দ্বিতীয়বার কি করোনা হতে পারে?
দ্বিতীয়বার কি করোনা হতে পারে? - ছবি : সংগৃহীত
করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠার পর কি আবার কেউ ওই রোগে আক্রান্ত হতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার আগে কোভিড নির্ণয়ের পরীক্ষা সম্বন্ধে একটু জেনে নেয়া দরকার। সিংহভাগ ক্ষেত্রেই কোভিড নির্ণয়ের জন্য আরটি পিসিআর টেস্ট করা হচ্ছে। এই পরীক্ষায় করোনা ভাইরাসের আরএনএ খুঁজে নেয়া হয়। সাধারণত পিসিআর টেস্টের জন্য মানুষের লালার নমুনা নেয়া হয়ে থাকে। টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ এলে করোনা পজিটিভ ধরা হয়।
দ্বিতীয়বার করোনা হতে পারে?
এবার মূল প্রশ্নে ফেরা যাক। করোনা থেকে সুস্থ রোগীর কি আবার পিসিআর রিপোর্ট পজিটিভ আসতে পারে? উত্তর হলো, হ্যাঁ, পারে। আসলে রোগী সুস্থ হওয়ার পরও বহুদিন পর্যন্ত তার শরীরে করোনার আরএনএ পজিটিভ থাকতে পারে। এর অর্থ এটা নয় যে, রোগী ফের করোনায় আক্রান্ত হলেন বা সুস্থ হননি। এক্ষেত্রে প্রথমবারের জন্য আক্রমণ করা করোনা ভাইরাসের নিষ্ক্রিয় আরএনএ ফের পিসিআর পরীক্ষায় ধরা পড়ে। তাই পিসিআর পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে ফের করোনা হয়েছে কি না বোঝা সম্ভব নয়। পুনরায় সংক্রমণ হয়েছে কি না জানতে ভাইরাসকে আইসোলেট করে ভাইরাস কালচার করতে হয়। আর এতদিন পর্যন্ত পুনরায় সংক্রমণের তত্ত্ব নিয়ে জল্পনা চললেও গোটা বিশ্বে কোনো রোগীরই ভাইরাস কালচার করে পুনঃসংক্রমণ প্রমাণিত হয়নি।
কী বলছে বিভিন্ন গবেষণা?
গবেষণায় ইতিমধ্যেই দেখা গেছে যে, রোগ লক্ষণ দেখা দেয়ার ১০-১২ দিন পর রোগীর শরীর থেকে সক্রিয় ভাইরাস মিলছে না। ঠিক এই কারণে আইসিএমআর জানিয়েছে, করোনার লক্ষণ কমে যাওয়ার নির্দিষ্ট দিন পর রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। পিসিআর টেস্ট করে পজিটিভ না নেগেটিভ জানার প্রয়োজন নেই। তবে ভেন্টিলেশনে থাকা, সংক্রামিত অবস্থাতে ক্যান্সারের চিকিৎসা চলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ফের পিসিআর করা হয়।
পুনরায় লক্ষণ মানেই করোনা নয়
করোনা থেকে সেরে ওঠার ক’দিনের মধ্যে কিছু মানুষের ফের শ্বাসকষ্ট, জ্বর ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এদের অনেকেরই ফের পিসিআর টেস্ট করালে রিপোর্ট পজিটিভ আসছে। শুরু হচ্ছে আশঙ্কা-উৎকন্ঠা! তবে এক্ষেত্রে ফের করোনা হওয়ার আশঙ্কা প্রায় নেই। আসলে করোনা থেকে ফিরে আসার পর বহু রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে কম। অন্য সংক্রমণ, রক্ত জমাট বাঁধা, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি দেখা দিতেই পারে। এগুলোকে পোস্ট কোভিড কমপ্লিকেশন বলে। এর নির্দিষ্ট চিকিৎসা রয়েছে। তবে দ্বিতীয়বার করোনার তত্ত্বকে নাকচ করতে এই রোগীদের সিরাম আইজিজি টেস্ট করানো যেতে পারে। এই রিপোর্ট পজিটিভ আসার অর্থ হলো রোগীর শরীরে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। ফের করোনার আশঙ্কা নেই। আর এই টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ মানেই সমস্যা আছে, এমনও নয়। অ্যান্টিবডি ছাড়াও কোষের নিজস্ব (সেল মেডিয়েটেড) ইমিউনিটি তৈরি হয়, যা শরীরকে রক্ষা করে। তাই ভয় পাবেন না।
সুস্থ হওয়ার পর নিজে থেকে পিসিআর নয়
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময় পরীক্ষা হয়নি বলে বা অফিস থেকে বলেছে বলে অনেকেই সুস্থ হওয়ার পরও নিজে থেকে টেস্ট করাচ্ছেন। কিছু ক্ষেত্রে পজিটিভ আসছে। এক্ষেত্রে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। রিপোর্ট যাই বলুক, কোনো ব্যক্তি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার অর্থ হলো, তার মধ্যে আর রোগের প্রকোপ নেই। রোগ ছড়াতেও পারবেন না। তবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরের ১০ দিন রোগী ভাইরাস ছড়াতে পারেন। তাই ওই সময়টুকু তাকে বাড়িতে আইসোলেশনে থাকতে হয়।
বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে সেরে ওঠা রোগীদের সবদিক বুঝেশুনে চিকিৎসকরাই বলে দেন কবে থেকে বাড়ির বাইরে পা ফেলা যাবে। তাই সেরে ওঠার পর কাজে যোগ দেয়ার জন্য পিসিআর রিপোর্ট চাইলে চিকিৎসকের কাছ থেকে ফিট সার্টিফিকেট নিয়ে গিয়ে দেখান। পিসিআর টেস্ট করার দরকার নেই।
সূত্র : বর্তমান