কাশ্মিরের হিন্দু পণ্ডিতদের দাবি
কাশ্মিরের হিন্দু পণ্ডিতদের দাবি - ছবি : সংগৃহীত
কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদায় সংবিধানে রাখা ৩৭০ অনুচ্ছেদ ‘জাতীয় ও জনস্বার্থের’ দোহাই দিয়ে নরেন্দ্র মোদির সরকার বাতিল করলেও এখন সেই অনুচ্ছেদসহ ওই অঞ্চলের ‘ছিনিয়ে নেয়া’ মর্যাদা ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন সেখানকার পণ্ডিতরা (কাশ্মিরি পণ্ডিত)। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের বার্ষিকী আগামী ৫ আগস্ট। তার আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নেমেছে কাশ্মিরি পণ্ডিতদের সংগঠন ‘পুনর্মিলন, মুক্তি এবং পুনর্বাসন’। তারা বলছে, এ অঞ্চলের বিশেষ মর্যাদা এবং সংবিধানের ৩৭০ পুনর্বহাল করে আবার সবকিছু আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া হোক।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা চলে যাওয়ার সময় উপমহাদেশ ভাগ হয়ে গেলে তখন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মিরের একাংশের শাসকেরা বিশেষ শর্তে ভারতে যোগ দেন। এই অবস্থায় রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হলে নানা সঙ্ঘাতের পর চুক্তি অনুসারে কাশ্মিরের পশ্চিম-উত্তরাংশ পাকিস্তানের হাতে চলে যায়, যেটা বর্তমানে আজাদ-কাশ্মির বলে পরিচিত সেখানে। ওই অঞ্চলটি স্ব-শাসিত।
আর ভারতের শাসিত কাশ্মিরের সেই ‘বিশেষ শর্ত’ রক্ষায় সংবিধানে এত বছর ধরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ থাকলেও গত ৫ আগস্ট তা বাতিল করে দেয় বিজেপি সরকার। ওই অনুচ্ছেদটির আওতায় কাশ্মির আলাদা সংবিধান ও পতাকার স্বাধীনতা ভোগ করত। এমনকি সেখানে সরকারি চাকরি, জমি কেনা এবং ব্যবসা করার সুযোগটিও ছিল কেবল কাশ্মিরিদের জন্যই কিন্তু ওই অনুচ্ছেদ বাতিলের কারণে সেসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন কাশ্মিরিরা।
অনুচ্ছেদটি বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মির পুনর্গঠন বিল পাস হয় ভারতের পার্লামেন্টে। বিলে রাজ্য ভেঙে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের ঘোষণা হয়। বর্তমানে সেই অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মির এবং লাদাখ, দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। কিন্তু মোদি সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সংবিধানবিরোধী বলে মনে করছে কাশ্মিরি পণ্ডিতদের সংগঠনটি। উদ্বাস্তু কাশ্মিরি পণ্ডিতদের ওই সংগঠনটির চেয়ারম্যান সতীশ মহলাদার বলেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব কাশ্মিরের পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা এবং সংবিধানের ৩৭০ ধারা পুনর্বহাল চাই। ভারতের সংবিধান প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রত্যেক ধর্ম, প্রত্যেক সম্প্রদায় এবং প্রত্যেক সামাজিক সংগঠনকে সমানাধিকার দেয়। এর আগে কোনো দিন কোনো প্রদেশের পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেয়া হয়নি। এটা কোনো গণতন্ত্রে হয় না। সেনা নামিয়ে একটি রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
কোনো সরকার নিজের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে পারে না। কাশ্মিরের এই মর্যাদা বাতিলে পাকিস্তান অত্যন্ত নাখোশ হয়। তারা জাতিসঙ্ঘ, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে অভিযোগও করে। পাকিস্তানের দাবি, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বলেই কাশ্মিরের বিষয়ে নয়াদিল্লি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা তাদের সাম্প্রদায়িক মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছে। কাশ্মির ভাঙায় ভারতের সমালোচনা করে মালয়েশিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশ।
নয়াদিল্লি মনে করে, ৯০-এর দশকে কাশ্মিরে সঙ্ঘাতের কারণে প্রায় ছয়-সাত লাখ সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবার প্রাণভয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। ওই হিন্দু জনগোষ্ঠীকে ‘কাশ্মিরি পণ্ডিত’ বলা হয়। বলা হয়ে থাকে, হিন্দু অধ্যুষিত ভারতের ভোটের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে নিতে নরেন্দ্র মোদির সরকার কাশ্মিরের ওই মর্যাদা বাতিল করে এবং কাশ্মিরি পণ্ডিতদের আপন ভিটায় ফেরার আহ্বান জানায়।
সূত্র : ফ্রি প্রেস জার্নাল