দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হয় কারা!
দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হয় কারা! - ছবি : সংগৃহীত
প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার আগেই বিভিন্ন দেশে ফিরে ফিরে আসছে করোনাভাইরাস। চীনে সুস্থ হওয়া রোগীদের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশের শরীরে নতুন করে রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই শতাধিক মানুষ নতুন করে আক্রান্ত। খবর এসেছে জাপান, ইরান থেকেও। এমনকি, আমাদের দেশেও দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে। ফলে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের কপালে যেমন চিন্তার ভাঁজ, অস্বস্তি ও আতঙ্কে সাধারণ মানুষও। একাধিকবার রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরও কেন এত তড়িঘড়ি ফের রোগে পড়া!
রোগ কেন ফিরছে
সংক্রামক রোগের চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী জানিয়েছেন, “‘মূলত দু’টি কারণে এ রকম হতে পারে— হয় রোগটা আবার হল, নয়তো ভাইরাস নিজেকে পাল্টে নতুনরূপে দেখা দিল। ধরুন কারও ম্যালেরিয়া হয়েছে। চিকিৎসায় সেরে গেলেন। আবার কিছু দিন পর একই রোগে পড়লেন। তাকে কিন্তু নতুন করে মশা কামড়ায়নি। তা হলে রোগ হলেঅ কী করে? আসলে রোগের শিকড় শরীরেই ছিল।''
তিনি বলেন, ''ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে পরজীবী লিভারে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। রোগ সেরে যাওয়ার ৩-৬ মাস বাদে সুযোগ বুঝে আবার রক্তে এসে রোগের সৃষ্টি করে। অর্থাৎ রোগ রিল্যাপস করে বা ফিরে আসে। ফ্যালসিফেরাম ম্যালেরিয়ায় ক্ষেত্রে ঘটনাটা একটু অন্য ভাবে ঘটে। চিকিৎসা চলাকালীন যখন ওষুধে জীবাণুতে লড়াই হয়, জীবাণুরা চেষ্টা করে নিজেদের মিউটেট করে ওষুধকে হারাতে। কিছু জীবাণু তা করেও ফেলে। ফলে রক্তে এরা বেঁচে থাকে। প্রথম বার রোগ সারার ২-৩ সপ্তাহ পর আবার ফিরে আসে একটু বাড়াবাড়ি রূপে।
কোভিডের কোনো ওষুধ নেই। ফলে ভাইরাস শরীরে ঢুকলে তার সঙ্গে লড়াই করে শরীরের অ্যান্টিবডি। প্রথম লড়াইয়ে ভাইরাস দমে গেলেও নিঃশেষ হয় না। তখন হয়তো ভাইরাস ও অ্যান্টিবডি থেকে যায় পাশাপাশি। যখন সময়ের সঙ্গে অ্যান্টিবডি কমতে শুরু করে, ফের মাথাচাড়া দেয় ভাইরাস। রোগ ফিরে আসে। আর যদি অ্যান্টিবডির সঙ্গে লড়তে লড়তে ভাইরাস মিউটেট করে যায়, তা হলে যারা নিজেদের পাল্টাতে পারল না তারা মরে গিয়ে রোগ তখনকার মতো সারলেও পরিবর্তিত ভাইরাসগুলো আবার সময়ের সঙ্গে বংশবৃদ্ধি করে এবং রোগ হিসেবে ফিরে আসে। কী কারণে রোগ ফিরে এল তা সঠিক ভাবে জানতে হলে রোগীর শরীর থেকে ভাইরাস নিয়ে তার জেনেটিক ম্যাপিং করতে হবে। প্রথম বার রোগে পড়ার পর জিনের চরিত্র যা ছিল, দ্বিতীয় বার তা পাল্টে গেলে বুঝতে হবে ভাইরাস মিউটেট করার জন্য রোগ হচ্ছে। আর এক থাকা মানে সম্ভবত বিপত্তি ঘটেছে অ্যান্টিবডি কমে যাওয়ার জন্য।”
কাদের রোগ ফিরবে, কাদের নয়
অমিতাভ নন্দীর মতে, অত নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যায় না এখনো। তবে মনে হয়, যাদের সংক্রমণ হালকা হয় ও উপসর্গ দেখা দিতে কিছুটা সময় পার হয়ে যায়, তাদের দ্বিতীয় বার রোগে পড়ার আশঙ্কা কম। কারণ ওই অত দিন ধরে ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে লড়তে প্রচুর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তারাই কাজ করে রক্ষাকবচ হিসেবে। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে এই সুবিধে পাওয়া যায় না সব সময়।
রোগ সারার কত দিন পর স্বাভাবিক জীবন
অমিতাভবাবুর মতে, “রোগ সেরে যাওয়ার দু’টি রূপ, (১) উপসর্গ কমে রোগী তরতাজা হয়ে গেলেন, (২) ভাইরাস নির্মূল হলো। শরীর যত ক্ষণ না ভাইরাসমুক্ত হচ্ছে, আশঙ্কা থেকেই যায় যে আবার রোগে পড়তে পারেন বা রোগ ছড়াতে পারেন। তবে আবার বলছি, নিশ্চিত করে বলার সময় এখনো আসেনি। আসলে এই রোগের কোনো ওষুধ নেই বলেই সমস্যা হচ্ছে। অ্যান্টিবডির সঙ্গে লড়াইয়ে ভাইরাসের মাত্রা কমে, কিন্তু সব সময় নির্মূল হয় না।
কোন পরীক্ষায় জানা যাবে?
আরটিপিসিআর পরীক্ষা করলে জানা যায় শরীরে ভাইরাস আছে কী নেই। কিন্তু এই পরীক্ষা শেষ কথা বলবে সেটাও নয়। কাজেই রিপোর্ট নেগেটিভ আসামাত্র মেলামেশা করা ঠিক নয়। অন্তত দুই তিন মাস কড়া নজরদারিতে থাকতে হবে। ঘন ঘন টেস্ট করাতে হবে। তবে বলা যাবে তিনি স্বাভাবিক জীবনে কবে নাগাদ ফিরতে পারবেন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা