ঘুমের যত অসুখ
ঘুমের যত অসুখ - ছবি : সংগৃহীত
ভালো ঘুম সুস্বাস্থ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ। ঘুম ভালো হলে পরদিন সকালে তরতাজা ভাব নিয়ে জেগে ওঠা যায় এবং দৈনন্দিন কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায়। কিন্তু ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে সেটি যেমন আমাদের চেহারায় বিরূপ ছাপ ফেলে তেমনি কাজকর্মেও বিঘ্ন সৃষ্টি করে। হতে পারে নানা ধরনের সমস্যা ও অসুখ। এখানে প্রধান কয়েকটি সমস্যা উল্লেখ করা হলো। ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
নিদ্রাকালীন আতঙ্ক (Sleep terror) : এ ধরনের সমস্যাতে রোগী ঘুম থেকে হঠাৎ করে আতঙ্কের সাথে চিৎকার করে জেগে ওঠে অথবা গোঙাতে থাকে। ঘুম ভাঙার পর পরই খুবই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ঘামতে এবং ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দেখা যায়। এ সময় হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় বলে বুক ধড়ফড় করে ওঠে। এত কিছুর পরও কয়েক মিনিটের মধ্যে রোগী পুনরায় যখন ঘুমিয়ে পড়ে এবং পরের দিন সকালে স্বাভাবিকভাবে ঘুম ভাঙলে রাতের ঘটনার কথা খেয়াল করতে পারে না। কারণ ননরেমের ((Non Rem) তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরে ঘুম ভেঙে থাকে বলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ ধরনের সমস্যা শুধু শিশুদের হয়ে থাকে। তবে কদাচিৎ এটা বড়দের মধ্যে দেখা যায়।
দুঃস্বপ্ন (Night Mares) : ঘুমের রেম (Rem) স্তরে মানুষে অনেক সময় আতঙ্কগ্রস্ত স্বপ্ন দেখে থাকে। এই সব স্বপ্নে মানুষ দেখে যে, কেউ তাকে আক্রমণ করছে অথবা সে উঁচু থেকে নিচে পড়ে যাচ্ছে বা ভয়ঙ্কর কোনো কিছু দেখছে। দুঃস্বপ্ন মানুষ স্বাভাবিকভাবে দেখে থাকতে পারে। সাধারণত অবদমিত চিন্তা এবং মস্তিষ্কের ভেতরের প্রচ্ছন্ন চিন্তার বিমূর্ত প্রকাশরূপে মানুষের দুঃস্বপ্ন দেখা কোনো রোগ নয়। অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ীভাবে ঘন ঘন দুঃস্বপ্ন দেখা মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যারা মদ পান বা নেশা করে অথবা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে থাকে তাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি হয়। এ ছাড়া বেশ কিছু ওষুধ আছে যাতে মানুষ দুঃস্বপ্ন দেখতে পারে।
নিদ্রাকালীন চমকানো (Sleep start) : অনেকে আছে যারা ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে চমকানো এবং সাথে সাথে খিঁচুনি দিয়ে জেগে ওঠে। জেগে গেলে এই চমক বা খিঁচুনি আর থাকে না। এ ধরনের সমস্যা মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করলেও এটা কোনো রোগ বা রোগের লক্ষণ নয়। এ জন্য কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।
নিদ্রাকালীন হাঁটা (Somnambulism) : অনেকের দেখা যায়, তারা ঘুমন্ত অবস্থায় বিছানা থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করে। এমন কি সামনে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তা সরিয়ে দেয়া। যেমন- চেয়ার বা দরজা প্রভৃতি। অনেকের ক্ষেত্রে এ সময় চোখ খোলা থাকে কিন্তু মুখ ও চোখ অভিব্যক্তিহীন থাকে। তাদের চলন অনেকটা বিশৃঙ্খল অথবা সোজা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে একে নিশিডাক বা জিনে ধরা বলে। এ অবস্থা প্রায় ১০ মিনিট পর্যন্ত থাকে। এটা ননরেম স্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে হয়ে থাকে বলে সে কী ধরনের স্বপ্ন দেখছে তা স্বস্তি ফিরে পেলে কিছু মনে করতে পারে না।
