নতুন করে বোমা ফাটালেন মাহাথির
মাহাথির মোহাম্মদ - ছবি : সংগৃহীত
এ বছরে ডা: মাহাথির ১০ জুলাই তারিখে ৯৫ বছরে পড়েছেন। তার উন্নয়নের এক প্রতীকতুল্য প্রোটন সাগা গাড়িটিও ৩৬ বছরে পড়েছে। দিবসটি অর্থাৎ গাড়ির জন্ম দিবস ঘটা করে উদযাপন করলেন তিনি। পেনাং ব্রিজে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে মিডিয়ার জন্য ছবি তুললেন, তাকে মনে হচ্ছিল একজন অল্প বয়েসী মডেল। মাহাথির লিখলেন, Still going strong. Happy birthday Proton Saga. সাংবাদিকদের কাছে তখন নতুন করে বোমা ফাটালেন, পাকাতান হারাপানের পক্ষ থেকে সাবাহ প্রদেশের চিফ মিনিস্টার মো: সফি আপদেলকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য ঘোষণা দেবেন।
ওই সময় তিনি আনোয়ার ইব্রাহিমের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। তিনি চান না প্রশাসন দণ্ড আনোয়ারের কাছে হস্তান্তরিত হোক। কেন? কেউ বলতে পারেন না। তবে মাহাথির গত মাসে সাংবাদিকদের বলেছেন, জনগণ আনোয়ারকে পছন্দ করে না। মাহাথির এমন কিছু ‘গোপন কথা’ জানেন যা কখনো কাউকে বুঝতে দেননি, আনোয়ার ইব্রাহিমও এমন অনেক ‘গোপন বিষয়’ জানেন যা তিনি প্রকাশ করেননি। উভয়েই বোঝেন কার কাছে কী গোপন বিষয় অপ্রকাশিত রয়েছে। তাই রাজনীতির মাঠে বন্ধুত্ব ও শত্রুতার মাঝখানের লাল দাগ কেউ অতিক্রম করছেন না। উভয়েই সরগরম রাজনীতি করছেন; তবে ‘বিষবাক্য’ ব্যবহার করছেন না।
এখন সংসদ সদস্য ও নেতারা বলাকার মতো ছোট ছোট দলে আকাশে পেখম মেলে দিয়েছেন। কোন দল কোন ঘাটে গিয়ে বসে তা শুধু সময়ের ব্যাপার। লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশ ও জাতির চেয়ে নিজের ভবিষ্যতের সোনালি সোপান তৈরির ইচ্ছা বেশির ভাগ নেতার। এখন ক্ষমতার আলোকবর্তিকা মাহাথির, আনোয়ার, মুহিউদ্দিন, শফি- এদের উপর ঘুরছে। আদালত, আস্থাভোট ও কাজে মুহিউদ্দিন এখনো সবাইকে টপকে এগিয়ে আছেন। স্পিকার নিয়োগে সমর্থন পেয়ে, তার ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়ে গেছে। তবে মালয়েশিয়ার রাজনীতি শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। এটাও মাহাথিরের এক ব্যর্থতা। সকালে দল গঠন করা হল তো বিকেলে দল ভেঙে নতুন দল হলো, জোটের তো কোনো হিসাবই নেই। পারিকাতান নাসিওনালে কতজন আছে কেউ বলতে পারে না। নতুন নতুন জোট ও সমর্থন মালয়েশিয়ার রাজনীতিকে কলুষিত না করলেও অস্থির করে তুলেছে। মাহাথির এখনো সবচে ‘বড় খেলোয়াড়’। তিনি হঠাৎ এমন চাল দেন যে সবাই হকচকিত হয়ে যায়। তিনি যখন চাল দেন তখন এর পক্ষে প্রচুর যুক্তি উপস্থাপন করেন। সেগুলো খণ্ডানোর জন্য কোনো নেতা এখনো মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে নেই। তবে এককভাবে আনোয়ার ইব্রাহিম বহু যোগ্যতা রাখেন।
অনেকে মনে করেন, মাহাথিরের আর কোনো কার্ড নেই। তবুও তাকে সবার ভয়; কোন সময় জাদুকরের মতো আস্তিন থেকে কার্ড বের করবেন বলা যায় না। তিনি যেকোনো সময় যেকোনো দল ভাঙতে পারেন।
মাহাথিরের শিবিরে মুহিউদ্দিন ঢুকে পড়েছেন। মালয়ী ও ভারতীয়দের কাছে এখন মুহিউদ্দিন বেশ প্রিয়। তদুপরি কোভিড চিকিৎসায় তার পদক্ষেপ দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হওয়ায় পর কদর বেড়ে গেছে। তথাপি সাধারণ মানুষ ও নেতারা মনে করেন, মধ্যপন্থী মাহাথির ও ইসলামপন্থী আনোয়ারের মতো বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ মালয়েশিয়ায় নেই।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার