করোনাভাইরাস : মৃদু উপসর্গে কী করবেন?
করোনাভাইরাস - ছবি : সংগৃহীত
প্রতিদিন যে হারে করোনা সংক্রমনের সংখ্যা বেড়ে চলেছে তাতে চিন্তিত হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। কোথাও যেন একটা মৃত্যুভয় কাজ করছে তাদের মধ্যে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা পজিটিভ মানেই যে মৃত্যু তা কিন্তু একেবারেই নয়। যাদের কোমর্বিডিটি রয়েছে এবং বয়স খুব বেশি তাদের ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণ কিছুটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। আবার যাদের কোমর্বিডিটি নেই, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং বয়সও খুব বেশি নয় তাদের ক্ষেত্রে ভয়াবহ কোনও সমস্যা দেখা দিতে নাও পারে।
বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ১০০ শতাংশ করোনা পজিটিভ রোগীর মধ্যে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই করোনার সামান্য উপসর্গ দেখা দিচ্ছে এবং ২০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উপসর্গ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। তাই অত্যন্ত মৃদু উপসর্গের ক্ষেত্রে হোম আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
আপনার যদি মৃদু উপসর্গ থেকে থাকে এবং হোম আইসোলেশনে থাকেন, তবে যে নিয়মগুলো আপনাকে অবশ্যই মানতে হবে তা দেখে নিন।
মৃদু উপসর্গের লক্ষণ
১) হালকা জ্বর, তবে ১০০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা থাকে না।
২) ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা।
৩) দুর্বল ভাব, গা, হাত, পা ব্যথা এবং মাথা ব্যথা।
৪) কফ বা সর্দির দেখা যায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি দেখা যায়।
৫) হালকা শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে।
৬) এই লক্ষণগুলো সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
কারা থাকবেন হোম আইসোলেশনে?
চিকিৎসকদের মতে, যাদের করোনার মৃদু উপসর্গ আছে কিন্তু কোনো উল্লেখযোগ্য কোমর্বিডিটি নেই, বয়স খুব বেশি নয় এবং নিজেই নিজের খেয়াল রাখতে পারবেন একমাত্র এই সকল রোগীই চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে হোম আইসোলেশনে রাখা যেতে পারে। ৫০ বছরের বেশি ও গর্ভবতী মহিলাদের আইসোলেশনে রাখা যাবে না। গর্ভবতী মহিলাদের আইসোলেশন রাখতে চাইলে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী রাখতে হবে।
বাড়িতে থেকে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম মেনে চলবেন?
১) আইসোলেশন থাকার সময় বাড়িতে এবং নিজের কাছে অবশ্যই একটি পালস অক্সিমিটার রাখতে হবে। পালস অক্সিমিটারের সাহায্যে প্রত্যেক দিন নিয়ম করে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। অক্সিজেনের মাত্রা যদি ৯৪-এর কম থাকে তাহলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
২) আক্রান্ত ব্যক্তিকে এমন একটি ঘরে থাকতে হবে যেখানে ঘরের সংলগ্ন বাথরুম আছে। তাকে গোসল বা অন্য কারণে ঘরের বাইরে যাতে বেরোতে না হয়।
৩) করোনা পজিটিভ রোগী হোম আইসোলেশনে থাকলে বাড়ির অন্যান্য সদস্যকে সাবধান থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বাচ্চাদের সাবধানে রাখুন। সঠিক নিয়ম মেনে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। বারবার হাত ধোওয়া এবং সামগ্রিক পরিছন্নতা মেনে চলতে হবে।
৪) যিনি হোম আইসোলেশনে থাকছেন তাকে সর্বদাই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
৫) হোম আইসোলেশনে থাকার সময় ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখবেন। জানালা খুলতে পারেন যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে।
৬) আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তির প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিসগুলি যেন তার ঘরের মধ্যে রাখা থাকে। সেই জিনিস যাতে অন্য কেউ ব্যবহার না করেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৭) প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে এবং সঠিক সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে
৮) স্বাস্থ্যকর ভিটামিন যুক্ত খাবার খান, যেমন - টাটকা ফল, সবজি, দুধ বা দই, ইত্যাদি।
৯) অকারণে আতঙ্কিত না হয়ে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে চিন্তামুক্ত থাকুন। ফোনের মাধ্যমে আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলুন। মনকে ভালো রাখার জন্য বই পড়ুন, গান শুনুন, সিনেমা দেখুন, বই পড়ুন, ছবি আঁকুন।
১০) গৃহবন্দী থাকার সময় নিয়ম করে সকাল এবং সন্ধ্যাবেলায় যোগ ব্যায়াম করুন এতে শরীর ও মন দুটিই সুস্থ থাকবে। যে বিষয়ের দিকে বেশি গুরুত্ব দেবেন গৃহবন্দী থাকার সময় যদি শারীরিক সমস্যা আরো বৃদ্ধি পায়, তবে অবহেলা না করে সাথে সাথে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। প্রয়োজনে কোভিড হসপিটালে ভর্তি হন।
সূত্র : স্কাই বোল্ড