এ ধরনের ঘটনা হয় রাতের প্রথমের দিকে। কিন্তু যারা বলে যে, স্বপ্ন দেখে বা স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে হাঁটছিল তাদেরটা ঘটে রেম স্তরে এবং তা রাতের শেষার্ধে। এ ধরনের নিশিডাক বা নিদ্রাকালীন হাঁটা শিশুদের মধ্যে বেশি হয়। যাদের বয়স ছয় থেকে ১২ তাদের বেশি হয়। এটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো রোগ নয়, কিন্তু যখন এটা বড়দের মধ্যে দেখা যায় তখন তা কতগুলো কারণে হতে পারে। কারণগুলো হলো যারা গাঁজা, ফেনসিডিল, মদ প্রভৃতি নেশায় অভ্যস্ত। কিছু কিছু বিশেষ ধরনের ওষুধ খাওয়া। মস্তিষ্কের কোনো অসুবিধা বা অসুখ থাকলে। মৃগিরোগী শিশুদের ক্ষেত্রে এর থেকে সাবধানে থাকার জন্য রাতে তাদের রুমে কোনো ধারাল জিনিস রাখবেন না। বিছানা থেকে যাতে পড়ে না যায় এবং অন্য কোনোভাবে আঘাত না পায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। দরজা শক্ত করে আটকিয়ে রাখবেন। শিশুরা বড় হয়ে গেলে এ রোগ আর থাকবে না। বড়দের ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা সৃষ্টিকারী কারণগুলোর যথাযথ চিকিৎসা করানো উচিত। ঝাড় ফুঁক ও তাবিজ কবজ করে কোনো উপকার তো হবে না বরং তাতে ভয় পেয়ে পরে মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হবে।
ঘুমের মধ্যে সংবেদী আক্রমণ (Sensory Paroxysm) : এতে হঠাৎ করে ঘুমের মধ্যে খুব জোরে আওয়াজ শোনা, তীব্র আলোর ঝলক দেখা এবং মনে হবে কেউ যেন তাকে মাটি থেকে উঁচুতে তুলে জোরে আছাড় মারতে যাচ্ছে। এ স্বপ্নে দেখার পর পরই ঘুম ভেঙে যায়। এটা বেশি হয় যেসব লোক দুর্বল ও যারা প্রচণ্ড মানসিক পরিশ্রম করেন তাদের মধ্যে। এটা তেমন কোনো রোগ নয়।
নিদ্রায় দমবন্ধ হয়ে যাওয়া (Sleep Area) : অনেকে বলে থাকেন ঘুমের মধ্যে তাদের দম আটকে যায়। এ ধরনের অবস্থাকে অনেকে ‘বোবায় ধরা’ বলে মনে করেন। এ ধরনের নিঃশ্বাস বন্ধ অবস্থা ১০ সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এক ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুমের মধ্যে প্রায় ৩০ বার পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এটা আরো বেশি হতে পারে। এর কারণের উৎস হিসাবে একে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। শ্বাসনালী বদ্ধতা বা অবস্ট্রাকটিড স্লিপ এপনিয়া, কেন্দ্রীয় বা সেন্ট্রাল স্লিপ এপনিয়া, মিশ্র ধরনের এপনিয়া।
১. শ্বাসনালী বদ্ধতা ঘুম বা অবস্ট্রাকটিড স্লিপ এপনিয়া : এ ক্ষেত্রে শ্বাস প্রশ্বাস শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকে, এ জন্য রোগী শ্বাস নিতে পারলেও শ্বাসনালীর ওপরের দিকে কোনো কারণে কিছুক্ষণের জন্য বদ্ধতা সৃষ্টি হলে বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে রোগীর দমবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এটা অনেক কারণে হতে পারে। কোনো কারণে উপরের শ্বাসনালীর পেশির টানের কারণে তা চুপসে যায় এবং শ্বাস নেয়ার সময়ও তা পর্যাপ্ত খোলে না। গঠনগত কারণে ওপরের শ্বাস পথ সরু হয়ে যায়। বড় জিহ্বা, গলার সরু শ্বাসপথ, মেদাধিক্যতা, টনসিল বা এডিনয়েড ফুলে যাওয়া, গলার ক্যান্সার প্রভৃতি। ওপরের কারণের সাথে মদপান, ধূমপান, ঘুমের ওষুধ খাওয়া এবং দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুমানো যুক্ত হলে রাতকালীন শ্বাসবদ্ধতা বাড়িয়ে দেয়।
