ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সামনে যে ভয়াবহ সমস্যা
ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সামনে যে ভয়াবহ সমস্যা - সংগৃহিত
জুলাই মাসের শেষ দিকে ফ্রান্স থেকে কেনা ৩৬টি ড্যাসাল্ট রাফাল যুদ্ধবিমানের প্রথম ৫টি ভারতের হরিয়ানা রাজ্যেও আম্বালা বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছেছে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল রাকেশ কুমার ভাদুরিয়া ফ্রান্সের মেরিগন্যাক থেকে বিমানগুলোকে উড়িয়ে আনা পাইলটকে অভিনন্দিত করেন। তাদের আগমন ভারতীয় মিডিয়ায় ফলাও কওে প্রচার করা হয়। এই ৫টি বিমানের দুটি হলো প্রশিক্ষণ বিমান। এগুলো কেনা হয়েছিল ২০১৬ সালে। ২০০০ সালেই এই বিমান কেনার দরপত্র শুরু হওয়া নিয়ে তেমন আলোচনা হচ্ছে না। ওই সময় ১২৬টি মাঝারি মাল্টি-রোল যুদ্ধবিমান কেনার কথা হয়েছিল। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যে ৫টি বিমান জুলাই মাসের শেষ দিকে ভারতে এসে পৌঁছেছে, সেগুলো লাদাখে চীনের সাথে সীমান্ত সঙ্ঘাতের পর জরুরি অনুরোধে সরবরাহ করা হয়েছে।
এসব বিমান সংগ্রহের বেদনাদায়ক মন্থর প্রক্রিয়া ভারতের প্রতিরক্ষা ক্রয়ে কাঠামোগত ত্রুটির সাথে সম্পর্কিত। গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র সংগ্রহে যে মারাত্মক আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্যে পড়তে হয়, তার একটি উদাহরণ হলো এই রাফাল ক্রয়। সশস্ত্র বাহিনীর জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন, এমন আরো অনেক অস্ত্রও লাল ফিতায় আটকে আছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ছয়টি রিফুয়েলিং বিমান কেনার প্রক্রিয়াটি ১৪ বছর ধরে ঝুলে আছে। আবার এয়ারবাস এ৩৩০ মাল্টি রোল ট্যাঙ্কার পরিবহন কেনার বিষয়টি দুবার সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর কেনা হয়নি।
ভারতের সমস্যাসঙ্কুল প্রতিরক্ষা ক্রয়ব্যবস্থার আরেকটি উদাহরণ হলো ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য দেশীয়ভাবে তৈরী ফরাসি স্করপিন-ক্লাস সাবমেরিন। এই সাবমেরিনের প্রধান অস্ত্র হবে টর্পেডো। কিন্তু এটিই নেই এতে। আগস্তা ওয়েস্টল্যান্ড কোম্পানির সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ডব্লিউএসএসের কাছ থেকে ব্ল্যাক শার্ক টর্পেডো কেনার পরিকল্পনা করেছিল ভারত। কিন্তু হেলিকপ্টার ঘুষ কেলেঙ্কারির কারণে প্রতিষ্ঠানটি কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় টর্পেডো কেনর পরিকল্পনাটি ভ-ুল হয়ে যায়। আর কোনো বিকল্প দৃষ্টিগোচর না হওয়ায় ভারতীয় নৌবাহিনী এখন সেকেলে জার্মান ভূমি থেকে পানির নিচের টার্গেটে নিক্ষেপযোগ্য টর্পেডোর ওপর নির্ভর করে আছে।
চীন এবং সেইসাথে কিছুটা কম গুরুত্বপূর্ণ পাকিস্তানের কাছ থেকে আসা নিরাপত্তার মুখে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রে সজ্জিত হতে না পারার কোনো ব্যাখ্যা আছে কি? ভারতের জটিল ক্রয় প্রক্রিয়ায় নানা পর্ব অতিক্রম করতে হয়। এগুলোর মধেথ্য রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সার্ভিস হেডকোয়ার্টার, ইন্টিগ্রেটেড ডিফেন্স স্টাফ (বর্তমানে এর প্রধান নতুন চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ), এবং ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গ্যানাইজেশনের আওতায় থঅকা বিভিন্ন গবেষণাগার। এই প্রক্রিয়ায় কোনো প্রক্রিয়াগত সংস্কার আনা হয়নি। কোনো পরিবর্তন করা হয়নি, প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়মিতভাবে প্রতিরক্ষা ক্রয় প্রক্রিয়া প্রকাশ করে থাকে। এতে স্থানীয়ভাবে অস্ত্র তৈরী ও অস্ত্র ক্রয়ের ওপর জোর দেয়া হয়। অবশ্য তাতে মূল সমস্যার সমাধান সূত্র থাকে কমই। গত সপ্তাহেই সর্বশেষ ডিফেন্স প্রকিউরমেন্ট প্রসিডিউর প্রকাশ করা হয়েছে। এখানেও ভারতের মূল সাব-সিস্টেম ম্যানুফেকচারিক ক্যাপাবিলিটি অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
ভারতের অস্ত্র ক্রয় প্রক্রিয়াটি বেগবান করতে না পারার ফলে অব্যাহতভাবে সরকার থেকে সরকার পর্যায়ে প্রতিরক্ষা ক্রয়ের ওপর নির্ভও করে থাকতে হয় এবং জরুরি ক্রয়ের আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়। আর নিয়মিতভাবেই যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে উন্মুক্ত দরপত্র অনুসরণ করে ক্রয় করতে ব্যর্থ হওয়াটাই হয়ে পড়েছে নিয়ম।
দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, ভারত যেসব নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, বিশেষ কওে চীনের কাছ থেকে আসা হুমকি অলৌকিকভাবে বিদায় নেবে না। দেশের বর্তমান ক্রয়ব্যবস্থা নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করা না হলে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা অদূর ভবিষ্যতেও অরক্ষিত থাকবে।
ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট