রাম রাজনীতির নতুন নায়ক মোদি

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Aug 06, 2020 07:11 am
রাম রাজনীতির নতুন নায়ক মোদি

রাম রাজনীতির নতুন নায়ক মোদি - ছবি : সংগৃহীত

 

মন্দিরের শিলান্যাসের মধ্যে দিয়ে বুধবার কি অবশেষে রামমন্দির রাজনীতির সমাপন হলো? নাকি আসলে শুরু হলো সেই রাজনীতিরই নতুন অধ্যায়? আরএসএস, জনসঙ্ঘ, হিন্দু মহাসভা, বিজেপির হাত ধরে প্রত্যক্ষ অযোধ্যা রাজনীতির জন্ম দিয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ি, লালকৃষ্ণ আদবানি ও মুরলীমনোহর যোশি। সেই প্রথম অধ্যায়ে তাদের সঙ্গী ছিলেন একঝাঁক তরুণ তুর্কিও। নরেন্দ্র মোদি থেকে অরুণ জেটলি। উমা ভারতী থেকে সুষমা স্বরাজ। প্রমোদ মহাজন থেকে গোবিন্দ চারিয়া। আদবানি ছিলেন রথযাত্রার নায়ক।

কিন্তু পার্শ্বচরিত্র হিসেবে ছিলেন তারা। ছিল টিম বিজেপি। বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও তার ছ’বছরের মধ্যে দিল্লি বিজয়ের সেই ইতিহাসকে যদি বলা হয় হিন্দুত্ব রাজনীতির প্রথম অধ্যায়, তাহলে বুধবার শুরু হলো দ্বিতীয় অধ্যায়। আর এই নতুন অধ্যায়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র একজনই। নরেন্দ্র মোদি। বুধবার ভূমিপূজা, বক্তৃতা এবং রামরাজ্যের সূচনাপর্বের বার্তা... শরীরি ভাষায় প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, অদূর ভবিষ্যতে হিন্দুত্ব পলিটিক্সের চালিকাশক্তি তিনিই। ১৯৯০ সালে রথযাত্রার সূচনা করে যিনি ভারতীয় রাজনীতির বাঁকবদল করে দিয়েছিলেন, সেই আদবানি আজ মোদির ভাষণে একবারও উচ্চারিত হলেন না।

রামমন্দির ইস্যুতে লালকৃষ্ণ আদবানি এখন অতীত। টিম বিজেপিও। দল ও হিন্দুত্ব রাজনীতির চালিকাশক্তির একক ব্যক্তিত্ব মোদিই। বুধবার গোটা শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মোদির পিছনে নিছক নীরব অনুসরণকারী হিসেবে ছিলেন যোগী আদিত্যনাথ। যদিও রাজনীতির ইতিহাস পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, ’৯০ সালের রথযাত্রা রাজনীতিতে আদবানির অনুসরণকারী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সুতরাং কে বলতে পারে বিজেপির ভবিষ্যৎ মোদির নাম যোগী নয়?

এই শ্রাবণ মাসে এরকম ফাঁকা সরযূ নদী কে দেখেছে? রাম কি পৌড়িতে চলছে না দিনভরের অনর্গল হনুমান চালিশা অথবা কথকতার আসর! সারি দিয়ে মানুষ চলেছেন হনুমান গড়হির দিকে, এটাই তো টেরি বাজার চৌরাহায় চেনা দৃশ্য। অথচ বুধবার সেই চিত্র ছিল অনুপস্থিত। রামজন্মভূমি মোড় থেকে তুলসীদাস উদ্যানের দু’দিকে সারিবদ্ধ দোকানের ব্যস্ততা উধাও। অযোধ্যা নগরীর ৫০০ বছরের চড়াই-উতরাইয়ের ইতিহাস। সেখানে সবথেকে মাহাত্ম্যপূর্ণ এই ক্ষণে জনসমুদ্রই ছিল প্রত্যাশিত। আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করা জয়ধ্বনি, লক্ষ মানুষের আগমনই ছিল স্বাভাবিক দৃশ্য। একদিকে করোনা এবং অন্যদিকে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় বহু প্রতীক্ষিত রামমন্দিরের ভূমিপূজা স্থল এবং পার্শ্ববর্তী গোটা এলাকা ছিল শুনশান। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও অযোধ্যায় এসেছিলেন কয়েক হাজার ভক্ত, পুণ্যার্থী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যতক্ষণ অযোধ্যায় ছিলেন, সরযূ তীর, হনুমান গড়হি, জন্মভূমিস্থল আর তুলসী উদ্যানে ছিল ‘প্রবেশ নিষেধ’। তিনি ফিরতেই খুলে গেল দ্বার। পুণ্যকামী মানুষ দখল নিল সরযূ ও জন্মভূমির করিডর।

চিরতরে অপ্রকট হওয়ার আগে ভক্ত হনুমানকে অযোধ্যা রক্ষার ভার দিয়ে গিয়েছিলেন রামচন্দ্র। তাই রীতি হলো, রাম জন্মভূমিতে রামলালাকে দর্শনের আগে হনুমান গড়হি মন্দিরের ৫৬টি সিঁড়ির ধাপ পেরোতে হবে। পূজা দিয়ে হনুমান-মাতা অঞ্জনা দেবীর অনুমতি নিতে হবে। সেটাই করলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় ১৫ মিনিট হনুমান গড়হিতে পুজো ও পরিক্রমার পর সোজা জন্মভূমিস্থল। পূর্ণাঙ্গ পুজোপাঠ করলেন তিনিই। ছিলেন যোগী, মোহন ভাগবত, রাম জন্মভূমি ন্যাসের মহন্ত নৃত্যগোপাল দাস। ভূমিপূজায় কিন্তু ভরকেন্দ্র ছিলেন মোদিই। পুরোহিত পূজা উপচারের মধ্যেই আপ্লুত আবেগে মোদিকে বললেন, ‘প্রভু রাম ও সীতামাতার অশেষ কৃপা যে, আপনার মতো সুপুত্রের মাধ্যমে অবশেষে মন্দিরের সূচনা হলো।’ তসর আর গরদের ধুতি-পাঞ্জাবিতে আভূমি প্রণত হয়ে রামলালাকে প্রণাম করলেন প্রধানমন্ত্রী। ৪০ কেজি ওজনের পাঁচটি রুপার ইট প্রোথিত করলেন মাটিতে। শিলান্যাসের পর মোদি বললেন, আজকের দিনটি স্বাধীনতার আন্দোলনের সঙ্গে তুলনীয়। বহু মানুষ এই দিনটির জন্য আত্মবলিদান দিয়েছেন। রামমন্দিরকে ভারতের রাষ্ট্রীয় ঐক্যের প্রতীক বলে অভিহিত করেন তিনি।

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদের অবলুপ্তি ঘটিয়েছিলেন তিনি। আর ২০২০’র ৫ আগস্ট সূচনা করলেন রামমন্দিরের। তার হাতে রয়েছে আরো তিনটি ৫ আগস্ট। পরবর্তী পদক্ষেপ কি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি? সেটা বাস্তবায়িত হলে? হিন্দুত্ব রাজনীতির আইকন থাকবেন একজনই— নরেন্দ্র মোদি!

সূত্র : বর্তমান

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us