এ সব রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে এরা মধ্যবয়স্ক লোক, শরীরে প্রচুর মেদ আছে, উচ্চ রক্তচাপ আছে এবং দিনে বেশি ঘুমান। রোগী নিজে বলেন তাদের দিনে খুব বেশি ঘুম পায়, অবশ লাগে, সকালে ঘুম থেকে উঠলে একটা ঘুম ঘুম ভাব থাকে, মাথা ও ঘাড় ব্যথা করে, মাথা ঘোরায়, ওজন বাড়ছে, কোনো কাজে মনোযোগী হতে পারছে না এবং পুরুষত্বহীনতা দেখা দিয়েছে। তাদের শয্যাসঙ্গীরা বলে থাকে যে, রোগী রাতে খুব জোরেশোরে শব্দ করে নাক ডাকে, ঘুমের মধ্যে অস্থির হয়ে ঘেমে ওঠে, গোঙাতে থাকে এবং হাত পা ছোড়াছুড়ি করে।
তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে দেখা যাবে প্রায়ই সব কিছু স্বাভাবিক। কারণ দিনে এগুলোর প্রকটতা থাকে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কারণগুলোর লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়। এ জন্য তাদের নাক, কান, গলা ও থাইরয়েড পরীক্ষা করা এবং উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ দেখা জরুরি।
চিকিৎসা : ওষুধ দিয়ে এর কোনো সাফল্যজনক চিকিৎসা সম্ভব নয়। এ জন্য রোগীর উচিত ওজন কমানো, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নাক, কান, গলার কোনো অসুবিধা থাকলে তার চিকিৎসা করানো। মদ্যপান, ধূমপান ও অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা। আধুনিককালে নাকের সার্বক্ষণিক বায়ু চাপ প্রয়োগ পদ্ধতি, মুখ ও চোয়ালে বিশেষ জিনিস আটকে রাতে ঘুমানো এবং গলার বিশেষ ধরনের প্লাস্টিক সার্জারি Uvulopalatopharyngo plasty (এখানে আলা জিহ্বার সাথে মুখের তালু ও গলার বিশেষ পদ্ধতি আটানো হয়)। অনেকে টনসিলেকটমি ও নাকের ডিএনএসের অপারেশন করতে উপদেশ দিয়ে থাকেন।
কেন্দ্রীয় কারণে শ্বাসবদ্ধতা বা সেন্ট্রাল স্লিপ এপনিয়া : এ ক্ষেত্রে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার ক্ষমতা ও পদ্ধতি কিছুক্ষণের জন্য লোপ পেয়ে থাকে। কারণ মস্তিষ্কের যে অংশ শ্বাস-প্রশ্বাস পদ্ধতির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে তা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়। কারণ শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া চালনাকারী উত্তেজনার গোলযোগ ও মস্তষ্কের কোনো অসুখ বা টিউমার। তবে সাধারণভাবে শুধু এ কারণে রাতে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত বিরল। অনেক সময় কোনো কারণে দ্রুত এবং বড় বড় শ্বাস নিলে কিছুক্ষণের জন্য রাতে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, একে ‘চাইন-স্ট্রোক শ্বাস-প্রশ্বাস’ বলে। কেন্দ্রীয় কারণে শ্বাসবদ্ধ ঘরে রোগীরা দিনে খুব বেশি ঘুমিয়ে থাকে তবে তাদের ঘুমের মধ্যে নাকডাকা বা কোনো শব্দ করার অভ্যাস থাকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একে অন্যান্য সমস্যা এবং শ্বাসনালীর বদ্ধতাজনিত এপনিয়ার সাথে দেখা যায়।
