করোনায় ভাগ্য বদল টাকসনের
টাকসন - ছবি : সংগৃহীত
মহামারীর ধাক্কায় শুনসান পথঘাট। দোকানপাটও খুব একটা খোলেনি। নেহাত ঠেলায় না পড়লে বাড়ির বাইরে পা রাখছেন না কেউই। ব্রাজিলের সেই চেনা শহর আজ আর নেই। বড্ড অচেনা। যা দেখে প্রথমে খানিক ঘাবড়েই গিয়েছিল টাকসন। জন্মের পর কোলাহলমুখর ব্রাজিলকেই দেখেছে সে। শহরজুড়ে উৎসবের মেজাজ। ব্যস্ত রাস্তাঘাট। সাম্বার ছন্দে দুলে উঠত সন্ধ্যার বাতাস। দুম করে সেই সমস্ত রং উধাও! আর কেউ তাকে নিয়ে খেলা করে না। পথচলতি জনতার হাল্কা আদরও পায় না সে। জনহীন ফুটপাথ ধরে শুকনো মুখেই হেঁটে চলত টাকসন।
হাঁটতে হাঁটতে একদিন তার নজরে আসে ঝাঁ চকচকে একটি শোরুম। চারিদিকে খাঁ খাঁ বিবর্ণতার মধ্যেও সেখানে জ্বলজ্বল করছে হালফ্যাশনের গাড়ি। আলোয় ভরে উঠেছে দোকান। হাঁ করে সেদিকেই চেয়ে থাকত টাকসন। এরপরই তার শুরু হয় দোকানের আশপাশে ঢুঁ মারা। এক দিন, দু’দিন… করতে করতে প্রতিদিন। রোজ একই রুটিন। শোরুমের শাটার তোলামাত্র চুপটি করে সামনের ফুটপাথে বসে থাকত সে। কখনো লেজ নাড়ত। কখনো এদিক থেকে ওদিক হেঁটে বেড়াত। কিন্তু কখনোই দূরে চলে যেত না।
কিছু দিন যেতে না যেতেই বিষয়টি শোরুমের কর্মীদের নজরে আসে। টিফিনের সময় বাইরে বেরিয়ে কুকুরটির সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানোর চেষ্টা করেন কেউ কেউ। আলাপ জমতে বেশি সময় লাগেনি। হাঁক দিলেই ছুটে আসে টাকসন। টিফিন ভাগাভাগি করে খাওয়াও চলে পুরোদমে! সবই তো মিটল। কিন্তু নতুন বন্ধুটির নাম কী? জিজ্ঞেস করলে ‘ভৌ’ ছাড়া তো কোনো জবাব মেলে না! কী নামে ডাকা যায় এই সারমেয়কে? অনেক চিন্তার পর ঠিক হয়, বন্ধুর নাম দেয়া হোক, ‘টাকসন প্রাইম’। সংক্ষেপে ‘টাকসন’।
এভাবেই দিব্যি চলছিল। কিন্তু কোথাও গিয়ে একটা হালকা অতৃপ্তির কাঁটা খচখচ করত দু’তরফেই। একজন ভাবত, বন্ধুত্ব যদি সত্যি হয়, তাহলে আমি দরজার এপারে কেন? অন্যপক্ষও ভেবে দেখল, করোনার জেরে কর্মীদের অনেকেই আসছেন না। সেক্ষেত্রে নতুন বন্ধুটিকে চাকরির অফার দিলে কেমন হয়?
যেমন ভাবা, তেমন কাজ। সেলসম্যান পদের জন্য মনোনীত করা হয় টাকসনকে। এবার থেকে আর রস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে না সে। শোরুমের অন্দরেই টাকসনের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। গলায় ঝুলবে সংস্থার আই কার্ড। অবশ্য এত কিছুর বিনিময়ে কাজের ঝক্কিও যে খুব একটা কম নেই! টাকসনের কাঁধে রয়েছে ক্রেতাদের নতুন মডেলের গাড়ি চেনানোর দায়িত্ব। নিজের ভাষায় মডেলের গুণগান বর্ণনা করবে সে। পরে অবশ্য সেগুলি সুবোধ্য ভাষায় তর্জমা করে দেবেন অন্য কেউ। এছাড়া রয়েছে নিয়মিত মিটিংয়ে অংশ নেয়া, শোরুম পাহারা দেয়ার মতো গুরুদায়িত্বও রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে দিব্যি দিন কাটছে টাকসনের।
গোটা বিষয়টি সম্প্রতি গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থার ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা হয়। নজরে আসতেই শোরগোল পড়েছে নেটদুনিয়ায়। টাকসনের অনুগামীদের সংখ্যাও প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে। ফলে বাধ্য হয়ে তার জন্য আলাদা ‘অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট’ খুলে ফেলেছেন সংস্থার কর্মীরা। এই ক’দিনেই তার ফলোয়ারদের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে।
সূত্র : বর্তমান