মহান আল্লাহর সৃষ্টি ক্ষমতার নিদর্শন

জেহাদ খান | Jul 28, 2020 02:28 pm
মহান আল্লাহর সৃষ্টি ক্ষমতার নিদর্শন

মহান আল্লাহর সৃষ্টি ক্ষমতার নিদর্শন - ছবি : সংগৃহীত

 

 

মহান আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিজগৎ খুবই বৈচিত্র্যময়। সীমাহীন মহাবিশে^ তিনি অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের আদি পিতা হজরত আদম আ:কে বাবা-মা ছাড়া সৃষ্টি করলেন। প্রত্যেক মানুষ ও গৃহপালিত প্রাণীর প্রত্যেকের চেহারা আলাদা। এমনকি প্রত্যেক মানুষের জিহবা, চোখ, কান, আঙুলের ছাপও আলাদা।

‘আল্লাহ প্রতিটি প্রাণীকেই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ বুকের উপর হামাগুড়ি দিয়ে চলে, কেউ দুই পায়ের ওপর ভর দিয়ে চলে আবার কেউ চার পায়ে ভর করে। তিনি যা কিছু চান, সৃষ্টি করেন। তিনি প্রতিটি বস্তুর উপর শক্তিমান।’ (আল কুরআন ২৮:৪৫)
ভাইরাস হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার ক্ষুদ্রতম একটি সৃষ্টি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী তিমি মাছ একপ্রকার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে থাকে। তেমনি আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ তাঁরই ক্ষুদ্রতম সৃষ্টি করোনার তাণ্ডবলীলায় আজ বিপর্যস্ত। ১৯৬৫ সালে মানবদেহে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল সর্দির কারণ হিসেবে। বর্তমান শতাব্দীর শুরুতে বাদুড় থেকে একই প্রজাতির করোনাভাইরাস মানবদেহে আক্রমণ করে ঝঅজঝ, গঅজঝ রোগ সৃষ্টি করে যা সীমিত আকারে (ঊঢ়রফবসরপ) পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ভাইরাসটি সম্পূর্ণ নতুন আকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করে চীনের উহান শহরে। এই ভাইরাস আল্লাহ তায়ালার এক নতুন সৃষ্টি। এর বয়স মাত্র ৭-৮ মাস। এর গঠন প্রকৃতি অন্যান্য করোনাভাইরাস প্রজাতি থেকে আলাদা। তবে অন্যান্য করোনার মতো এটিও দেখতে মুকুটের মতো। এর দৈর্ঘ্য মাত্র ২০-৩০ ন্যানোমিটার। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে এক লক্ষ গুণ বড় করেই এটা দেখা সম্ভব। এরকম একটি ক্ষুদ্র ভাইরাস বাতাসে ভাসে বা বিভিন্ন জিনিসের ওপর পড়ে থাকে। এটি জীবিতও নয়, মৃতও নয়। এর আমিষের ওপর চর্বির একটি আবরণ থাকে। এটি এতই দুর্বল যে, মাত্র ২০ সেকেন্ড সাবান ব্যবহার করলে এর চর্বি গলে ভাইরাসটি ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু করোনাভাইরাস যদি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, তাহলে সে একটি ক্ষুদ্রতম ফটোকপিয়ার মেশিনে পরিণত হয়। তার নিজের কোনো ‘কাগজ-কালি’ নেই। আমাদের শরীরের কোষের উপাদান ব্যবহার করে এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে এই ভাইরাস তার কোটি কোটি ফটোকপি তৈরি করতে পারে। তার ভ্রমণ করার ক্ষমতা ১-২ মিটার পর্যন্ত। কিন্তু মানুষই তাকে ছড়ানোর কাজে সহায়তা করে থাকে। এর ছবি দেখলে মনে হয়, এটি মহান এক শিল্পীর নিখুঁত শিল্পকর্ম। তবে প্রকৃতির মাঝে ছড়িয়ে থাকা তাঁর অসংখ্য শিল্পকর্মের মাঝে মূর্খ মানুষ মহান শিল্পীকে খুঁজে পায় না।

‘তিনি মানুষকে এক ক্ষুদ্র শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর দেখতে দেখতে সে স্পষ্টত ঝগড়াটে ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে।’ (আল কুরআন ১৬:৪)
এই ‘ঝগড়াটে মানুষ’ বিভিন্ন আধুনিক মারণাস্ত্র, নগর-বন্দর, শিল্পকারখানা, কম্পিউটার, রকেট, ড্রোন, মোবাইল আবিষ্কার করে অহঙ্কারী হয়ে উঠে। সবল রাষ্ট্র কর্তৃক দুর্বল রাষ্ট্রকে ধ্বংস করা, নিয়ন্ত্রণ করা, ক্ষমতা দখল, গুম, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, অন্যের সম্পদ দখল ইত্যাদির কারণে অত্যাচারিতের ক্রন্দন রোলে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। তা ছাড়া প্রকৃতিতে অত্যধিক কার্বন নিঃসরণ, বৃক্ষনিধন, বায়ুদূষণ, প্লাস্টিক, কেমিক্যাল ও অন্যান্য বর্জ্য বৈশি^ক তাপমাত্রা বৃদ্ধি করা ইত্যাদির মাধ্যমে পৃথিবী প্রায় মানুষের বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।