মিশ্র ধরনের নিদ্রাকালীন শ্বাসবদ্ধতা : বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাতকালীন শ্বাসবদ্ধতাজনিত রোগীদের শ্বাসনালী বদ্ধতা বা অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া কেন্দ্রীয় বা সেন্ট্রাল স্লিপ এপনিয়া একসাথে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়াও এই সমস্যাগুলোর সাথে কতকগুলো রোগ দেখা যায়। হৃদযন্ত্রের ছন্দহীনতা বা এরিদমিয়া, হার্টফেইলিওর, করপারমোনালি পালমোনারি হাইপার টেনশন, ফুসফুস ও গলার ক্যান্সার প্রভৃতি।
নিদ্রায় বিছানায় প্রস্রাব করা
রাতে নিদ্রাকালীন মানুষের ইচ্ছাধীন বেশির ভাগ স্নায়ু বিশ্রামে থাকে। তারপরও বিশেষ বিশেষ স্নায়ু ব্যবস্থা বিশেষ অঙ্গকে নিদ্রাকালীন সময়েও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। ঘুমের মধ্যে যখন প্রস্রাবের বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় তখন বিছানায় অচেতন অবস্থায় প্রস্রাব হয়ে যায়। শরীরের মূত্রথলি ও নিঃসরণ নালীতে এ ধরনের বিশেষ প্রতিবর্তী স্নায়ু ক্রিয়া থাকে যা আমাদের অজান্তে ইচ্ছাধীন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে কাজে লাগায়। নবজাতক ও শিশুদের ক্ষেত্রে এ ধরনের স্নায়ু ব্যবস্থা সক্রিয়ভাবে গড়ে ওঠে না বলে তাদের যখন তখন যেকোনো অবস্থায় প্রস্রাব করতে দেখা যায়। দুই বছর বয়স পর্যন্ত এটা ঘটে থাকে এরপর থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত ওই ঐচ্ছিক স্নায়ুতন্ত্র আস্তে আস্তে তৈরি হতে থাকে। তারপর দেখা গেছে স্বাভাবিকভাবে শতকরা ১০ শতাংশ শিশুর পাঁচ বছরের পরও বিছানায় প্রস্রাব করার অভ্যাস দেখা যায়। এবং ১ শতাংশ শিশুর ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই অভ্যাস রয়ে যায়। দেখা গেছে এ ধরনের ঘটনা বংশগত এবং মেয়েদের থেকে ছেলেদের বেশি হয়ে থাকে। এটা শিশু ও কিশোরদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ রোগমুক্ত সমস্যা। কিছু কিছু কারণে এ ধরনের ঘটনা বেশি লক্ষ করা যায়।
চিকিৎসা : শিশুর ওপরে বর্ণিত কারণগুলো দূর করার পরও (রোগগুলো বাদে) যদি তার এই সমস্যা ১২-১৩ বছর পর রয়ে যায় তবে তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। তবে সাধারণ কতকগুলো ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক মানসিক বিকাশে সাহায্য করা। এ ক্ষেত্রে তাকে এ জন্য তিরস্কার না করে তার দিকে মনোযোগী হওয়া। শিশুর মলমূত্র ত্যাগের স্বাস্থ্যসম্মত শিক্ষা ও অভ্যাস করে তোলা। শিশুদের দিনের বেলায় বেশি পানি ও তরল খাবার খাওয়ানো এবং রাতে অপ্রয়োজনীয় তরল খাদ্য না দেয়া। ঘুমানোর আগে ও মধ্যরাতে একবার করে ঘুম থেকে তুলে প্রস্রাব করানো উচিত। কারণ ঘুমানোর তিন-চার ঘণ্টা পর শিশুর প্রস্রাব হয়ে থাকে। এভাবে মধ্যরাতে জাগিয়ে তোলার অভ্যাস করাতে পারলে শিশুর মধ্যে আপনা আপনি মূত্র ত্যাগের সঠিক অভ্যাস গড়ে উঠবে। বিদেশে কিছু কিছু ক্লিনিকে বিশেষ সঙ্কেতযন্ত্রের মাধ্যমে শিশুর এই বদ অভ্যাস দূর করানো হয়। আমাদের দেশেএটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। শুধু চিকিৎসকের কড়াকড়ি ব্যবস্থায় এ ধরনের সমস্যার জন্য অবসাদ রোধক ওষুধ দীর্ঘ দিন ধরে খাওয়ানো যেতে পারে। মনে রাখবেন, এই সমস্যায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
