞ্চলে মানচিত্র নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। মে মাসে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মধ্য জুনে একপর্যায়ে দুই দেশের সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে মারামারি পর্যন্ত বেঁধে যায়। এদিকে ভারতের একটি নতুন রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে ভারত ও নেপালের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে নতুন করে।
ভারত তার নিয়ন্ত্রণে থাকা কাশ্মিরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল করে এলাকাটিকে কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল ঘোষণা করার ঠিক এক বছর পূর্তির দিনে পাকিস্তান তার নতুন মানচিত্র প্রকাশ করল। এতে পাকিস্তানের ভূখণ্ড চীনা-নিয়ন্ত্রিত কারাকোরাম পাস পর্যন্ত বলে দাবি করা হয়।
এই মানচিত্রটি পাকিস্তানকে শাকসগাম ভ্যালির (গিলগিট-বাল্টিস্তানের এই এলাকাটি ১৯৬৩ সালের সীমান্ত নিষ্পত্তির সময় চীনকে ছেড়ে দিয়েছিল পাকিস্তান) মাধ্যমে চীন-শাসিত এলাকার সাথে পাকিস্তানকে যুক্ত করেছে।
পাকিস্তানের মতো ভারতও পুরো কাশ্মিরকে নিজের বলে দাবি করে। তবে পাকিস্তান যেখানে জাতিসঙ্ঘের তদারকিতে গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মির সমস্যার সমাধান কামনা করে, ভারত তাতে রাজি নয়।
বিরোধপূর্ণ লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে সাম্প্রতিক চীনা অনুপ্রবেশের ফলে বেইজিং এখন সিয়াচেন হিমবাহগামী রাস্তাগুলো দিয়ে ভারতের সামরিক চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করতে সক্ষম করে তুলেছে।
এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের নতুন মানচিত্র প্রকাশ বেশ নতুন মাত্রা দিয়েছে। কারণ চীনের সাথে সমন্বয় সাধন করে অভিযান পরিচালনা করে পাকিস্তান বলপূর্বক হিমবাহটি দখল করে নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। আর তা করা গেলে গিলগিট-বাল্টিস্তান ও চীনা-শাসিত আকসাই চিনের মধ্যে একটি স্থল সেতু নির্মিত হবে।
চলতি গ্রীস্মকাল থেকে চীনা ও ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে লাদাখে সংঘর্ষ হচ্ছে। ভারতীয় মিডিয়ায় চীনা উদ্দেশ্য নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। পাকিস্তান ও চীনের সাথে ভবিষ্যতে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ নিয়েও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
কিংস কলেজ লন্ডনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক হর্ষ ভি পান্তের মতে, এর ফলে নিশ্চিতভাবেই দুই ফ্রন্ট থিয়েটারের ভারতীয় ধারণা জোরদার হলো। সামরিক পরিকল্পনাবিদেরা ক্রমবর্ধমান হারে বিষয়টি আমলে নিতে পারেন।
তবে লাহোরভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়ান কৌশলবিদ ইজাজ হায়দারের মতে, তিব্বত থেকে জিনজিয়াংকে সংযুক্তকারী একটি মহাসড়ক আগে থেকেই আছে। ফলে কারাকোরাম পাস থেকে জিনজিয়াঙে যাওয়ার জন্য চীনের নতুন কোনো মহাসড়কের প্রয়োজন নেই।তিনি পাকিস্তানের নতুন মানচিত্র প্রসঙ্গে বলেন, এর ফলে ইসলামাবাদ ও বেইজিং উভয়ে নিট কৌশলগত সাফল্য পাবে।
এদিকে গত মাসে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল ও চীনকে নিয়ে বিরল চার জাতি সংলাপে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি তিব্বত ও জিনজিয়াঙের মাধ্যমে নেপালকে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (সিপিইসি) সাথে যুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন। ৬০ বিলিয়ন ডলারের এই করিডোরটি আফগানিস্তানেও সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা হচ্ছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টার থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সিনিয়র সাউথ এশিয়া এসোসিয়েট মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, পাকিস্তানের নতুন মানচিত্রের কৌশলগত মূল্য আছে বেইজিংয়ের কাছে। তারা এখন বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের জন্য বাড়তি কিছু রাজনৈতিক সুবিধা পাবে।
তিনি বলেন, নতুন মানচিত্রে ভারতীয় এলাকার বিশাল অংশকে পাকিস্তানের দেখানোটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এটা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সুরক্ষার জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তান নিয়ে গবেষণাকারী রেনমিন ইউনিভার্সিটির চোনগিয়াঙ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ঝু রং বলেন, কাশ্মির নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তৃতীয় যুদ্ধ হওয়ার খুবই সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ভারত বুঝতে পারছে যে সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সঙ্ঘাতে ভারতের পক্ষে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। আর এতে করে ভারত আগের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেছে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কারণে অনেক দেশ ভারতকে আঘাত করতে চায় না। ঐতিহ্যবাহী অনেক ইসলামি দেশও ভারতের সাথে ভালো সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী। কারণ ভারতের জ্বালানি বাজার তাদের কাছে আকর্ষণীয় বলে মনে হচ্ছে।
এসসিএমপি