‘তাহলে যে লোকেরা নিকৃষ্টতম অপকৌশল গ্রহণ করেছে তারা এ ব্যাপারে কি একেবারে নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আল্লাহ তাদেরকে জমিনে ধসিয়ে দেবেন না? কিংবা এমন দিক থেকে তাদের উপর আজাব এগিয়ে দেবেন না যে দিক থেকে এর আসার ব্যাপারে ধারণা পর্যন্ত তাদের হয় না।’ (আল কুরআন ১৩:৪৫)
পেনিসিলিন ও অন্যান্য অ্যান্টিবায়েটিক আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন, জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তারা জয়লাভ করেছেন। বিভিন্ন সংক্রামক রোগ, বিশেষ করে গুটিবসন্ত পৃথিবী থেকে নির্মূল করার পর চিকিৎসকদের মধ্যে এ ধারণা প্রবল হয়েছিল যে, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের দিন শেষ এবং এ বিষয়ে পড়াশোনা বা গবেষণার প্রয়োজনীয়তা সম্ভবত আর থাকছে না; কিন্তু করোনাভাইরাস সব হিসাব-কিতাব পাল্টে দিলো। দীর্ঘ দিন ধরে যারা চিকিৎসার সাথে জড়িত, তাদের কাছে এটি সম্পূর্ণ নতুন রোগ। কাজেই তাদের অভিজ্ঞতা এ ক্ষেত্রে অচল। এ ভাইরাস বাদুড় থেকে নাকি বনরুই নাকি ল্যাবরেটরি থেকে?

নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। শুরুতে বলা হয়েছিল, ‘এ ভাইরাস বাতাসে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। রোগীর হাঁচি-কাশি থেকে এ ভাইরাস বিভিন্ন জিনিসের উপর গিয়ে পড়ে, কাজেই বেশি বেশি হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি।’ সম্প্রতি বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এটি বায়ুবাহিত একটি রোগ এবং আট ঘণ্টা পর্যন্ত এ ভাইরাস বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। কাজেই সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এ ভাইরাস শ^াসতন্ত্রে আক্রমণ করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে ফুসফুসকে অকার্যকর করতে পারে, রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে, লিভার, হার্ট, কিডনি, ব্রেইন ইত্যাদিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

ডা: ফাউচি যুক্তরাষ্ট্রের ঘধঃরড়হধষ ওহংঃরঃঁঃব ড়ভ অষষবৎমু ধহফ ওহভবপঃরড়ঁং উরংবধংবং-এর প্রধান। তিনি প্রায় অর্ধ-শতাব্দী ধরে ভাইরাসজনিত রোগের ওপর গবেষণা করছেন। তার মতে, ‘এটা ভয়ানক সংক্রামক ভাইরাস যার সক্ষমতা অস্বাভাবিক এবং খুব কম ভাইরাসই এত কার্যকরভাবে আঘাত করতে পারে।’

এ রোগের চিকিৎসাপদ্ধতিও প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। প্রথমে বলা -হয়েছিল, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন কার্যকর, তবে বর্তমানে তা অচল। যুক্তরাষ্ট্রে জবসফবংরারৎ-এর ওপর বড় ধরনের গবেষণায় এর উপকারিতা কিছুটা পাওয়া গেছে। কিন্তু চীন ও যুক্তরাজ্যে এর উপকারিতা প্রমাণিত হয়নি। অস্ট্রেলিয়াতে ওাবৎসবপঃরহ-এর উপকারিতা পাওয়া গেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ঋউঅ এটা করোনার চিকিৎসার জন্য অনুমোদন দেয়নি। অর্থাৎ, এ ব্যাপারে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

স্টেরয়েড কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। আবার অনেক রোগীকে স্টেরয়েডসহ সব ধরনের ওষুধ দেয়ার পরও মৃত্যুবরণ করে থাকে। অর্থাৎ, গত ১০০ বছরে চিকিৎসকরা অন্য কোনো রোগের কাছে এতটা অসহায় বোধ করেননি। অন্য কোনো রোগে এত চিকিৎসক, শিল্পপতি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সরকারি কর্মকর্তা ও অন্যান্য বরেণ্য ব্যক্তি অল্প সময়ের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেননি। পর্তুগালের এক কোটিপতি ব্যাংকারের মেয়ে দুঃখ করে বলেন, তার বাবার এত টাকা ছিল, অথচ তিনি বিনা পয়সার অক্সিজেনের অভাবে মারা গেলেন (বাতাসে অক্সিজেন ২১ শতাংশ)। আসলে মহান আল্লাহ তায়ালা বাতাস, আলো ও পানির মতো জীবনের জন্য অতি প্রয়েজনীয় জিনিসগুলোকে মানুষের জন্য বিনা মূল্যে সরবরাহ করেছেন। করোনার মতো অন্য কোনো রোগ মানব সমাজে এত ব্যাপকভাবে শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, ভ্রমণ, বিনোদন ইত্যাদি খাতে এত বিশাল বৈরী প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এটা কি হঠাৎ দুর্ঘটনা, নাকি মানুষের যথেচ্ছ কর্মকাণ্ডের ওপর মহান সৃষ্টিকর্তার হস্তক্ষেপ?


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us