রাতকালীন অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া : স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কারণে রাতে ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব তৈরি কম হারে হয়ে থাকে। ফলে ছয়-সাত ঘণ্টা নিদ্রাকালীন খুব একটা প্রস্রাব করার দরকার পড়ে না। এই সময় মূত্রথলি থেকেও মূত্রের বেগের উত্তেজনা কম থাকে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এবং রোগে রাতে প্রস্রাবের ঘন ঘন বেগ হতে পারে-
স্বাভাবিক কারণে : অতিরিক্ত পানি পান করলে, আর্দ্র ও ঠাণ্ডা আবহাওয়া, পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে, গর্ভাবস্থায়।
রোগ: ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ফেইলিওর (ডাইউরেটিক ফেজ), স্পাইনাল কর্ডের আঘাত, মৃগী রোগ, মূত্রনালীর সংক্রামক রোগ, প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি, বদহজম।
নিদ্রাকালীন লিঙ্গোত্থান : স্বাভাবিকভাবে পুরুষের ক্ষেত্রে রাতে নিদ্রায় স্নায়বিক কর্মকাণ্ডের জন্য লিঙ্গোথান ঘটে থাকে। এটা ১২-৩০ বছর বয়সে শুরু হয় এবং তা বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত থাকে। গড়ে প্রতি রাতে এটা ১০০ মিনিট বা দেড় ঘণ্টা ধরে থাকে। এই স্বাভাবিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে পুরুষত্বহীনতার কারণ নির্ণয় করা হয়। যারা শারীরিক কারণে পুরুষত্বহীন তাদের রাতে কখনো লিঙ্গোত্থান ঘটে না। যাদের রাতে লিঙ্গোত্থান ঘটে অথচ পুরুষত্বহীন তাদের মূল কারণ মানসিক।
স্বপ্নদোষ : পুরুষদের ক্ষেত্রে ঘুমের মধ্যে লিঙ্গোত্থান ও বীর্যস্খলন ঘটে থাকে। এটা প্রধানত ঘুমের রেম স্তরে কোনো যৌনবিষয়ক স্বপ্ন দেখে থাকলে তার পর পরই ঘটে। এই জন্য একে আমাদের দেশে ‘স্বপ্নদোষ’ বলা হয়। আসলে এটা কোনো দোষ নয়। সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের এটা ঘটে থাকে। এ ধরনের ঘটনা কিশোরদের বেশি হয়ে থাকে, এমনকি প্রতি রাতেও ঘটতে পারে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে ও যৌনসংক্রান্ত সঠিক জ্ঞান ও মানসিক চিন্তাধারা এবং বিয়ের পর কমে যায়। বিবাহিত পুরুষদের এটা তেমন হয় না। রাতে ঘুমানোর আগে অধিক যৌনচিন্তা, নেশাকারক দ্রব্য সেবন প্রভৃতি এ ঘটনা বাড়ায়। কিছু কিছু স্নায়বিক রোগে এটা সমস্যা সৃষ্টিকারক ঘটনা হিসেবে দেখা দিয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন হয়ে থাকে।
শেষ কথা : নিদ্রাজনিত যেকোনো সমস্যাতে শুধু ঘুমের ওষুধ খেলেই চিকিৎসা হয় না বরং ক্ষেত্রবিশেষে তা সমস্যার সৃষ্টি করে। এ জন্য এ ক্ষেত্রে নিজে নিজে সর্বজ্ঞানী হয়ে নিজের চিকিৎসা নিজে করতে যাবেন না। আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে অভিজ্ঞ চিকিৎসকই এ সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন।
এ ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক, অবাস্তব, কুসংস্কারাশ্রয়ী চিকিৎসাপদ্ধতি গ্রহণ করলে আপনার চিকিৎসা তো হবেই না বরং সমস্যা আরো জটিল হয়ে যাবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
চেম্বার-১ : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ, ২, ইংলিশ রোড, ঢাকা। ফোন: ০৯৬১৩৭৮৭৮০২। চেম্বার-২ : আজগর আলী হসপিটাল, ১১১/১/এ ডিস্টিলারি রোড, গেন্ডারিয়া, ঢাকা। ফোন : ০১৭৮৭৬৮৩৩৩৩, ১০৬০২