প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পেছানো : সত্যিই কি পারবেন ট্রাম্প?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প - ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তখন ঘুমের দেশে। সবে ভোর হয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক টুইটে ঘুম ভেঙে একসার। হাই তোলা দূর, হাঁ করে দেখতে হল প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চান ট্রাম্প! যদিও আমেরিকাবাসীর কথা মাথায় রেখেই এই করোনা অতিমারীর সময়ে এমন ভাবনা প্রেসিডেন্টের তা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের সাফ বক্তব্য, ইউনিভার্সাল মেল-ইন ভোটিং ২০২০ পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে তা ইতিহাসে সবচেয়ে ত্রুটিপূর্ণ ও প্রতারণার নির্বাচন হবে। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যথেষ্ট অপমানের। সত্যি কথা বলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে থাকে গোটা বিশ্ব। ট্রাম্পের দাবি সেই প্রেক্ষাপটের দিকে লক্ষ্য রেখেই মত, “যতক্ষণ না মানুষ নিরাপদে যথাযথভাবে ভোট দিতে না পারেন ততদিন কি নির্বাচন পিছোনো যায়?”
করোনা ভাইরাসের দাপটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মার্কিন মুলুক। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেখানে নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৫১ হাজার জনের। লকডাউন নিয়মের এখনো তেমন জোরদার কিছু নেই। সেই আবহে নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলে জনসাধারণ বুথে গিয়ে কীভাবে ভোট দেবে তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধী ডেমোক্র্যাট শিবির। জনস্বাস্থ্য বিধি মেনে তাই মেইল-ইন ভোটিং-কেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই পদ্ধতি মানতে নারাজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তবে কি নির্বাচন পিছিয়ে দিতে পারবেন ট্রাম্প?
চলতি বছরের নভেম্বরের ৩ তারিখে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু ট্রাম্পের টুইট ইঙ্গিত দিচ্ছে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার। আদৌ তা সম্ভব? আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করা ইতিহাসবিদ মাইকেল বেসচলস বলেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি এই পদক্ষেপ নেন তবে তা আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম এবং “আমেরিকার আইন লঙ্ঘনকারী”। আর এই প্রেক্ষাপটেই ১৮১১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস লিখে যান যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইনের সরকার, মানুষের নয়। অর্থাৎ ট্রাম্পের এই ঘুমভাঙানো টুইট আইনের ঘুম ভাঙাতে অপারক। তাই তিনি যা বলেছেন তা করার অথরিটি তার কাছে নেই। হ্যাঁ তবে আইন যেমন আছে আইনের ফাঁকও আছে। সেক্ষেত্রে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে যদি কংগ্রেসরা একমত হয় তবে পিছিয়ে যেতে পারে নির্বাচন।
কিন্তু এখানেও বজ্রআঁটুনি। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ডেমোক্র্যাটদের দখলে। যারা প্রথম থেকেই মেইল-ইন ভোটিং এর সমর্থনে কথা বলে এসেছেন। তাই রিপাবলিকান পার্টি কিংবা ডোনাল্ড ট্রাম্প চাইলেও এই আবেদন পাস যে পুরোপুরি অসম্ভব তা সকলে বুঝে গিয়েছেন।
তবে ট্রাম্প প্রথম নন যিনি এই নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার কথা বলেন। করোনার বাড়বাড়ন্তের কারণ দেখিয়ে মার্চ মাসে ওহাওয়ো-তে রাজ্যের প্রাথমিক নির্বাচন পিছিয়ে দেন ওহাওয়োর ডিরেক্টর অফ হেলথ অ্যামি অ্যাকটন। অ্যামিকে অবশ্য সব ধরনের সমর্থন জুগিয়েছিলেন সে রাজ্যের গভর্নর তথা রিপাবলিকান নেতা মাইক ডেওয়াইন।
মার্কিন মুলুকে কারা ঠিক করে নির্বাচনের দিন?
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ আইন অনুসারে ৩ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এর অর্থ এই যে এবার যদি নির্বাচনে বিলম্বের প্রয়োজন পড়ে তবে আইন প্রস্তুতকারকদের ঐক্যমত হতে হবে। কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস অনুসারে, “বিংশতম সংশোধনীর অধীনে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতির কার্যকাল ২০ জানুয়ারি ২০২১-এর দুপুরে শেষ হবে। এই তারিখের পরে রাষ্ট্রপতির পদে থাকার অনুমতি দেয়া আইনের কোনো বিধানে নেই। এমনকি জাতীয় জরুরি অবস্থা হলেও নতুন সংবিধান সংশোধনীর অনুমোদনের কোনো বিধান নেই।” সুতরাং, ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারির মধ্যে ট্রাম্প যদি ফের নির্বাচিত না হন তবে তিনি অফিস ছাড়তে বাধ্য হবেন, এমনটাই নিয়ম।
কেন মেইল-ইন ভোটিং-এর বিপক্ষে কথা বলছেন ট্রাম্প?
বুধবার থেকেই ট্রাম্প মেল-ইন ভোটিংয়ের বিরুদ্ধে টুইটারে মন্তব্য করেন। “কারচুপি নির্বাচনের” দাবি করেছেন তিনি। তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে মেল-ইন ভোটিংয়ের ফলে কোনও প্রমাণ না দিয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরও বেশি ব্যাপক আকারে নির্বাচনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটতে পারে।
বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের নিশানা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “ডেমোক্র্যাটরা ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে বৈদেশিক প্রভাবের কথা বলছেন, কারণ তারা জানেন যে মেল-ইন ভোটিং বিদেশিরা সহজেই প্রবেশ করতে পারবে”।
এর আগে কখনও আমেরিকায় নির্বাচন পিছিয়ে গেছে?
২০০১ সালে ৯/১১-এর ঘটনার জেরে স্থানীয় কয়েকটি নির্বাচন স্থগিত হলেও আমেরিকার ২৪৪ বছরের ইতিহাসে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনা নেই। ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ মহামারি হোক কিংবা ১৮৬৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস